শিক্ষা
পাবলিক পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন না শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি ও ভোগান্তি কমাতে পাবলিক পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন না শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। একই সঙ্গে পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারাও যাতে কেন্দ্র পরিদর্শনে না যান, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
দীর্ঘদিন থেকে এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রথম দিন ঘটা করে কেন্দ্র পরিদর্শনে যেতেন শিক্ষামন্ত্রীসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা। এই রেওয়াজ শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের ভোগান্তি সৃষ্টি করে বলে মনে করেন নওফেল।
আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। এই পরীক্ষার আগেই দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ কেন্দ্র পরিদর্শন না করার ঘোষণা দেন মন্ত্রী।
মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে আমরা একটা ভিন্ন চিন্তা করেছি। কেন্দ্র পরিদর্শন পরীক্ষার্থীদের জন্য ট্রমা। পরীক্ষার দিন মন্ত্রী যে কেন্দ্রে যান, সেই কেন্দ্রে সবার জীবন শেষ। মিডিয়ার কমপক্ষে ১০০ জন থাকেন। কেন্দ্র পরিদর্শনের দিন কমপক্ষে ১০০টি গাড়ি থাকে। মন্ত্রণালয়, অধিদফতরসহ যত বড় বড় কর্মকর্তা আছেন, আমরা সবাই যাই।
এর সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও যান। ফলে একটি জনসমাবেশের সৃষ্টি হয়। এই জনসমাবেশ শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক নির্যাতনের মতো। পরীক্ষার দিন (পরীক্ষার প্রথম দিন) বেলা ১১টার সময় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আমরা বসবো, বলেন তিনি।
পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গত বছর রাজধানীর তেজগাঁওয়ে একটি পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছি, এক পরীক্ষার্থী দেরি করে এসেছে এবং সেটি আমাদের কারণেই। এ সময় তার পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছে ক্যামেরাগুলো। এমনিতেই তখন ওই পরীক্ষার্থী প্যানিকড, দেরি করে আসছে…দেরি হয়েছে কার জন্য? আমাদের জন্য। কারণ আমাদের ২০০ গাড়ি রাস্তায়। এতে ওই কেন্দ্রে কেউ ঢুকতে পারছে না।
পরীক্ষা-সংক্রান্ত আইন তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি ইনভিজিলেটর না, পরিদর্শক ছাড়া কারও ঢোকার ক্ষমতা নেই আইন অনুযায়ী। মন্ত্রী, সচিব, মহাপরিচালক আমরা ক্ষমতাবলে মাতবরি করছি। কেন্দ্র পরিদর্শনের নামে শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ওপর যে হয়রানিমূলক এবং মানসিক যন্ত্রণাদায়ক যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, এসব ভোগান্তি দূর করার জন্য আমরা কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবো না। কেন্দ্র পরিদর্শনে যাওয়ার আইনি এখতিয়ার আমাদের কারও নেই।
কেন্দ্রর বাইরেও যাতে অভিভাবকরা ভিড় না করেন, সে প্রসঙ্গ তুলে নওফেল বলেন, আমরা প্রমোট করছি কেন্দ্রের বাইরে ঝামেলা এড়াতে অভিভাক থাকবেন না, আমরা থাকতে দিচ্ছি না। অথচ আমরা বা আমি ফ্ল্যাগওয়ালা গাড়ি নিয়ে ছবি তুলে নাটক করে বেড়াচ্ছি। আমরা যে রুমে রুমে যাই, নকল ধরতে যাই?
মন্ত্রণালয় জানায়, পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও প্রশ্ন ফাঁসের গুজবমুক্ত পরিবেশে সম্পন্নের লক্ষ্যে ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। কেন্দ্র সচিব ছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। কেন্দ্র সচিব ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। অননুমোদিত ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হবে। ট্যাগ অফিসার ট্রেজারি, থানা হেফাজত থেকে কেন্দ্র সচিবসহ প্রশ্ন বের করে পুলিশ প্রহরায় সব সেটের প্রশ্ন কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। পরীক্ষা শুরু হওয়ার ২৫ মিনিট আগে প্রশ্নের সেট কোড ঘোষণা করা হবে। সে অনুযায়ী কেন্দ্র সচিব, ট্যাগ অফিসার ও পুলিশ কর্মকর্তার স্বাক্ষরে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট বিধি অনুযায়ী খুলবেন।
পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টা ও গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।