বরিশাল
ভয়াল ২১ আগস্ট
দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন সেন্টুর স্বজনরা
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নৃশংস ও বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা চলাকালীন প্রিয় নেত্রীর জীবন বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা মোস্তাক আহমেদ সেন্টুর স্বজনরা দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন।
সেন্টু ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে দলের সভাপতিকে (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) হত্যার উদ্দেশে গ্রেনেড হামলায় নিহত ২৪ জনের একজন মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রামারপোল গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাক আহমেদ সেন্টু। সেই ভয়ালদিনের প্রত্যক্ষদর্শী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং সেন্টুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী রাজিব হোসেন ভূঁইয়া রাজু বলেন, ২১ আগস্ট মোস্তাক আহমেদ সেন্টু ভাইয়ের সঙ্গে আমি মঞ্চের সামনে বসে নেত্রীর ভাষণ শুনছিলাম।
আকস্মিকভাবে গ্রেনেড হামলা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেন্টু ভাই প্রিয় নেত্রীকে রক্ষা করতে মঞ্চে উঠে নেত্রীকে জড়িয়ে রাখেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে ক্ষতবিক্ষত সেন্টু ভাইকে উদ্ধার করে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে বসে শরীর থেকে গ্রেনেডের স্প্রিন্টার বের করতে সেন্টু ভাইকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। ওইদিন রাত সাড়ে নয়টার দিকে সেন্টু ভাই মারা যান।
লিটনের মা-বাবার অসহায় জীবন
নিজস্ব সংবাদদাতা মাদারীপুর থেকে জানান, যুবলীগ নেতা লিটন মুন্সী। রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের উত্তর হোসেনপুর গ্রামের আইয়ুব আলী মুন্সীর ছেলে। ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নির্মমভাবে নিহত হন। লিটন মুন্সীর পরিবারে শোকের ছায়া এখনও কাটেনি। ১৮ বছর পার হলেও লিটনের বাবা-মায়ের ভাগ্যের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। লিটনের স্ত্রী মাফিয়া বেগম ৩ বছর পরই প্রবাসী এক যুবককে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন।
সরকারী সুযোগ-সুবিধা পেয়ে একমাত্র মেয়ে মিথিলা মোটামুটি ভালই আছে। লিটনের বাবা আইয়ুব আলী মুন্সী জানান, আমার ছেলের তো কোন দোষ ছিল না। আমার একমাত্র ছেলেকে কবরে শুইয়ে রেখে কিভাবে বেঁচে আছি বলতে পারেন? সরকারীভাবে ৫ লাখ টাকা পেয়েছিলাম। চিকিৎসা করতে সে টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন আমি মাসে ৩ হাজার টাকা করে সরকারী ভাতা পাই। এতে আমাদের সংসার চলে না। গ্রেনেড হামলায় নিহত সুফিয়া বেগমের বাড়ি রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের মহিষমারি গ্রামে। ওইদিন মহিলা নেত্রীদের সঙ্গে প্রথম সারিতেই ছিলেন সুফিয়া বেগম। চঞ্চলা ও উদ্যমী এই সুফিয়া সপরিবারে ঢাকায় থাকতেন। নিহত হবার পর তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
স্প্রিন্টার শরীরে নিয়ে বেঁচে আছেন নাজিম
নিজস্ব সংবাদদাতা ভৈরব থেকে জানান, গ্রেনেড হামলায় বেঁচে যাওয়া ভৈরবের যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান নাজিম বোমার স্প্রিন্টার শরীরে বহন করে যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন। ঘাতকদের গ্রেনেড নাজিমের একটি পা ও একটি হাত পঙ্গু করেছে। শেখ হাসিনা সেদিনের হামলায় আহতদের উন্নত ও সুচিকিৎসার জন্য ভারতের পিয়ারলেস হাসপাতালে পাঠান। আহত নাজিমুদ্দীনও ভারতে চিকিৎসা নেন। কিন্তু পুরোপুরি ভাল হননি। বোমার অসংখ্য স্প্রিন্টার শরীরে বহন করে বেঁচে আছেন তিনি।
নিহতদের স্মরণে চিত্রাঙ্কন
নিজস্ব সংবাদদাতা লক্ষ্মীপুর থেকে জানান, শোকাবহ ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা, সুন্দর হাতের লেখা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে শহরের টাউন হল মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘আমরা ক’জন মুজিব সেনা’ নামে একটি সংগঠন।
এতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন, আমরা ক’জন মুজিব সেনার প্রতিষ্ঠাতা সাবেক ছাত্রনেতা এ এফ জসীম উদ্দিন। কবি মুসতবা আল মামুনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সদস্য মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সহসভাপতি নাজমুল হুদা শিপন, লক্ষ্মীপুর বিএমএ জেলা শাখা সভাপতি ডাঃ আশফাকুর রহমান মামুন প্রমুখ।