বরিশাল
প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের দ্বারপ্রান্তে দুই দশকের অপেক্ষা
স্থায়ীকরণের আশায় বিসিসির ৬৩ কর্মচারী
মির্জা রিমন ॥ দীর্ঘদিনের আশ্বাস, একের পর এক সভা-সেমিনারের প্রতিশ্রুতি এবং নথির পর নথি ঘুরপাকের পর এবার স্থায়ীকরণের বিষয়ে নতুন করে আশার আলো দেখছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) ৬৩ জন কর্মচারী। দীর্ঘ দুই দশক ধরে নগরবাসীর সেবায় নিয়োজিত এসব কর্মচারীর স্থায়ীকরণ ইস্যু অবশেষে প্রাতিষ্ঠানিক আলোচনার টেবিলে উঠলেও বাস্তব সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে এখনো সময় নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সর্বশেষ গত ৮ ডিসেম্বর ৬৩ কর্মচারীর স্থায়ীকরণ বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সচিব, চীফ রেভেনিউ অফিসার (সিআরও), প্রধান প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী (পানি), হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা এবং আইন উপদেষ্টা। কমিটির দায়িত্ব হলো কর্মচারীদের নিয়োগসংক্রান্ত নথি, আদালতের রায়, চাকুরি বিধিমালা-২০১০ এবং বিদ্যমান প্রশাসনিক প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করে স্থায়ীকরণের বিষয়ে সুপারিশ প্রদান।
সিটি করপোরেশন চাকুরি বিধিমালা-২০১০ অনুযায়ী, ২০১০ সালের পূর্বে সরকারি বিধি অনুসরণ করে যেসব ব্যক্তি অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের করপোরেশনের নিয়মিত কর্মচারী হিসেবে গণ্য করার স্পষ্ট বিধান রয়েছে। এই বিধান অনুযায়ী ৬৩ কর্মচারীর স্থায়ীকরণে আইনি কোনো বাধা নেই বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। এর আগেও সাবেক প্রশাসক রায়হান কাওছার গত ৬ আগস্ট করপোরেশনের সাধারণ সভায় স্থায়ীকরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিলেও তা বাস্তবায়ন না করেই দায়িত্ব ছাড়েন। ফলে কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা ও অনাস্থা আরও বেড়ে যায়।
কমিটি গঠনের এক সপ্তাহ পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি তদন্ত ও সুপারিশ কমিটি। এতে কর্মচারীদের মধ্যে আবারও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তারা বলছেন, অতীতেও একাধিকবার আশ্বাস দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত আসেনি। নগরবাসীর প্রত্যাশা আইন ও মানবিকতার আলোকে দ্রুত এই দীর্ঘদিনের সমস্যার ন্যায্য সমাধান আসবে।
অপরদিকে আন্দোলনরত কর্মচারীরা জানিয়েছেন, গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী যদি দ্রুত স্থায়ীকরণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তারা আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন। তবে এ বিষয়ে অযথা বিলম্ব বা সিদ্ধান্তহীনতা চলতে থাকলে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথাও স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আজও একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের আইন উপদেষ্টা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পর্যালোচনার পাশাপাশি সার্বিক আইনগত দিকগুলো বিশ্লেষণ করছেন। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে শিগগিরই এ বিষয়ে একটি আইনসম্মত ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।”
সব মিলিয়ে বলা যায়, দীর্ঘদিনের এই জটিলতা এখন প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। আইনগত অবস্থান স্পষ্ট, প্রয়োজনীয় নথিপত্রও প্রস্তুত এখন কেবল অপেক্ষা সাত সদস্যের কমিটির সুপারিশ কত দ্রুত বাস্তব সিদ্ধান্তে পরিণত হয়। আইন ও মানবিকতার আলোকে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসবে এই প্রত্যাশাতেই তাকিয়ে আছে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী ও নগরবাসী। হয়তো এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়েই দুই দশকের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে।



