বরিশাল
বরিশালে সাবেক ছাত্রদল নেতার মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধুম্রজাল, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সদস্য আবু সুফিয়ান মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। গত শনিবার (১ মার্চ) দুপুরে নগরীর ভাটিখানা টিবির মাঠ এলাকায় গিয়ে বিষপান করেন তিনি। পরে তার বড় ভাই গিয়ে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
সুফিয়ানের মৃত্যুর পর দিন তার শয়ন কক্ষ থেকে দুটি ডায়েরি পায় পরিবারের লোকজন। ডায়েরি হাতে পাওয়ার পর তার মৃত্যু নিয়ে নতুন এক রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে তার মৃত্যুর জন্য তার স্ত্রীকে দায়ী করছেন আবু সুফিয়ানের পরিবারের লোকজন। অপরদিকে আবু সুফিয়ানের মৃত্যুর জন্য তার পরিবারের লোকজনকে দায়ী করছেন স্ত্রীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
সুফিয়ান নগরীর ভাটিখানার বাসিন্দা জলিল হোসেনের ছেলে ও বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সদস্য ছিলেন।
সুফিয়ানের মায়ের দাবি- আমার ছেলে সুফিয়ানের বিয়ের বয়স ১০ মাস। প্রথম ৫/৬ মাস তাদের সংসার খুব ভালই চলছিল। শেষ কয়েক মাস তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ শুরু হয়। এমনকি তার স্ত্রী স্বর্না কয়েকবার বাবার বাড়িতে চলে যায়। সর্বশেস দেড় মাস আগেও সে বাবার বাড়িতে চলে গিয়েছিল, সেখানে গিয়ে আমাকে ও আমার ছেলে একটাও কল দেয়নি স্বর্না। পরে আমি গিয়ে তাকে বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে আসি। ঘটনার দিন রাত ২ টার দিকে তারা আবারও ঝগড়া শুরু করে। আমি শুনে তাদের রুমে যাই। আমি গিয়ে ঝগড়ার কারণ জানতে চাইলে সুফিয়ান বলেন- স্বর্না আমার সাথে থাকবে না, ও যেন কার সাথে চলে যাবে। তখন স্বর্না আমার সামনেই বলেন- সকালটা হোক, তারপর আমি বুঝাইয়া দেব। এরপর দুজনকে শান্ত করে সুফিয়ানকে আমার রুমে গিয়ে শুইতে বলি এবং আমি স্বর্নার সাথে শুই। পরে সকালে উঠে আড়তে যাওয়ার কথা বলে বের হলেও পরে খবর পাই সুফিয়ান আত্মহত্যা করেছে।
সুফিয়ানের বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বলেন- ঘটনার দিন সকালে আমি বাসায় ছিলাম, হঠাত আমার ফোনে কল দিয়ে সুফিয়ান বলে- ভাই আমাকে বাচা। এটা শুনেই আমি টিবির মাঠ ছুটে যাই। গিয়ে দেখি সুফিয়ান অসুস্থ। সে আমাকে বলে- আমি কিছু খাইছি। পরে দ্রুত আমি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় সুফিয়ান মারা যায়। পর দিন আমরা লাশ বাসায় নিয়ে আসি।
তিনি বলেন- সুফিয়ানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রীর চোখে এক ফোটাও পানি দেখিনি। সুফিয়ানের লাশ ময়নাতদন্তের আগেই তার স্ত্রীর পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। আমরা যেতে দেইনি। পরের দিন বিকেলে স্বর্ণ ও তার মা পালিয়ে চলে যায়। বাসায় রাখা সোনা ও তার গোরস্থানের জন্য রাখা এক লক্ষ টাকা নিয়ে চলে যায়।
