বরিশাল
বরিশালের ২৪০ বছরের পুরনো ‘দুর্গাসাগর’ এখন আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যেসব নিদর্শন রয়েছে, এর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর অন্যতম। দিন যত যাচ্ছে, ততই পাল্টে যাচ্ছে দুর্গাসাগর দিঘির চিত্র। পর্যটক আকৃষ্টে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দিঘি ও চারপাশ এলাকাকে প্রাকৃতিক আলপনা দিয়ে সাজানোর কাজ চলছে। ঐতিহাসিক এ স্থানটিকে দর্শনার্থীদের কাছে উপভোগ্য করে তুলতে বরিশাল জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে নানামুখী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন। এর মধ্যে অনেকাংশ বাস্তবায়নও করেছেন।
এক সময়কার অবহেলিত ২৪০ বছরের পুরনো এ দিঘিটি এখন আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। দিনের বেশিরভাগ সময় দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে। দীঘি দেখতে প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে সহস্রাধিক মানুষের সমাগম হয়। জনশ্রুতি ও স্থানীয় তথ্যানুসারে জানা গেছে, জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশায় ইউনিয়নে বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কের পাশে জনগণের পানি সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে এ দীঘিটি খনন করেন তৎকালীন চন্দ্রদ্বীপের পরগনার রাজা শিবনারায়ণ।
তার স্ত্রী রানী দুর্গাবতী একবারে যতদূর পর্যন্ত হেঁটে গিয়েছিলেন ততদূর পর্যন্ত এ দিঘি খনন করা হয়। আর রানী দুর্গাবতীর নামেই দিঘীটির নামকরণ করা হয় দুর্গাসাগর। এক রাতে রানী প্রায় ৬১ কানি জমি হেঁটেছিলেন। চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের বিভিন্ন গ্রাম হতে প্রজারা দিঘি খননে অংশ নেয়। দীঘি খনন কাজ শেষ করতে সময় লাগে প্রায় ছয় মাস। দিঘি খননে ব্যয় হয় তৎকালীন প্রায় তিন লাখ টাকা। দিঘিটির মাঝখানেই রয়েছে ছোট্ট একটি দ্বীপ, যা এ দিঘির সৌন্দর্য আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।
দীঘির চারপাশে নারিকেল, সুপারি, শিশু, মেহগনি প্রভৃতি বৃক্ষ রোপণ করে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়, যা বর্তমানে দিঘিটির শোভাবর্ধন করেছে। দিঘির চারপাশে বাঁধানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বিনোদনের নতুনমাত্রা খুঁজে পায় প্রকৃতিপ্রেমীরা। আর চিরচেনা গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে এ দিঘি যেন গ্রামীণ নিসর্গে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০ টাকার টিকিটে বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দিঘির সৌন্দর্য অবলোকন করতে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ জন মানুষ আসছেন। কিন্তু কয়েক বছর আগেও এখানে গড়ে অর্ধশত দর্শনার্থীও টিকিট কেটে প্রবেশ করতেন না।