বরিশাল
‘নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয়’
আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) প্রধান সমন্বয়কারী দিলিপ কুমার সরকার। তিনি বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন এক একটা একেক ধরনের হলেও সবগুলো নিয়েই মানুষের মাঝে অসন্তুষ্টি আছে। বিগত দিনে বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন যেমন গ্রহণযোগ্য হয়নি, যদি আমরা ওই দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাহিরে রাখতে চাই তখন দেখবেন যে বড় অংশের একটা ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাবে না।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যক্রমে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি ও সংস্কার কমিশনের কাছে জনআকাঙ্ক্ষা ভিত্তিক সুপারিশ তুলে ধরতে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সহযোগিতায় সংবাদ সম্মেলনে দিলিপ কুমার সরকার এসব কথা বলেন। বুধবার (৬ নভেম্বর) বেলা ১১টায় বরিশাল নগরীর সদররোড আর্যলক্ষ্মী মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
দিলিপ কুমার সরকার বলেন, বিগত দিনে সারাদেশ ও দলের মধ্যে যেমন একটা কর্তৃত্ববাদী শাসন ছিল, একজনের কথায় দল চলতো, এ কারণে নেতৃত্বের দায় দলের ওপর চাপানো ঠিক না। যখন নির্বাচন হবে, সেটা যেন অংশগ্রহণমূলক হয় এটা আমরা চাই। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে লাখ লাখ মানুষ আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে গত ১৫ বছরে অনেকে অপরাধকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন, আন্দোলনের সময় অনেকে অন্যায় করতে পারেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন, অনেকে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। এক কথায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হোক, তাদের বিচার করা হোক।
তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আন্তর্জাতিক নির্দেশকগুলোকে যদি আমরা দেখি, সেখানে মানুষের অংশগ্রহণের কথা যেমন বলা আছে, তেমনি মানুষের সামনে অনেক বিকল্প থাকতে হবে। মানুষ যাকে যাকে দেখতে চায় ওই তালিকায় সবার উপস্থিতি থাকতে হবে। সেজন্য আমরা মনে করি- যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার হোক, কিন্তু কোনো দল নিষিদ্ধ করা বা দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়ার স্ট্যান্ড থাকা উচিত নয়। যারা অন্যায়কারী ছিল এবং যে ফেসগুলো আমরা দেখেছি অন্যায়কে উসকে দিতে, সংঘর্ষকে উসকে দিতে তারা যদি রাজনীতির অঙ্গনে আসে এবং তারা যদি সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে, সেটা হয়ত মানুষ ভালোভাবে নেবে না। এখান সৎ মানুষ, ভালো মানুষ, নতুন নেতৃত্ব, নতুন আওয়াজ তুলে এ জায়গায় আসতে হবে। অতএব পরিশুদ্ধ হয়ে সেই রকম নেতৃত্ব নির্বাচন করে দলকে এগিয়ে নিলে তখন একটা ইতিবাচক সারা মানুষের দিক থেকেও হয়তো পেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে ধারণাপত্রে ১১টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকার সমূহের মধ্যে বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন বাতিল করে নতুন করে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন প্রণয়ন করা, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে সৎ যোগ্য নিরপেক্ষ ও সাহসী ব্যক্তিদের স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ প্রদানসহ ১২টি প্রস্তাব করা হয়। সংবিধানের মধ্যে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না এমন বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়। জনপ্রশাসন সংস্কারের ক্ষেত্রে ৬টি, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনে ৫টি, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকারে ৬টি, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনে ১০টি, স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনে ৭টি, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে ৬টি, শ্রমিক অধিকার বিষয়ক সংস্কার কমিশনে ১০টি, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনে ৬টি এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনে ৯টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
সুজন বরিশাল মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে কোনো দলকে বাদ দিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়, ২০১৪ সাল থেকে যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এটাই প্রমাণিত। সুজন মনে করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে সকল দলকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। তবে হ্যাঁ নির্দিষ্ট করে যে ব্যক্তিরা অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার হোক। কিন্তু নির্বাচন অতীতের মত কোনো দলকে বাদ দিয়ে হলে তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না, প্রশ্ন থেকেই যাবে।
সুজন বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ গাজী জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্ব সংবাদ সম্মেলনে মহানগরের সভাপতি অধ্যাপক মোতালেব হাওলাদার, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্টের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী (বরিশাল অঞ্চল) মেহের আফরোজ মিতা উপস্থিত ছিলেন।