লিড
বরিশালে মাতৃভাষা দিবসের র্যালিতে ইংরেজি ব্যানার
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বরিশাল নগরীতে ইংরেজী অক্ষরের লেখা ব্যানার নিয়ে র্যালি করেছে একটি স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ব্যানারটি নিয়ে তারা শহীদ মিনারে পৌছে পুষ্পস্তবকও অর্পন করে। এই নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেছে বিষয়টি একেবারেই তুচ্ছ।
বুধবার ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইংরেজী অক্ষরে লেখা ব্যানার নিয়ে প্রভাত ফেরী করে বরিশাল নগরীর জাহানারা ইসরাইল স্কুল এন্ড কলেজ।
নগরীর কলেজ রোড থেকে প্রভাত ফেরী নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে আসে। এসময় শহীদ মিনার চত্বরে পৌঁছানোর পর ইংরেজীতে লেখা ব্যানার দেখেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপস্থিত অনেকে।
জাহানারা ইসরাইল স্কুল এন্ড কলেজের এমন কর্মকান্ডে বিব্রত খোদ অভিভাবকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই অভিভাবক বলেন, স্কুলে এসে ইংরেজীতে লেখা ব্যানার দেখেই আমরা আলোচনা করেছি যে এটা ঠিক হয়নি। কেননা যে বাংলা ভাষার জন্য সংগ্রাম, সেই ভাষাকে এভাবে অপমান করা একেবারেই সঠিক হয়নি।
তারা বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বলতে যার যার ভাষায় শহীদদের স্মরণ করবে। আমরা বাঙালী, আমাদের বাংলা ভাষার জন্য আমাদের রক্ত দিতে হয়েছে। বাঙালীরা রক্ত দিয়েছে, কোনো ইংরেজ রক্ত দেয়নি। আমাদের ভাষা আন্দোলনের কারণেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি এসেছে। আর সেখানে আমার বাংলা ভাষাই উপেক্ষিত। আমরা নাম প্রকাশ করতে চাইনা, কেননা তা করলে আমাদের বাচ্চাদের ক্ষতি হবে। তবে এই কাজের মধ্যে দিয়ে স্কুলের কান্ডজ্ঞানহীনতা প্রতীয়মান হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সুশান্ত ঘোষ বলেন, মাতৃভাষা দিবসে এমন কাজ নিজের ভাষাকে অপমান করার সামিল। রাষ্ট্রকে অপমান করা হয়েছে এমন কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে। বাংলা ভাষার অপমান যারা করেছে তারা নিজের মা কে অপমান করেছে। মূলত এসব স্কুল ব্যবসা করতে এসেছে, দেশের প্রতি এদের কোনো দায়িত্ব কর্তব্য নেই।
গবেষক দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, শহীদ দিবস তো বাঙালী জাতির ত্যাগের দিন। বাংলা ভাষার জন্য কত মানুষ শহীদ হয়েছে। ইংরেজী ব্যানার নিয়ে বাঙালীদের প্রভাতফেরী করা বাংলা ভাষাকে অপমান করার সমান। একজন ইংরেজী ভাষার মানুষ যদি ইংরেজী অক্ষরে লেখা ব্যানার নিয়ে শহীদ মিনারে এসে তার মাতৃভাষার প্রতি সম্মান জানায় সেটা একটা বিষয় আর যদি বাংলা ভাষার মানুষ ইংরেজী ব্যানার নিয়ে শহীদ মিনারে আসে তাহলে বাংলাকে অপমান করা এবং শহীদদের অমর্যাদা করা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক বরিশালের সম্পাদক রফিকুল আলম, এটা বাঙালী জাতির সাথে বেইমানী করা এবং ধৃষ্টতা দেখানো হয়েছে। যারা শহীদ মিনারে উপস্থিত ছিলো তাদেরই উচিৎ ছিলো ব্যানারটি ছিড়ে প্রতিবাদ করা। কারণ এই ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি, যারা এই কাজটি করেছে তারা ভাষার সাথে বেইমানী করেছে। তাছাড়া বাংলা ভাষার উপর ওই র্যালিতে থাকা শিশু শিক্ষার্থীদেরও বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়বে।
তবে এসব বিষয়কে তুচ্ছ হিসেবে দাবী করে জাহানারা ইসরাইল স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান সালেহ মাহামুদ শেলী বলেন, আন্তর্জাতিক ভাষা তো ইংরেজী। তাই ইংরেজী ব্যানার নিয়ে র্যালি করা হয়েছে।