বরিশাল
চরকাউয়ায় শত বছরের পুরাতন মসজিদ কমিটি থেকে ৬ জনের পদত্যাগ
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের নয়ানী গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শত বছরের পুরাতন হাজী করিম উদ্দিন দপ্তরী বাড়ি জামে মসজিদের কমিটি থেকে ৬ জন সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় মুসুল্লিদের মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা ঝড় বইছে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদের কাছে তারা পদত্যাগপত্র জমা দেন।
পদত্যাগকারীরা হলেন- ওই মসজিদের কমিটির উপদেষ্টা আলহাজ্ব মোঃ আনসার আলী মাস্টার, সহ-সভাপতি মোঃ হুমায়ুন হাওলাদার, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সুলাইমান হোসেন পলাশ, দপ্তর সম্পাদক মোঃ মাসুম হাওলাদার, সদস্য দেলোয়ার হোসেন হাং ও মোঃ মোঃ শাহিন সিকদার।
পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করা হয়- কিছু দিন পূর্বে পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি আপনাদের মসজিদে বিগত ২০২৪ সালের ২২ নভেম্বর পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়েছে। ওই কমিটিতে সম্মতি ছাড়াই তাদেরকে বিভিন্ন পদে নিযুক্ত করা হয়েছে। তারা আরো জানতে পারে এই কমিটি বহিরাগত লোকজন নিয়ে একক ও অবৈধভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার সভাপতি, সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ অধিকাংশ সদস্যই পলাতক আওয়ামী ফ্যাসিস্ট দলের কর্মী ও দোসর। সভাপতির বিরুদ্ধে বিগত মেয়াদে মসজিদের প্রায় নয় লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৫ সালে ওই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মৃত হাজী করিম উদ্দিনের মৃত্যুর পর থেকে তার ছেলে শাখাওয়াত হোসেন মনির মসজিদের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। ২০১৭ সালে ওই মসজিদের পুনঃ নির্মাণ করা শুরু হয়। যা এখনো চলমান রয়েছে। যার আয়-ব্যয়ের হিসাব যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। এ নিয়ে সম্প্রতি স্থানীয় মুসুল্লিরা প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু মসজিদ কমিটির সভাপতি ও ক্যাশিয়ার মুসুল্লিদের কাছে আয়-ব্যয়ের সঠিক কোন হিসাব-নিকাশ না দিয়ে নানা টালবাহানা শুরু করেন। মুসুল্লিরা সঠিক আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরূপনে একটি অডিট কমিটি গঠন করলেও ওই কমিটিকে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা না করে উল্টো তাদেরকে নানামূখি চাপে ফেলেন কমিটির সভাপতি। এ নিয়ে কয়েক দফায় মুসুল্লিদের সাথে তর্ক-বিতর্ক ও সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এতে বাধ্য হয়ে শান্তিপ্রিয় মুসুল্লিরা বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়- গত কয়েক মাস আগে মসজিদ কমিটিতে পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হতে বহিরাগত লোকজন এনে স্থানীয় মুসুল্লিদের বের করে দিয়ে মনগড়া কমিটি করেন শাখাওয়াত হোসেন মনির। সে সময় বেশ কয়েকজনকে মারধরও করা হয়।
প্রবীণ এক মুসুল্লি বলেন- ৯ বছর যাবত এই কমিটি মসজিদ উন্নয়ন কাজের কোন আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয়নি। মসজিদের নামে কোন ব্যাংক একাউন্ট নাই। টাকা তারা নিজেদের কাছেই রাখে। হিসাব চাওয়াতেই সকল ঝামেলার সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে বাইরের লোকজন নিয়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটায়। তিনি জুমার দিন ছাড়া মসজিদে আসেন না। বরিশাল শহরে থাকেন। তারা জোড়-জুলুম করে কমিটিতে রয়েছে। আমাদের আপত্তি থাকা স্বত্তেও তারা পকেট কমিটি করেছে।
পদত্যাগকারীরা বলেন- ওই কমিটিতে আমাদের সম্মতি ছাড়াই আমাদেরকে বিভিন্ন পদে নিযুক্ত করা হয়েছে। আরো জানতে পারি এই কমিটি বহিরাগত লোকজন নিয়ে একক ও অবৈধভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার সভাপতি, সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ অধিকাংশ সদস্যই পলাতক আওয়ামী ফ্যাসিস্ট দলের কর্মী ও দোসর। সভাপতির বিরুদ্ধে বিগত মেয়াদে মসজিদের প্রায় নয় লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন মনির বলেন- আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।