বরগুনা
যে কারণে ইলিশের দাম রাতে কম থাকে!
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নিষেধাজ্ঞার কারণে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় চলমান সময়ে দাম ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। দাম কম হওয়ায় বরগুনা বাজারের মাছের আড়তে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
আর এসব বাজারে দিনের চেয়ে রাতে মাছের দাম কম থাকে। বুধবার (২ অক্টোবর) রাত ১০টায় সরেজমিনে বরগুনা পৌর মাছ বাজার এবং বুড়িশ্বর নদী সংলগ্ন পুরাকাটা ফেরিঘাট ঘুরে দেখা যায় এসব স্থানে সকালের তুলনায় অনেক কম দামে ইলিশ বিক্রি করছে খুচরা বিক্রেতারা।
রাতে কেন ইলিশের দাম কমে জানতে চাইলে মাছ বিক্রেতা রফিকবলেন, স্থানীয় নদীগুলোতে জেলেরা জোয়ারের সময় জাল ফেলে। সন্ধ্যায় জাল তুলে ইলিশগুলো আলাদা করে স্থানীয় বাজারে নিয়ে আসেন। এজন্য রাতে ইলিশের সরবরাহ বেশি থাকে এবং দাম কম থাকে।
ক্রেতারা জানান, দিনের তুলনায় রাতে দাম কম থাকায় এ সময়টাতেই মানুষ বাজারে বেশি আসে। বাজারে যারাই আসে সবাই কম বেশি সামুদ্রিক মাছ কিনে বাড়ি ফেরে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়- দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকায়। ১ কেজি থেকে ১ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ টাকা। ২২০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৪৬০ টাকা এবং ৬০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। শুধুমাত্র রাতে এ দামে ইলিশ বিক্রি হয়। সকালে দামের পরিবর্তন হয়।
পৌর শহরের ধানসিঁড়ি এলাকার বাসিন্দা নাইম ফরাজী নামে এক ক্রেতা বলেন, দাম কম থাকায় আমি ৩ কেজি ইলিশ কিনেছি। মাছগুলো স্থানীয় নদীর।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা বিএফডিসির মার্কেটিং অফিসার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, গত দু’দিনে বিএফডিসি মৎস্য বাজারে রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে। এ বছর ইলিশসহ সামগ্রিক মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ছে গত বছরের তুলনায় প্রায় ২ গুণ।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, জেলেরা আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছে। তাদের অনেকে এখন নিষেধাজ্ঞা মানছে। কয়েক দিন হলো ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। এখন নিষেধাজ্ঞার সুফল পাচ্ছে জেলেরা। এ বছর মা ইলিশ গতবারের চেয়ে ৬০ থেকে ৬২ শতাংশ বেশি ডিম ছেড়েছে।
জেলায় মাছের উৎপাদন ও চাহিদা-
মাছের মোট উৎপাদন ১ লাখ ৯ হাজার ৭০ মেট্রিক টন। মাছের মোট চাহিদা ২৬ হাজার ৯৩৭ মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত মাছের পরিমাণ ৮২ হাজার ১৩৩ মেট্রিক টন।
বিগত পাঁচ বছরে মাছের উৎপাদন-
২০১৫-১৬ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ১৭৩০৩ মেট্রিক টন ও সামুদ্রিক ৭৪৭০০ মেট্রিক টন। মোট ৯২০০৩ মেট্রিক টন উৎপাদন। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ১৭৩৫৩ মেট্রিক টন ও সামুদ্রিক ৭৫১৫০ মেট্রিক টন। মোট ৯২৫০৩ মেট্রিক টন উৎপাদন। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ১৮৩৭১ মেট্রিক টন ও সামুদ্রিক ৮০০৯৭ মেট্রিক টন। মোট ৯৮৪৬৮ মেট্রিক টন উৎপাদন। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ১৯৬৭৪ মেট্রিক টন, সামুদ্রিক ৮৩৫৮২ মেট্রিক টন। মোট ১০৩২৫৬ মেট্রিক টন উৎপাদন। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ২১২৪০ মেট্রিক টন, সামুদ্রিক ৯০১২৬ মেট্রিক টন। মোট ১০৯০৭০ মেট্রিক টন উৎপাদন।
মৎস্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে-
দেশে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩.৮৮ লাখ মেট্রিক টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩.৯৫ লাখ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪.৯৭ লাখ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫.১৭ লাখ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫.৩৩ লাখ মেট্রিক টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫.৫ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৫.৬৫ লাখ মেট্রিক টন।