সারাদেশ
জিডি করেছিলেন বিচারকের স্ত্রী, ৭ দিনের মাথায় খুন হলো ছেলে
রাজশাহীতে বাসায় ঢুকে ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে (২০) ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় আটক লিমন মিয়ার (৩৫) বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার। গত ৬ নভেম্বর সিলেটের জালালাবাদ থানায় লিমন মিয়ার নামে জিডির সাত দিনের মাথায় তাসমিন নাহারের ছেলে সুমনকে হত্যা করা হয়েছে। আটক লিমন মিয়া গাইবান্ধার ফুলছরি থানার মদনেরপাড়ার এইচএম সোলাইমান শহীদের ছেলে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজশাহী নগরীর ডাবতলা এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ছুরিকাঘাতে বিচারকের ছেলে সুমনের মৃত্যু হয়। এ সময় আহত হন বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহারও। ঘটনার পর আহত তাসমিন নাহার ও আটককৃত লিমন মিয়াকে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাপসাতলে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কে বিশ্বাস বলেন, নিহতের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। আর আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জানা গেছে, নগরীর ডাবতলার স্কার্ক ভিউ নামের ভবনটিতে ঢোকার সময় লিমন দারোয়ানের কাছে থাকা খাতায় নিজের নাম লিখেছেন । বিচারক আব্দুর রহমানকে সম্পর্কে ভাই পরিচয় দিয়ে তিনি পাঁচতলার ফ্ল্যাটে চলে যান। ভবনে ঢোকার সময় তার হাতে একটি ব্যাগ ছিল।
ভবনের দারোয়ান মেসের আলী জানান, নাম ও মোবাইল নম্বর লিখে নেওয়ার পর বিচারককে ভাই পরিচয় দেওয়ায় তাকে ঢুকতে দেন তিনি। দুপুর আড়াইটার দিকে ওই যুবক ফ্ল্যাটে যান। প্রায় ৩০ মিনিট পর ফ্ল্যাটের গৃহকর্মী তাকে এসে জানান ফ্ল্যাটে বিচারকের ছেলেকে ও স্ত্রীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। তখন ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাও ফ্ল্যাটে ঢুকে তিনজনকেই আহত অবস্থায় পান। এরপর তিনজনকেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার পর বিকেল ৫টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। তিনি জানান, হামলাকারী ব্যক্তির পকেটে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে তিনি চালক। তার সঙ্গে পূর্ববিরোধ থাকতে পারে।
মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, সিলেটের জালালাবাদ থানায় এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে জিডি করেছিলেন তাসমিন নাহার। কেন এই ঘটনা ঘটেছে তা তারা এখনো বিস্তারিত জানেন না।
জানা গেছে, গত ৬ নভেম্বর সিলেটের জালালাবাদ থানায় লিমন মিয়ার নামে জিডি করেন তাসমিন নাহার। এতে তিনি উল্লেখ করেন, লিমন মিয়ার সঙ্গে কোয়ান্টাম ফাইন্ডেশনের সদস্য হওয়ায় আমার পরিচয় হয়। পরিচয় হওয়ার পর থেকে সে আমার মোবাইল নম্বর নেয়। লিমনের পরিবার আর্থিকভাবে কিছুটা দুর্বল হওয়ায় প্রায় সময় সে আমার কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা নিত। একটা পর্যায়ে লিমন প্রতিনিয়ত আমার কাছে সহযোগিতা চাইলে আমি সহযোগিতা করতে অপারগতা প্রকাশ করায় সে তার ব্যবহৃত মোবাইল থেকে আমার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে হুমকি-ধমকি দেয়।
সর্বশেষ গত ৩ নভেম্বর সকাল ১০টা ২০ মিনিটে লিমন আমার মেয়ের ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল করে আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনদের প্রাণে হত্যা করার হুমকি দেয়। বিবাদী লিমন যে কোনো সময় আমিসহ আমার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করতে পারে মর্মে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এ বিষয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ বলেন, লিমনের নামে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে। গত ৬ নভেম্বর তাসমিন নাহার তার নামে জিডি করেন।



