বরিশাল
কানাডা ও ভারতে টাকা পাচারের অভিযোগ
বরখাস্ত হয়েও দায়িত্বে আছেন গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ একেরপর এক অভিযোগের পাহাড় নিয়ে বরিশালে অবৈধভাবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন গণপূর্ত অধিদপ্তর বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে। বরখাস্ত হওয়ার পরও তা গোপন রেখে বরিশালে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। গত বছর অক্টোবরে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ তথ্য লুকিয়ে তিনি বরিশালে বসে স্বেচ্ছাচারিতাসহ অপ্রয়োজনীয় আরাম-আয়েশে সরকারি টাকার অপচয় করছেন। তার বিরুদ্ধে ঠিকাদারদের বিল না দেয়া এবং ঠিকাদার ও সাধারণ মানুষের সাথে অসদাচরণের অভিযোগ ছাড়াও দুদকে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দু’টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
তার নিজ নামে একটি এবং তার স্ত্রী গোপা দে’র সাথে যৌথ একটি মামলা ২০২০ সালে দুদকের সহকারি পরিচালক মোঃ নেয়ামুল আহসান বাদী হয়ে দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে। এ মামলায় দুদক আদালতে চার্জশীট প্রদান করেন ২০২৩ সালে। একটি মামলায় শুধু উৎপল কুমার দে, অন্যটিতে তার স্ত্রী গোপা দে ও উৎপল কুমার দে-কে আসামী করা হয়েছে এবং আদালতে চার্জশীটও দাখিল করা হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ হয়েছে এবং ঠিকাদার সংগঠন প্রধানমন্ত্রী বরাবর তাকে সরিয়ে নেয়ার আবেদন জানিয়ে পত্র দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন ঠিকাদার সংগঠনের সভাপতি শাকিল হোসেন পলাশ।
তিনি বলেন, বরিশালের ইতিহাসে কখনো এতো জঘন্য প্রকৌশলী এর আগে আসেনি। সে স্থানীয় ঠিকাদারদের কাজ না দিয়ে ঢাকা থেকে পরিচিত ঠিকাদার এনে কাজ করায়। ঢাকার ঠিকাদাররা তাকে খুশি রাখতে দামী পানীয় নিয়ে আসে তার জন্য। অ্যালকালাইন ওয়াটার ছাড়া তিনি নরমাল পানি খান না বলে জানান এই ঠিকাদার সহ কয়েকজন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তারকা বিরাট কোহলি ও মালাইকা অরোরার মতো উৎপল কুমার দে দামীয় অ্যালকালাইন ওয়াটার পান করেন। যার দাম ভারতে ৭০০ রুপী। আর তার এই দামীয় অ্যালকালাইন ওয়াটার পান নিয়ে বরিশাল জুড়ে চলছে নানামুখী গুঞ্জন। তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ বরিশালের ঠিকাদারদের বিল না দিয়ে গণপূর্ত ভবনের অপ্রয়োজনীয় নির্মাণ কাজে কোটি কোটি সরকারি টাকা অপচয় করা। ছোট্ট ভবনের চারপাশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে অবিন্যস্ত কর্মচারীদের পর্যন্ত তটস্থ করে রেখেছেন গণপূর্তের এই কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে দুদক দুটি মামলা করেছে। মামলায় সত্যতা পেয়ে চার্জশীটও প্রদান করেছে। কিন্তু টাকা ও ক্ষমতার জোড়ে তিনি এখনো বহাল তবিয়তে বরিশালে রাজত্ব করছেন। উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য গোপন করে এখনো চাকুরী করছেন দাপটের সাথে।
সম্প্রতি বরিশাল গণপূর্ত, ঠিকাদার সংগঠন এবং দুদকের সাথে কথা বলে উৎপল কুমার দে সম্পর্কে উঠে এসেছে এসব তথ্য। তার সম্পর্কে এসব তথ্য জোগাড় করতে যেয়েই টনক নড়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। গত ১৩ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার পুনরায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা নং-২ তারিখ ০৫/০৮/২০২০ ইং এ অভিযোগ করা হয়েছে আসামী (১) গোপা দে, স্বামী- উৎপল কুমার দে, পিতা- নেপাল সেন, মাতা- নিয়তি সেন, বর্তমান ঠিকানা : ৫/এ, ৮১/৩, অতীস দীপঙ্কর সড়ক, সবুজবাগ, ঢাকা-১২১৪, স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম + পোঃ চক্রশালা, থানা- পটিয়া, জেলা- চট্টগ্রাম এবং (২) উৎপল কুমার দে, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (রিজার্ভ), গণপূর্ত অধিদপ্তর, ঢাকা, পিতা- দুলাল চন্দ্র দে, মাতা- পারুল রানী দে, বর্তমান ঠিকানা : ফ্ল্যাট নং- ৫/এ, ৮১/৩, অতীস দীপঙ্কর সড়ক, সবুজবাগ, ঢাকা-১২১৪, স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম + পোঃ- চক্রশালা, থানা- পটিয়া, জেলা- চট্টগ্রাম । অসৎ উদ্দেশ্যে দুর্নীতির মাধ্যমে ৬,৬২,৬৮,৭৫৪/- (ছয় কোটি বাষট্টি লক্ষ আটষট্টি হাজার সাতশত চুয়ান্ন) টাকার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করে তা নিজেদের ভোগ দখলে রেখে উক্ত সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময়ে রূপান্তর/স্থানান্তর/হস্তান্তর করে মানি লন্ডারিং এর মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় এবং মানি-লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারাসহ দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকার নথি নং-০০.০১.০০০০.৫০২.০১.১০১.১৯ এর অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ১নং আসামী গোপা দে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (রিজার্ভ) উৎপল কুমার দে’র স্ত্রী। গোপা দে-এর আয়কর নথিতে তার নামে পটিয়া ইলেকট্রনিক্স নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু একজন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে উৎপল কুমার দে’র স্ত্রী গোপা দে কর্তৃক উক্ত ব্যবসা করার স্বপক্ষে বিভাগীয় কোন অনুমতি নেয়ার দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানকালে আসামী গোপা দে’র ২০১৮-১৯ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর নথিতে প্রদর্শিত নীট ১,৬০,৬৯,২০৫/- টাকা আয়ের সমর্থনে বৈধ উৎসের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বা দাখিল করতে সমর্থ হয়নি। এছাড়াও আরো জানা গেছে যে, গোপা দে’র নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আরো ৫,০১,৯৯,৫৪৯/- টাকার অস্থাবর সম্পদ গচ্ছিত রয়েছে। কিন্তু উক্ত সম্পদের তথ্য গোপা দে’র আয়কর নথিতে প্রদর্শন না করে গোপন করা হয়েছে। অনুসন্ধানকালে ব্যাংকে গচ্ছিত উক্ত অর্থেরও বৈধ কোন উৎসের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সে হিসাবে আসামী গোপা দে’র নামে তার আয়কর নথিতে প্রদর্শিত ১,৬০,৬৯,২০৫/- এবং বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত ৫,০১,৯৯,৫৪৯/- টাকারসহ মোট (১,৬০,৬৯,২০৫/- + ৫,০১,৯৯,৫৪৯/-) = ৬, ৬২,৬৮,৭৫৪/- (ছয় কোটি বাষট্টি লক্ষ আটষট্টি হাজার সাতশত চুয়ান্ন) টাকার সম্পদের (স্থাবর-অস্থাবর) তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। যা তার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ অবৈধ সম্পদ মর্মে পরিলক্ষিত হয়।
এক্ষেত্রে, প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ১নং আসামী গোপা দে ২নং আসামী স্বামী- উৎপল কুমার দে-এর প্রত্যক্ষ যোগসাজসে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় ৬,৬২,৬৮,৭৫৪/- (ছয় কোটি বাষট্টি লক্ষ আটষট্টি হাজার সাতশত চুয়ান্ন) টাকার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ অবৈধ সম্পদ অর্জন পূর্বক তাদের ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় এবং উক্ত সম্পদ বিভিন্ন সময়ে রূপান্তর/স্থানান্তর/হস্তান্তরে
এছাড়া উৎপল কুমার দে’র নামে দুদকে আরও একটি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলা রয়েছে যার মামলা নং-৩ তারিখ ০৫/০৮/২০২০ ইং। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন সরকারি চাকুরী আইন ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭ নং আইন) এর ধারা ৪১ এর উপধারা (২) ও সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ (জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-৪ শাখা থেকে জারীকৃত প্রজ্ঞাপন এস.আর.ও নং ১১০ আইন/২০১৮) এর বিধি ২৫ এর উপবিধি (২) এবং সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের (বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) অফিস মেমোরেন্ডাম নং (ইডি) (রেগ-৮)/এস-১২৩/৭৮-১১৫ (৫০০) তারিখ ২১/১১/৭৮ (এস্টাবলিশমেন্ট মেনুয়্যাল ১নং ভলিউমের পৃষ্ঠা নং- ৮৯২ ও ৮৯৩) এবং বি.এস.আর ১ম খন্ডের ৭৩ বিধির ১ ও ২ নং নোট অনুসারে কোন সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতারের পর বা আদালতে আত্মসমর্পনের পর জামিনে মুক্তি লাভ করিলেও সাময়িক বরখাস্ত হিসেবে গণ্য হইবেন।
