সারাদেশ
অনলাইন জুয়ায় আসক্ত নাতি, টাকা না পেয়ে দাদিকে গলা কেটে হত্যা
টাকা চেয়ে না পেয়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে ষাটোর্ধ্ব দাদিকে গলা কেটে হত্যা করেছে নাতি অনিক হাসান হৃদয়। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার খেদমতপুর ইউনিয়নের বড় মজিদপুর ঘেগারতল গ্রামে।
সোমবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিসিয়াল আমলী ম্যাজিস্ট্রেট মন্তাজ আলীর আদালতে তোলা হলে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করেন উনিশ বছর বয়সী এই কিশোর।
নিহত আকলিমা বেগম ওই এলাকার মো আব্দুল হাকিম মিয়ার স্ত্রী। গত শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে তার গলাকাটা রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার বাড়ি থেকে পালিয়ে যান হৃদয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে গত রোববার সাভারের হেমায়েতপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
জানা গেছে, এ হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা প্রথমে কোনো ক্লু খুঁজে বের করতে পারেননি। তবে ঘটনার দিন সকালে নাতি অনিক হাসান হৃদয় সটকে পরায় তাকে ঘিরে সন্দেহ বাড়ে। ওই দিনই অজ্ঞাতনামা আসামি করে নিহতের ভাই রায়পুর ইউপির নখারপাড়ার ওবায়দুল হত্যা মামলা করেন।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটে। সকালে প্রতিবেশীরা ঘর থেকে রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
ঘটনার পর পীরগঞ্জ থানা পুলিশ ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জাহাঙ্গীর হোসেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকার সাভার এলাকা থেকে নিহতের নাতি অনিক হাসান হৃদয়কে গ্রেপ্তার করে। তিনি বড়ঘোলা গ্রামের রাশেদুল ইসলামের ছেলে। পরে গ্রেপ্তার হৃদয়ের তথ্যে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি সোমবার সকালে বড় মজিদপুরের রফিকুলের পরিত্যক্ত রাইস মিল থেকে উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, একই বাড়ি হলেও স্বামী আব্দুল হাকিম ও তার স্ত্রী আকলিমা বেগম আলাদা ঘরে রাত্রীযাপন করতো। শনিবার ভোর রাতের দিকে নিহতের স্বামী আব্দুল হাকিম প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ঘরের বাইরে এলে স্ত্রীর ঘরের দরজা খোলা দেখতে পায়। তিনি ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে গলাকাটা অবস্থায় স্ত্রীর নিথর দেহ খাটের ওপরে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করতে থাকেন। তার চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে। খবর পেয়ে দু’ছেলে রাশেদুল ও শাহিন ছুটে আসেন।
নিহতের দুই ছেলে রাশেদুল ও শাহিন জানান, ৮/১০ বছর আগে বড় মজিদপুরে পৃথক বাড়ি নির্মাণ করে বাবা-মা সেখানে বসবাস করেন। আমরা বাস্তুভিটা বড়ঘোলায় দুই ভাই বসবাস করি।
পীরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, আসামি হৃদয় শুক্রবার রাত ১টার দিকে ঢাকা থেকে হানিফ পরিবহনের বাসযোগে খেজমতপুরে নেমে পড়ে। রাতেই দাদা-দাদি গ্রামে আসে। দাদি আকলিমার সাথে রাতের খাবারের পর খোশগল্পের এক পর্যায়ে তর্কে জড়িয়ে পড়লে দাদিকে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে গ্রেপ্তার হৃদয়। জবানবন্দিতে হৃদয় তার দাদির কাছে ১০ হাজার টাকা চেয়েছিল। টাকা চেয়ে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ছুরিকাঘাতে দাদিকে হত্যা করে সে পালিয়ে যায়। এই কিশোর অনলাইন জুয়ায় আসক্ত বলেও জানান তিনি।