তালতলী
ইউপি সদস্যের মারধরের দুদিন পর জেলের মৃত্যু, ময়নাতদন্ত চায় না পরিবার
বরগুনার তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. জসিম উদ্দিন মোল্লার দুই দফায় মারধরের দুদিন পর আহত জেলে ওবায়দুল হাওলাদার (৪০) মারা গেছেন। গতকাল বুধবার রাতে তিনি মারা যান।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, এ ঘটনা ধামাচাপা দিলে ইউপি সদস্য জসিম মোল্লা নিহত জেলের পরিবারের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে আঁতাত করছেন। এ নিয়ে দিনভর চলছে নাটকীয়তা। পুলিশ লাশের ময়নাতদন্ত করতে চাচ্ছে, কিন্তু পরিবার ময়নাতদন্ত করতে রাজি না। এমন পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে পরিবার ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি চেয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছে বলে দাবি করেন স্ত্রী মিলি বেগম। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত লাশ পুলিশ পাহারায় নিহত ব্যক্তির বাড়িতে রয়েছে।
বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সজল চন্দ্র শীল বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো আবেদন পাইনি। তবে পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। যেহেতু এটা স্বাভাবিক মৃত্যু না।’
জানা গেছে, তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ৫ জুন জেলেদের চাল বিতরণ করা হয়। ওই সময় জেলে ওবায়দুল হাওলাদারকে চাল দেননি ইউপি সদস্য জসিম মোল্লা। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ইউপি সদস্য ওই দিন তাঁকে মারধর করেন। পরে ইউপি সচিব ইমরান মাস্টার রোল দেখে তাঁকে চাল দেন।
এর জেরে গত সোমবার নতুন বাজার এলাকায় পেয়ে ইউপি সদস্য জসিম মোল্লা জেলে ওবায়দুলকে দ্বিতীয় দফায় মারধর করেন। এ ঘটনায় ওবায়দুল তালতলী থানায় অভিযোগ দেন। গতকাল রাতে ওবায়দুল অসুস্থ হয়ে বাড়িতে মারা যান। পরে আজ দুপুরে সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী-তালতলী) সার্কেল মো. তারিকুল ইসলাম মাসুদ ও তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজালাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিবারের অভিযোগ, মারধরের ঘটনায় ওবায়দুল মারা গেছেন।
স্থানীয় হানিফ মিয়া ও নুর আলম মুন্সি বলেন, জেলে ওবায়দুলের নাম মাস্টার রোলে থাকা সত্ত্বেও ইউপি সদস্য জসিম মোল্লা তাঁকে চাল দেননি। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে মারধর করেছেন। এর জেরে গত সোমবার নতুন বাজার এলাকায় ওবায়দুলকে পেয়ে ইউপি সদস্য আবারও মারধর করেন।
ওবায়দুল হাওলাদারের স্ত্রী মিলি বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীকে ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন মোল্লা দু-দুবার মারধর করেছে। এখন কীভাবে মারা গেছেন, আমি জানি না। আমি আল্লাহর কাছে এর বিচার চাই।’
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘জেলে ওবায়দুল আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অশ্লীল কথাবার্তা বলে বেড়াত। তাই আমি তাকে দু-একটি ধাক্কা ও চড়থাপ্পড় মেরেছি। তবে আমার মারধরে জেলে ওবায়দুল মারা যায়নি। সে বাড়িতে স্ট্রোক করে মারা গেছে। আমার বিরুদ্ধে ওবায়দুল পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েছিল। পুলিশ আমাকে ডেকেছিল বিষয়টি মীমাংসা করতে।’
এ বিষয়ে তালতলী থানার ওসি মো. শাহ আলম হাওলাদার বলেন, মরদেহের ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন করতে দেওয়া যাবে না। তবে পরিবারের লোকজন বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশের দাফনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসকের অনুমতি পেলে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন করা হবে, নইলে ময়নাতদন্ত করা হবে।