নতুন করে তিন স্তরে ইন্টারনেটের দাম কমানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেছেন, ‘সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় স্তরগুলোতে পাইকারি পর্যায়ে ইন্টারনেটের দামও কমানো হয়েছে। এখন জাতীয় স্তরের পালা।’
জাতীয় স্তরের ক্ষেত্রে তিনি মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানোর বিষয়ে জোর দিয়েছেন। বেসরকারি তিনটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির কাছে মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানোর দুটি প্রত্যাশিত দাবি তুলে ধরেছেন।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সকালে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এসব দাবি তুলে ধরেন।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ঈদুল ফিতরের দিন থেকে সরকারি মোবাইল সেবা কোম্পানি টেলিটক ১০ শতাংশ মূল্য ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছিল। সরকার আশা করে অতি দ্রুতই তিনটি বেসরকারি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে মোবাইল ইন্টারনেটের মূল্য পতনের ঘোষণা দেবে। সরকার এখানে দুই ধরনের মূল্যছাড় আশা করে বলেও জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার এ বিশেষ সহকারী সেই দুটি প্রত্যাশিত দাবিও তুলে ধরেছেন। তিনি লেখেন, ‘প্রথমত মার্চ মাসে এসআরও অ্যাডজাস্টমেন্ট বাবদ মোবাইল কোম্পানিগুলো যে মূল্য বাড়িয়েছিল সেটা কমাবে। আর দুই নম্বর হলো—আন্তর্জাতিক গেটওয়ে বা আইটিসি, আইআইজি ও ন্যাশনাল ট্রান্সমিশন পর্যায়ে যতটুকু পাইকারি দাম কমানো হয়েছে, তার সমানুপাতিক হারে গ্রাহক পর্যায়ে মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমাবে।’
বিবেচনা করছে মোবাইল অপারেটরগুলো
সরকারের চাপের মুখে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় স্তরগুলোতে সব অংশীজন যখন ইন্টারনেটের দাম কমাচ্ছে, তখনও নিরব বেসরকারি তিন মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবি।
বিশেষ সহকারীর প্রত্যাশিত দাবির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে তিন অপারেটরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। প্রত্যেকেই জানান, তারা বিষয়টি বিবেচনা করছেন। অ্যামটবেও আলোচনা করবেন তারা। শিগগির একটা সিদ্ধান্ত জানাবেন।
একটি অপারেটর কোম্পানির কর্মকর্তা নাম-পরিচয় প্রকাশ না করে বলেন, ‘সরকার স্পষ্টই তাদের চাপে রেখেছে। সব পক্ষ থেকে দাম কমানোর বিষয়টি এলে আমাদের চুপ থাকার উপায় নেই। কিছু তো করতে হবে। সেটা আলোচনা করে সব দিক বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। হয়তো শিগগির এটা (কত শতাংশ দাম কমানো হবে) আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হতে পারে।’
ফেসবুক পোস্টে আরও যা জানালেন বিশেষ সহকারী
এদিকে, ফেসবুক পোস্টে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব জানান, নতুন তিনটি স্তরে ইন্টারনেটের দাম কমছে। ফাইবার অ্যাট হোমের ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করেছেন যে, আইটিসি পর্যায়ে ১০ শতাংশ, আইআইজি পর্যায়ে ১০ শতাংশ, এনটিটিএন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূল্যহ্রাস করবেন তারা। এর আগে আইএসপি লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশন থেকে ৫ এমবির পরিবর্তে ৫০০ টাকায় ১০ এমবি ইন্টারনেট দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। তারও আগে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে পর্যায়ে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি সকল আইআইজি এবং আইএসপি গ্রাহকদের জন্য ১০ শতাংশ এবং পাইকারি গ্রাহকদের জন্য অতিরিক্ত ১০ শতাংশসহ মোট ২০ শতাংশ দাম কমিয়েছে।
তিনি আরও লেখেন, এ নিয়ে ইন্টারনেট লাইসেন্স রেজিমের মোট তিন থেকে চারটি স্তরে ইন্টারনেটের মূল্য কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাকি আছে শুধুমাত্র মোবাইল সেবা দাতা ৩টি বেসরকারি কোম্পানির দাম কমানোর ঘোষণা। ইতিমধ্যে সরকার মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ডিডব্লিউডিএম এবং ডার্ক ফাইবার সুবিধা দিয়েছে। এমতাবস্থায় বেসরকারি মোবাইল কোম্পানিগুলোর ইন্টারনেটের দাম না কমানোর কোন ধরনের যৌক্তিক কারণ কিংবা অজুহাত অবশিষ্ট থাকে না।
সরকার ইন্টারনেটের দাম কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানিয়ে ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেটের মানে ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে। মানের তুলনায় দাম অনেক বেশি। এমতাবস্থায় গ্রাহকস্বার্থে যৌক্তিক পদক্ষেপ নিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’