বরগুনা
হওয়ার কথা ছিল শিল্পনগরী, হয়েছে কাশবন
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বরগুনা বিসিক শিল্পনগরী এখন কাশবনে পরিণত হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার এক বছর পর প্লট বরাদ্দ নিতে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ নেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্লটের উচ্চমূল্যের কথা। বলছেন, যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তা দিয়ে প্লট নিলে লাভ হবে না।
২০১১ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় জেলায় শিল্পনগরী স্থাপনের ৭ কোটি ৮ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে জেলা সদরের ক্রোক মৌজায় ১০ দশমিক ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করে বিসিককে জমি বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।
নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয় ১১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ঠিকাদারের সঙ্গে ঝামেলায় বর্ধিত মেয়াদেও শেষ হয়নি কাজ। এরপর ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো হয় মেয়াদ। ব্যয় বেড়ে হয় ১৮ কোটি ৮ লাখ টাকা।
এরও দুই বছর পর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয় প্রকল্পের কাজ। তখন বরাদ্দের জন্য ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ তিন বিভাগে ৬১টি প্লট প্রস্তুত করা হয়।
‘এ’ টাইপের ৬ হাজার বর্গফুটের ২৭টি, ‘বি’ টাইপের ৪ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ১৯টি এবং ‘এস’ টাইপে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ১৫টি প্লট প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রায় দুই বছর হয়ে গেছে, এখন পর্যন্ত কেবল আটটি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তারা। বাকি প্লটগুলোতে জন্মানো ঘন কাশবনে মাদকাসক্তদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
বরগুনা শহরের বাসিন্দা মীর খায়রুল আহসান, ইকবাল হোসেন ও ওয়ালী উল্লাহ নামের তিনজন প্লট বরাদ্দ নিয়েও টাকা পরিশোধ করেননি। ফলে তাদের প্লট বাতিল করেছে বিসিক কর্তৃপক্ষ।
মীর খায়রুল আহসান বলেন, ‘প্লটের দাম মাত্রাতিরিক্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি শতাংশ জমির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ টাকা। এ টাইপের একটি প্লট কিনতেই দাম পড়বে প্রায় ২৭ লাখ টাকা। এত টাকা দিয়ে জমি নিয়ে ভবন নির্মাণ এরপর শিল্প-কারখানা স্থাপন, উৎপাদন ও কর্মচারী খরচ দিয়ে আমাদের ব্যবসা হবে না।’
প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন এমন একজন বরগুনা চাষি পল্লীর সাব্বির হোসেন বলেন, ‘প্লট নেয়ার পর আমি অবকাঠামো নির্মাণ করেছি। এখানে ব্যয় করলে নির্বিঘ্নে উৎপাদন করা যাবে। আমি আশা করি, বিসিকে কারখানা স্থাপন করে আমি ব্যবসায় লাভবান হব।’
বিসিক বরগুনা কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক কাজী তোফাজ্জেল হক জানান, তারা ১৬ জনকে ২০টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছিলেন। কিন্তু জুন মাসের মধ্যে ডাউন পেমেন্ট দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ১৬ জনের বরাদ্দ বাতিল করা হয়।
এরপর আরও ১৩ জনকে ১৬টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনজন চারটি প্লটের মূল্য পরিশোধ করেছে। বাকি ১২ জনের প্লট বাতিল করা হবে। যে আটজন বরাদ্দ পেয়েছেন, তাদের মাত্র একজন অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ করেছেন।
প্লটের দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের আপত্তির বিষয়ে এক প্রশ্নে তোফাজ্জেল বলেন, ‘প্রকল্পের ব্যয়ের ওপর প্লটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।’
প্লট নিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে আগ্রহ না থাকা প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আগ্রহ সৃষ্টির জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক, বরগুনা চেম্বার অব কমার্স ও নাসিবের সঙ্গে বারবার বৈঠক করছি। আশা করছি, এ বছরের মধ্যে অর্ধেক প্লট বিক্রি হয়ে যাবে।’
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির বরগুনা জেলার সভাপতি আবদুর রশীদ বলেন, ‘আমরা ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। বিসিকে শিল্প-কারখানা স্থাপনে তাদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করি প্লটগুলো দ্রুত বরাদ্দ নিয়ে ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তারা কারখানা স্থাপন করে উৎপাদন শুরু করবেন।’
বরগুনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, ‘জেলার মানুষের জীবিকা মাধ্যম কৃষি ও মৎস্য। এখানে তেমন কোনো ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠেনি। যদি জেলার বাইরের কোনো উদ্যোক্তা এগিয়ে আসেন তবে আমরা তাদের সহায়তা দেব।’
জেলা প্রশাসক ও বিসিক শিল্পনগরী বরগুনার সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের সংগঠন, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির নেতা ও শিল্প উদ্যোক্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছি। আশা করছি, এ বছরের শেষে আরও বেশ কিছু প্লট বরাদ্দ হবে এবং আগামী বছরের জুনের মধ্যে সব প্লটই বরাদ্দ হবে।’