বরগুনা
সিডরের ১৫ বছর, আজও ছেলের অপেক্ষায় ষাটোর্ধ্ব ছালেহা
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর, উপকূল দিয়ে বয়ে যায় ভয়াল ঘুর্ণিঝড় সিডর। সিডরের ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও কান্না মোছেনি ষাটোর্ধ্ব ছালেহা বেগমের।
সিডরে একমাত্র ছেলে মো. বাবু ফকিরকে হারিয়ে প্রতি মুহুর্ত ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদেন ছালেহা। ছেলের উপার্জনেই নির্ভর ছিলেন ছালেহা-আজিজ ফকিরের সংসার। জীবিকার তাগিদে সাগরে যাওয়ার পর বাবু আর ফিরে আসেননি। আজও একমাত্র ছেলেকে ভুলতে পারেননি মা ছালেহা।
প্রলয়ংকরী সেই ঘূর্ণিঝড়ে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার উপকূলে অনেক মানুষের প্রাণহানি হয়। একই পরিণতি হয় সেই সময় সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া অসংখ্য জেলের। অনেকে ভাগ্যক্রমে ফিরে আসলেও অনেকেই নিখোঁজ রয়েছে।
আজও তাদের সন্ধান মেলেনি। শুধু বাবু ফকিরই নয়, তাদের গ্রামের প্রায় পরিবার থেকেই সিডরে নিখোঁজ হয়। বাবুর সঙ্গে একই ট্রলারে থাকা জাকির হাওলাদার, ইসমাইল হোসেন, হারেজ বিডিয়ারসহ একই এলাকার ৯ জন আজও ফেরেনি।
কথা হয় একমাত্র ছেলেহারা ষাটোর্ধ্ব ছালেহা বেগমের সঙ্গে। সিডরের আগে বাবু ফকিরের সাগরে যাওয়ার পুর্ব মুহূর্তের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। স্বামীর অসুস্থতার কারণে ছেলের কথা মনে পড়লেই আলাদা জায়গায় গিয়ে কান্না করেন।
কখনো কখনো নামাজের ঘরেও কান্না করেন। আজও ছেলের পথের দিকে তাকিয়ে আছেন ছালেহা। তিনি বলেন, বাবু সাগরে যাওয়ার সময় একটি বড় পোমা (পোয়া) মাছ দিয়া গেছে খাওয়ার জন্য। আর বলে গেছে, ‘এবার সাগর থেকে আসার সময় বড় ইলিশ মাছ নিয়া আইব।
কিন্তু ইলিশ মাছ দিয়া কি করমু, মোর পোলাডাইতো আয়নায়। বিয়া করার ১০ মাস পর সাগরে যাইয়া পোলায় আর আয়নায়। আমার ছেলে সিডরে নিখোঁজ হওয়ার কয়েক মাস আগে পুত্রবধুর গর্ভে একটি সন্তান আসলেও গর্ভেই মারা যায়।
তিনি আরও বলেন, একমাত্র পোলার কামাইয়ে সংসার চলতে। অসুস্থ স্বামী কাজ করতে পারছে না। আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করি আর বনের মধ্যে খালে মাছ ধরি, তা বিক্রি করে যা পাই তা দিয়া সংসার চালাই। আমার পোলা হয়তো আর বেঁচে নেই। মন তো মানে না। আজও আমরা বুড়াবুড়ি সন্তানের অপেক্ষায় পথের দিকে তাকিয়ে আছি।
কথা হয় সিডরে নিখোঁজ জেলে ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী লাভলী বেগমের সঙ্গে। তিনি আজও পথপানে চেয়ে আছেন- এই বুঝি স্বামী ইসমাইল আসছে। লাভলী বেগম বলেন, সন্তান নিয়া খুবই কষ্টে দিন পাড় করছি। এনজিওর রাস্তার কাজ, অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোন মতে দিন যায়।