এছাড়াও গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে গণপূর্তে বদলি বাণিজ্য, পদোন্নতি বাণিজ্য, পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়া ও অসাধু কর্মকর্তাদের ঘুপচি টেন্ডার অনুমোদনসহ সব ধরনের কাজ করে আসছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে দুদকে। সে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে ইজিপি এড়িয়ে ওটিএম’র মাধ্যমে প্রকল্পের টেন্ডার বন্টন করাসহ অসংখ্য অভিযোগে অভিযুক্ত। এসব কাজ করার জন্য ফাইভ স্টার গ্রুপ তৈরি করেন এবং জিকে শামীম এর সাথে এই ফাইভ স্টার গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়েছেন উৎপল কুমার দে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের অনেকে দুদক থেকে দায়মুক্তি পেলেও উৎপল কুমার দের বিরুদ্ধে সব অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় স্ত্রীসহ দুটি মামলার আসামী হয়েছেন তিনি।
ইতিপূর্বে এসব অসদাচরণের কারণে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নয়জন প্রকৌশলী এবং দুই মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তাসহ ১১ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর এই নিষেধাজ্ঞার ১১ জনের মধ্যে যার নামটি শীর্ষে রয়েছে তিনি হলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে। বিতর্কিত ঠিকাদার জিকে শামীমের সঙ্গে প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে যুক্ত থেকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের কারনেই বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক। উৎপল কুমার দে এর বিরুদ্ধে দুদকের তদন্তে সত্যতাও মেলে। বিদেশ যাত্রার নিষেধাজ্ঞার চিঠি ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ক্যাসিনোকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রাঘব বোয়ালদের গ্রেফতার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো ও অন্যান্য অবৈধ মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধানে নামে দুদক।
এই অনুসন্ধানের সময় নাম আসে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে’র। ২০২০ সালের ৫ আগস্ট দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ সংস্থাটির কর্মকর্তা নেয়ামুল আহসান গাজী বাদী হয়ে উৎপল কুমার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। দ্বিতীয় মামলাটির আসামি শুধু উৎপল কুমার দে। এই মামলাটিও দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী বাদী হয়ে করেছেন। মামলায় বলা হয়েছে, একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও উৎপল কুমার বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহিভূত সম্পদ অর্জন করেছেন ১ কোটি ১৮ লাখ ১৭ হাজার ৯০৩ টাকা। অনুসন্ধানকালে দেখা গিয়েছে, আসামি তার বেতন ভাতা ছাড়া সুনির্দিষ্ট বৈধ আয়ের কোনো উৎস দেখাতে পারেননি। ফলে দুর্নীতির মাধ্যমে এই সম্পদ অর্জন করেছেন বলে বিবেচিত। এছাড়াও উৎপল কুমার দেকে ঘুষ দিয়ে বিতর্কিত ঠিকাদার জিকে শামীম গণপূর্তের বড় কাজগুলো হাতিয়ে নিত বলেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। যার প্রমণ পাওয়া যায় ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারী তার বরিশালে যোগদান করার পর থেকেই ঢাকার জিকি শামীম অনুসারী ঠিকাদারদের বরিশালের গণপূর্তের কাজ পাওয়ায়।
একাধিক বড় প্রকল্প ঢাকার ঠিকাদারকে দিয়ে করানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে বরিশালের ঠিকাদার সংগঠন নেতারা। বরিশাল গণপূর্ত দফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে’র বিরুদ্ধে কানাডা ও ভারতে টাকা পাচার, কোটি কোটি টাকার বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। ঠিকাদার জিকে শামীম গ্রেফতার হওয়ার পর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দের সম্পর্কে তথ্য পেতে শুরু করে দুদক । প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে’র ছেলে কানাডায় বসবাস করার কারণে সেখানে টাকা পাচার করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
