বরিশাল
ময়লার ভাগারে পরিণত বরিশাল নগরী অবশেষে পরিচ্ছন্নতার নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ব্যানার অপসারণের সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বরিশালের সাধারণ মানুষ পড়েছে ভোগান্তিতে। টানা ৩ দিন নগরীর পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ময়লা অপসারণ করেননি। ময়লার ভাগারে পরিণত হওয়া নগরী ছিল দুর্গন্ধময়। নগরীতে চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার লোকজন এতে চরম ক্ষুব্ধ। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা কাজে না আসায় বাসা-বাড়ীতে জমে থাকা ময়লার কারনে অনেকের বাসা-বাড়ীও দুর্গন্ধময় হয়ে পড়েছিল। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাজায়-রাজায় যুদ্ধে ভূক্তভোগী বরিশালের জনগণ।
বিসিসি’র মেয়রসহ অজ্ঞাতনামা অনেকের নামে মামলা হওয়ায় গ্রেফতার আতঙ্কে কাজে যোগ দিতে পারছেন না বলে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। অবশেষে গতকাল সন্ধায় বরিশাল নগরীর মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বিসিসি’র পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ময়লা অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ১৯ আগস্ট থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা বন্ধ করে দিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের পরিছন্নতা কর্মীরা। এতে নগরী জুড়ে স্তূপাকারে পড়ে থাকা ময়লার কারণে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
বিসিসি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজ বন্ধ থাকায় বাসাবাড়িতেও জমে যায় ময়লার স্তুপ। প্রশাসনের সাথে জণপ্রতিনিধির দ্বন্দ প্রকট আকার ধারণ করায় সমস্যা সমাধানের কোনও পথও মিলছিল না। এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে জানান নগরীর একাধিক বাসিন্দা। নগরীর সিএন্ডবি রোডের বাসিন্দা নাজমুন নাহার বলেন, ইউএনও’র বাসভবনে হামলার ঘটনার রাতে উপজেলা পরিষদের প্রধান গেটের কিছু সামনে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে এক ট্রাক ময়লা ফেলা হয়। সেই ময়লাও শনিবার সন্ধা পর্যন্ত সরানো হয়নি। ওই স্থান থেকে মানুষজনের পাশাপাশি যানবাহন চলাচলেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
চৌমাথা বাজারের ব্যবসায়ী ফিরোজ মাঝি বলেন, ১৮ তারিখ রাত থেকে এলাকার ময়লা নিচ্ছে না সিটি করপোরেশন। এর আগে প্রতি রাতে সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি এসে বাজার পরিষ্কার থেকে শুরু করে এই এলাকার ময়লা নিয়ে যেত। নগরীর আমানতগঞ্জ, পোর্টরোড, বাজার রোড, নতুন বাজার, সাগরদী বাজারসহ প্রায় সব এলাকার অবস্থাই একই রকম।
দুর্গন্ধের মধ্যেই নগরীর বাজারগুলিতে চলছে বেচাকেনা। বটতলার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম সিয়াম বলেন, ১৯ তারিখ থেকে এই এলাকার ময়লা পরিষ্কার করছে না সিটি করপোরেশন। তার মতে, পুরো নগরবাসী সিটি করপোরেশনের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ময়লা অপসারণ না হওয়া সম্মন্ধে শনিবার সকালে বিসিসির কর্মচারীরা মানববন্ধন করে জানান যে, মামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পরিছন্নতা কর্মীরা। অজ্ঞাতনামা আসামী করে শত শত লোকের নামে মামলা হওয়ায় তারা গ্রেফতার আতঙ্কে ভূগছেন।
সচেতণ মহলের দাবী, একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে নগরবাসীকে জিম্মি করা ঠিক নয়। দুই পক্ষকে বসে দ্রুত সমাধানের আহ্বানের দাবি নগরবাসীর। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কেণনা, তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। টেলিফোন রিসিভ করছেন না অনেকেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ডা. রবিউলের মোবাইল ফোনও শুক্রবার থেকেই বন্ধ। এছাড়া প্যানেল মেয়র থেকে শুরু করে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও এই ক’দিন এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
অবশেষে নগরবাসীর ভোগান্তির কথা বিবেচনায় এনে গতকাল ময়লা-আবর্জনা অপসারণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শনিবার সন্ধায় বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলন থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের প্রতি এ নির্দেশনা প্রদান করেন।