পিরোজপুর
পিরোজপুরে জমে উঠেছে শত বছরের ভাসমান নৌকার হাট
নিজস্ব প্রতিবেদক : পিরোজপুরের নেছারাবাদে ঐতিহ্যবাহী ভাসমান নৌকার হাট এখন জমজমাট। বর্ষায় জমে উঠেছে শত বছরের পুরোনো এ হাট। নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আটঘর খালে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসে ভাসমান নৌকার হাটটি।
আটঘর-কুড়িয়ানার খালে সপ্তাহে সোমবার ও শুক্রবার দুদিন হাট বসে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। পিরোজপুরের নেছারাবাদ, ঝালকাঠির ভীমরুলি ও বরিশালের বানারীপাড়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের এলাকাগুলোতে ব্যাপক আকারে পেয়ারা ও আমড়া হয়। বর্ষা মৌসুমে শস্য ও পেয়ারার উৎপাদন বেড়ে গেলে কৃষকরা ভাসমান বাজারে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় বেচাকানোর জন্য ব্যবহার করেন নৌকাগুলো।
এ হাটকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। জ্যৈষ্ঠ থেকে শুরু করে আশ্বিন পর্যন্ত নৌকা কেনাবেচার ধুম পড়ে। আষাঢ় মাসে শুরু হয় ভরা মৌসুম। তখন খালের পানিতে ভেসে চলে বাহারি নৌকার কেনাবেচা। এটি দক্ষিণ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় নৌকার হাট নামে পরিচিত।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমে পেয়ারা, আমড়া, ছাই দিয়ে মাছ ধরা এবং গরুর খাবার সংগ্রহে নৌকার কদর বেশি থাকে। মূলত এ আমড়া ও পেয়ারার চাষ হয় খাল তীরবর্তী বাগানে, যা সংগ্রহ করতে প্রয়োজন হয় নৌকার। একই সঙ্গে জলপ্রধান এলাকা বলে মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার জন্যও নৌকার দরকার হয়। আবার এসব এলাকার প্রায় প্রতিটি পরিবারই যাতায়াতের জন্য নিজস্ব নৌকা ব্যবহার করেন। আটঘর নৌকার হাটের মূল ক্রেতা তারাই।
নৌকা ব্যবসায়ী স্বপন হাওলাদার বলেন, হাটের দিন ভোরে কারিগরদের কাছ থেকে নৌকা কিনে ট্রলারে করে হাটে নিয়ে বিক্রি করি। বেচাকেনা ভালো হলে প্রতি হাটে ৫০ থেকে ৬০টি নৌকা বিক্রি হয়। নৌকাপ্রতি লাভ হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। আবার কখনও লোকসানও গুনতে হয়।
নৌকা তৈরির কারিগর সুমন মন্ডল বলেন, এখন সুন্দরী কাঠ পাওয়া যায় না তেমন। কড়ই, চম্পল ও মেহগনি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় নৌকা। আমার পূর্বপুরুষ এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিল। বুঝ হওয়ার পর থেকে আমি নৌকা তৈরি করছি। দুই মাস পরিশ্রম করে যা পাই সমস্ত মাস পরিবার নিয়ে চলতে হয়। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চালাতে খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সবুজ মজুমদার বলেন, এ বাজারে এসে কোনো ক্রেতা এবং বিক্রেতা যাতে হয়রানির শিকার না হয় তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যটকদের বসার জন্য প্রয়োজনে বড় ছাতা ও শেডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া বাজারকে ঘিরে আমাদের বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এ ঐতিহ্যবাহী হাটটি ১০০ বছরেরও আগে শুরু হয়েছে। এখানে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ভ্রমণ করতে আসেন। তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন সব সময় সোচ্চার ও হাটের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে উপজেলা প্রশাসন সবসময় সতর্ক আছে। এ ছাড়া ইতোমধ্যে পর্যটকদের থাকার জন্য রেস্ট হাউসের কাজ চলমান রয়েছে।