জাতীয়
হাওরে বৃষ্টির জন্য দোয়া
খরার তীব্রতায় বোরো ধানের গাছ লালচে হয়ে যাচ্ছে। নলকূপের মাধ্যমে সেচ দেয়া হলেও তা যথেষ্ট নয়। এ অবস্থায় বছরের পর বছর পানিতে ডুবে ফসলহানির হাওরাঞ্চলে এবার বৃষ্টি কামনা করে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওরে লম্বাবাক ফুটবল খেলার মাঠে সোমবার দুপুরে কয়েক শ’ কৃষক আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির জন্য দোয়া করেন। দোয়া পরিচালনা করেন লম্বাবাক জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া আহমদ জুয়েল।
দোয়া মাহফিলে অংশ নেয়া গ্রামের মুরব্বি মো. সবর আলী জানান, অন্য বছর এমন সময় বেশ কয়েকবার বৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার আকাশে মাঝে মাঝে মেঘ দেখা গেলেও বৃষ্টির খবর নেই। খরা ও তাপদাহে হাওরের বুকে ধানি জমি খা খা করছে।
কয়েকজন কৃষক বলেন, ‘ফাল্গুনে বৃষ্টি কম হলেও আগে কখনও প্রকৃতির এমন বিরূপ আচরণ দেখা যায়নি। এ বছর এমনিতেই খরার ভাব। হাওরের কোথাও পানি নেই। নদী থেকে শ্যালো মেশিনে পানি সেচ দিলেও তা কিছুক্ষণ পরই শুকিয়ে যায়। এখন ধানের থোড় গজানোর সময়। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে থোড় অঙ্কুরেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই বৃষ্টির জন্য আমরা হাওরে দোয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।’
উপজেলার ৬টি ছোট-বড় হাওরে ৪৫০টি পুকুর এবং সুরমা, পিয়াইন ও কাইল্লানী নদীর অংশবিশেষ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে মৌসুমের এই সময়টাতে দেখা দেয় তীব্র পানির সংকট।
হাওরের কৃষক শাহেদ আলী তালুকদার বলেন, ‘২০ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। জমি তৈরি, চারা রোপণ, আগাছা পরিষ্কার এবং এক দফা সার ও কীটনাশক দিয়েছি। ধান গাছগুলো ভালোভাবেই বেড়ে উঠছিল।
‘আশা ছিল প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২২ মণ ধান হবে। কিন্তু বৃষ্টি ও পানির অভাবে গাছগুলো বেড়ে উঠছে না। এই সময়ে জমিতে হাল্কা বৃষ্টির পানি থাকে। কিন্তু এবার বৃষ্টি না হওয়ায় নদী থেকে অনেক টাকা খরচ করে পানি দিতে হচ্ছে। ৩/৪ দিন পর পর পানি দিয়েও জমি ভিজিয়ে রাখা যাচ্ছে না।’
জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলা উদ্দিন বলেন, ‘চলতি বোরো মৌসুমে জামালগঞ্জে মোট ২৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু পানি না থাকায় কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি পানির ঘাটতি পূরণে নতুন কিছু পাম্প বসাতে এবং সার ব্যবহার করতে।
‘এবার ধান ক্ষেত দেখে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলনের আশা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে ফলন কিছুটা কম হতে পারে। তবে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যাচ্ছে যে কয়েক দিনের মধ্যেই বৃষ্টি হবে। আর বৃষ্টি হলে ক্ষতিটা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।’