রাজনীতি
বরিশালের অভ্যন্তরীণ সব লঞ্চ চলাচল সাময়িক বন্ধ
জোয়ারের পানিতে নগরী প্লাবিত
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ অমাবস্যায় কীর্তনখোলা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। আর এ কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকায়ও পানি ঢুকে পড়ছে। রাস্তাঘাট হাঁটুপানিতে ডুবছে। লোকালয় এমনকি বসতঘরেও বুক সমান পানিতে প্লাবিত হয়ে শতশত পরিবারকে অসহনীয় দুর্ভোগে ফেলেছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও বরিশালের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কীর্তনখোলা নদীর পানি গতকাল বৃহস্পতিবার বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছিল। একই সময়ে মেঘনায় বিপদসীমার ১০৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি বয়ে গেছে, যা বিগত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিষখালী নদীতে বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার, পায়রায় ৬৪ সেন্টিমিটার, হিজলার ধর্মগঞ্জে ১৮ সেন্টিমিটার এবং তেতুলিয়া নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র আরো জানায়, বরিশাল বিভাগের বরগুনা, পটুয়াখালী দুই জেলায় সাগর সন্নিকটে হওয়ায় এসব জেলার মানুষ উচ্চ জোয়ারের তাণ্ডবের ভুক্তভোগী বেশি। দিনে ও রাতে দুই দফা জোয়ারে ভাসে এসব জেলার লাখো পরিবার। বিশেষ করে পূর্ণিমা ও অমাবস্যার জোয়ারে উজান থেকে নেমে আসা জলরাশিতে বিভিন্ন নদীর পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে নিচু এলাকার হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাট, বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করছে এলাকাবাসী। এদিকে অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানি উপচে পড়ছে শহর রক্ষা বাঁধের ওপরে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে দক্ষিণ উপকূলে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বরিশালের অভ্যন্তরীণ সব পথের লঞ্চ চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্দেশনা দিয়ে বলেছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানকারী লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলে প্রবল বর্ষণ ও ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এজন্য সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত এবং নদীবন্দর সমূহকে ২ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এর প্রভাবে নদ-নদীতে অধিক উচ্চতার জোয়ার ও পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এর প্রভাবে বরিশালের কীর্তনখোলা, তেঁতুলিয়া, বিষখালী, বলেশ্বর, পায়রা, নয়াভাঙ্গুনিসহ উপকূলের সব নদ-নদীতে বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে জোয়ার প্রবাহিত হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) আজমল হুদা সরকার বলেন, সাগরে নিম্নচাপের কারণে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করায় নদীবন্দরে ২ নম্বর এবং সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করা হয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বৈরী আবহাওয়া থাকায় যেকোনো দুর্ঘটনা এড়াতে বৃহস্পতিবার থেকে বরিশালের অভ্যন্তরীণ পথের সব লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ নির্দেশনা বলবৎ থাকবে। তবে বরিশাল-ঢাকা দূরপাল্লার পথের লঞ্চ চলাচল যথারীতি অব্যাহত থাকবে। অভ্যন্তরীণ পথের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় বরিশাল নদীবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ ১২টি রুটের লঞ্চ চলাচল গতকাল দুপুর থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে ভোলা, মেহেন্দীগঞ্জ, পাতারহাটসহ বিভিন্ন পথের হাজারো যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জোয়ার পরিমাপক শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ১৬ মের ঘূর্ণিঝড় মহাসেনে জোয়ারের তীব্রতা ছিল ৩ দশমিক ৩৬ মিটার। ওই বছরের ১৫ জুলাই পূর্ণিমার প্রভাবে উপকূলে জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৩ দশমিক ৬২ মিটার। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আঘাত হানার সময় জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৩ দশমিক ১০ মিটার থেকে চার মিটারের মধ্যে। এবারের আম্পানে জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৩ দশমিক ৩৬ মিটার থেকে ৪ মিটারের ওপরে। এসব নদীর জোয়ারের স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৮৫ মিটার। তবে ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও এবারের অমাবস্য-পূণির্মার জোয়ারের উচ্চতাও ৪ মিটারের কাছাকাছি ছিল। ফলে বরিশাল নগরী এমনভাবে প্লাবিত হওয়ার চিত্র আগে কখনও দেখেনি এখানকার সাধারণ মানুষ। পলাশপুর থেকে শুরু করে নগরীর লঞ্চঘাট, সদর রোড, গীর্জা মহল্লা, বগুড়া রোড, নবগ্রাম রোড, আমিরকুটির, ব্রাউন কম্পাউন্ডসহ মূল সড়কগুলোও এখন পানির নিচে। উল্লেখ্য, গতকাল বরিশালসহ দক্ষিণের জেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট অনেকটাই কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। বিশেষ করে নগরের ভাঙ্গা রাস্তার খানা-খন্দগুলো পানি জমে যানবাহন চলাচল ও মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হচ্ছে।