উৎপল দে তার ছেলেকে কয়েক কোটি মূল্যের গাড়ি কিনে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। নিম্নমানের রড-সিমেন্ট দেওয়ায় নির্মাণের সময়ই ভেঙে পড়ে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রাচীর। ওই সময় নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন এই উৎপল কুমার দে। পরে এ ঘটনার তদন্ত করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তাতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হলেও ধামাচাপা পড়ে যায় তদন্ত প্রতিবেদন। তৎকালীন গৃহায়ন ও গনপূর্তী মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের নির্দেশে এক প্রজ্ঞাপনে ঢাকা মেট্রো ও ঢাকা জোনের দ্বায়িত্ব থেকে উৎপল কুমার দে’কে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।উৎপল কুমার দে ১৫তম বিসিএসে গণপূর্ত অধিদপ্তরে যোগদান করেন। তার দায়িত্ব পালনকালে আজিমপুর গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী ও ঢাকা ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকাকালে নানা বিতর্ক ছিল। এর মধ্যে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্মাণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
ওই কমিটির রিপোর্ট এখনো আলোর মুখ দেখেনি। উৎপল কুমার দে’কে ওএস ডি করার পর তিনি দ্বায়িত্ব বুঝিয়েও দেননি। পরে উপায়ান্ত না পেয়ে দ্বায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। উৎপল কুমার দে কিছু দিন ঘাপটি মেরে তদবীর করে গনপুর্তের বরিশাল জোনে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হয়ে আসেন।
এ ব্যাপারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের যুগ্নসচিব ও আইন কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর জানান, আমি অসুস্থ্য ছুটিতে রয়েছি তাই না জেনে বলা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে বরিশাল গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে‘র বক্তব্য গ্রহণের চেষ্টায় তার কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পরপর এক সপ্তাহ পাওয়া যায়নি। কর্মচারীরা জানান, তিনি গত ৬ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন। ফলে মুঠোফোনে উৎপল কুমার দে জানান, আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। কেউ কেউ ঈর্ষান্বিত হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। দুদকের মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মামলা চলমান রয়েছে। আমার অথরিটি সব জানেন বলে জানান উৎপল কুমার।
এদিকে বিভিন্ন অভিযোগের সুত্র ধরে ১৩ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে গণপূর্ত বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে-কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের প্রশাসন শাখা -১ থেকে প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, উৎপল কুমার দে, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, বরিশাল গণপূর্ত জোন, বরিশাল (প্রাক্তন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী গনপূর্ত অধিদপ্তর, ঢাকা এর বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা -১ এর মামলা নং -০২, তারিখ: ৫-৮-২০২০ এ দূর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক দাখিলকৃত দূর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা -১ এর অভিযোগপত্র (চার্জশীট) নং ১১৭, তারিখ: ২১-৮-২০২৩ বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক গত ১০-১০-২০২৩ তারিখে গৃহীত হয়েছে। সেহেতু জনাব উৎপল কুমার দে কে সরকারি কর্মচারী আইন, ২০১৮ (২০১৮ সনের ৫৭ নং আইন) এর ৩৯(২) অনুযায়ী ১০-১০-২০২৩ তারিখ থেকে সরকারী চাকুরী হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। অর্থাৎ গত বছর অক্টোবর থেকে উৎপল কুমার দে অবৈধভাবে বরিশালে দায়িত্ব পালন করছিলেন বলে বিস্ময় প্রকাশ করেন বরিশাল গণপূর্তের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।