ভোলা
ভোলার ১০ গ্রামে চার মাস ধরে বিদ্যুুৎ নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সাবমেরিন ক্যাবল লাইন ছিঁড়ে যাওয়ায় ৪ মাস অতিবাহিত হলেও এখনও সচল হয়নি ভোলার মদনপুর ও কাচিয়া ইউনিয়নের বিদ্যুৎ সরবরাহ। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় জনজীবন।
বিচ্ছিন্নের পর চার দফা চেষ্টার পরেও মেরামত হয়নি লাইনটি। এতে বিদ্যুৎ নেই ভোলার মদনপুর ও কাচিয়া ইউনিয়নে ১০টি গ্রামে। ফলে বিদ্যুৎবিহীন দিন কাটাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। বিদ্যুৎ না থাকায় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে লোকসান গুনছেন গ্রাহকরা। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে খুব দ্রুত লাইনটি মেরামত করা হবে। তবে কবে নাগাদ বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
জানা গেছে, ভোলা সদরের মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর এলাকা ও দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর মেঘনার ৮০ ফুট গভীরে নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মাঝের চর ও মদনপুরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় পল্লী বিদ্যুৎ। প্রায় ৭ মাস পর গত ২৩ জুলাই সাবমেরিন ক্যাবল ছিঁড়ে যায়। তখন চার দফা চেষ্টা চালিয়েও লাইন মেরামতে ব্যর্থ হয় পল্লী বিদ্যুৎ। এরপর থেকে ওই দ্বীপ দুটি অন্ধাকারে রয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের ধারনা, মেঘনা নদী দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে জাহাজসহ বিভিন্ন নৌ-যান চলাচল করায় সাবমেরিন ক্যাবল ছিঁড়ে যায়। ভোলা-চট্টগ্রাম রুটের তলদেশ দিয়ে ভোলা সদরের তুলাতলী থেকে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবল টানা হয়েছিলো মাঝের চর ও মদনপুরে। ওই নৌ-পথ দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে নৌ-যান চলাচল করায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে বিদ্যুৎ সুবিধা চালুর পর যারা সৌর বিদ্যুতের বদলে বিদ্যুৎ সংযোগ এনেছিলেন তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। বিশেষ করে বেশিরভাগ গ্রাহকের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এখন নষ্টের পথে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা।
মাঝের চরের বাসিন্দা রহিমা বেগম ও শারমিন আক্তার বলেন, বিদ্যুৎ আসার পর আমরা সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছি, এখন বিদ্যুৎ নেই চার মাস। না চালানোর কারণে সৌর বিদ্যুৎ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন নষ্ট হতে চলছে বিদ্যুতের ফ্যান, বাতিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম। বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ না থাকায় বেশি সমস্যা হচ্ছে ব্যাবসায়ীদের। ফ্রিজে কোন খাবার সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না বলে আর্থিকভাবে লোকসানে পড়ছেন তারা।
মদনপুরের বাসিন্দা লুৎফর পাটোয়ারি বলেন, এতো দিন বিদ্যুৎ ছিলো, ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা ভালো ভাবেই করতো। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় তাদের পড়াশুনায় সমস্যা হচ্ছে।
মাঝের চর ৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আঃ রব জানান, মাঝের চরে ১৫ হাজার মানুষ বসবাস করে। বেশিরভাগ মানুষ তাদের ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছিল। এতে তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছিলো, যা কিনা এখন থমকে গেছে।
কাচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম নকিব বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। এতো দিন যারা সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করতেন তারাও পড়েছেন বিপাকে। অতিরিক্ত মূল্যে কেরোসিন কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে তাদের। দ্রুত সাবমেরিন ক্যাবল মেরামতের দাবী জানাই।
এ অবস্থায় খুব দ্রুতই সাবমেরিন ক্যাবলের মেরামত শুরু হবে বলে জানায় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে বাংলাবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আলতাব হোসেন বলেন, সাবমেরিন ক্যাবলের লাইনটি মেরামতের জন্য অনুমোদন হয়েছে। এখন টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন আছে। খুব শিগগিরই মেরামত কাজ শুরু হবে।
শতভাগ বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের আওতায় সরকার ভোলা জেলার অন্যান্য দ্বীপের সাথে মাঝের চর ও মদনপুরে ১৫ কোটি টাকা ব্যায়ে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করে। এতে আলোকিত হয় দুই দ্বীপচর। এখন লাইন দ্রুত পুনঃসংযোগের মাধ্যমে আবারও এসব দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহে দাবী চরবাসীর।