অপরদিকে সুফিয়ানের স্ত্রী স্বর্না বলেন- আমাদের বিবাহ হয়েছে ১০ মাস। আমাদের মাঝে তেমন বড় কিছুই হয়নি। প্রতিটি পরিবারে যেরকম ছোটখাটো পারিবারিক কলহ হয় তেমনটাই ঘটেছে। সুফিয়ান আমাকে প্রতিনিয়ত ছেড়ে দিবে, তালাক দিয়ে দেব, এমনকি আমার বাসায় তালাকনামা পাঠিয়ে দেবে এমনটা বলতেন। আমি তাকে বেশ কয়েকবার সংশোধন করার চেষ্টা করেছি। সংশোধন করতে গেলে আমাকে বলে তুই যা পারো তাই কর। বিষয়টি আমার বাসার কাউকে প্রথমে কিছুই বলিনি। দিনের পর দিন এগুলো তার পরিবারের সামনে যখন বলতেছিল পরে আমার পরিবারের কাছে সবকিছু বলি। পরবর্তীতে আমার শাশুড়ির কাছে আমি সবকিছু বলি। ঘটনার দিন রাতে পুনরায় আমাকে আবারো তিনি বলেন তোকে ছেড়ে দেব তুই চলে যা এখনি। পরবর্তীতে আমি তাকে বলি যখন এগুলো বলতেছেন তখন আমাকে কেন বিবাহ করছো। তখন তিনি বলেন- আমি তোকে ছেড়ে দেব। তখন আমি বলি তাহলে আমাকে বিয়ে করছিলেন কেন? সে বলে- আমি তো তোকে আনিনি, মা আনছে তার সাথে গিয়ে বোঝ। কথাগুলো আমার শাশুড়ির সামনে বসে বলেছিল। এমনকি শাশুড়ির সামনেই আমাকে মারতে উদ্ধত হয়। তখন আমার শাশুড়ি তাকে কয়েকটি থাপ্পড় দিয়ে রুম থেকে বের করে দেয়। এবং বলেন তুই যদি মরো তাহলে দুধ দিয়ে গোসল করে উঠবো। এ কথাটি বেশ কয়েকবার বলেন তার মা। ঐদিন রাতে আমি এরকম কোন কথা বলিনি যে তিনি কষ্ট পাবেন। এর আগেও তালাকের কথা বলাতে তার মা তাকে থাপ্পড় মেরেছিল। পরের দিন সকালে উঠে দেখি তিনি ঘুমাচ্ছেন। প্রতিদিনের ন্যায় সেদিনও সকাল আটটায় ঘুম থেকে উঠে আড়তে যান সুফিয়ান। এরপর শুনি সে বিষপান করেছে। সেটা শুনে আমি হাসপাতালে যেতে চাইলেও আমাকে যেতে দেয়া হয়নি আমার মেঝ ঝা।
তিনি বলেন- আমি অনেকবার যাইতে চাইছি, একবার তাকে দেখতে চেয়েছি, তবুও আমাকে কেউ যেতে দেয়নি। পরে আমি জানতে পারি আমার স্বামী মারা গেছে। লাশ আনার পরেও আমাকে ওর কাছে যেতে দেয়নি, দরজা আটকে রেখেছে। যখন লাশ বাসা থেকে মাটির দেয়ার জন্য নিয়ে যায় তখনও আমাকে যেতে দিতে চায়নি, তবুও আমি জোড় করে গেছি। এ সময় কিছু লোক আমাকে তুমি এখানে এসেছো কেন? বাসায় যাও। কিন্তু একবারের জন্য তার মুখ আমাকে দেখতে দেয়া হয়নি। আমার মাকেও সুফিয়ানকে দেখতে দেয়নি। আমি বাবার বাড়িতে আসতে চাইনি। পরে আমার শ্বাশুড়ি আমাকে ও আমার মাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। তখন আমাদের সবার সামনে চেক করে পাঠানো হয়, কারণ আমরা ওই বাসা থেকে কিছু নিয়েছি কিনা।’
এ তথ্য নিশ্চিত করে কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল নিশাত বলেন- কী কারণে আবু সুফিয়ান বিষপান করেছেন তা পুলিশ জানাতে পারেনি। তবে প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে ধারণা করছে থানা পুলিশ।
ওসি নাজমুল নিশাত বলেন, আবু সুফিয়ান বিষপান করলে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি টের পেয়ে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার লাশ শেবাচিম হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’