বরিশাল
ভারপ্রাপ্ততে আটকা বরিশাল যুবদল: কমিটির নেতৃত্বে আসা নিয়ে যুবাদের শঙ্কা
নিজস্ব প্রতিবেদক : কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে পাঁচ বছর আগেই। তার ওপর সভাপতি-সম্পাদক দুজনই ভারপ্রাপ্ত। এর মধ্যে কারও বালুমহাল-কাণ্ডে পদ স্থগিত, কেউ কেউ নিষ্ক্রিয়, এমনকি শীর্ষ পদের কেউ মারাও গেছেন। এভাবেই চলছে বরিশাল মহানগর ও জেলা যুবদলের কার্যক্রম। এ সময়ের মধ্যে যুবদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠনে উদ্যোগ না নেওয়ায় যেমন নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়নি, তেমনি নানা কারণে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছেন ভারপ্রাপ্তরাও।
এই পরিস্থিতিতে নতুন কমিটি দেওয়ার আলোচনায় পুরোনোরাই প্রাধান্য পাচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। সংগঠনটির অনেকে বলছেন, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, যুবদলের নেতৃত্বে যুবাদের আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল বরিশাল জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটি গঠিত হয়। ওই সময় মহানগর যুবদলের সভাপতি ছিলেন আক্তারুজ্জামান শামীম এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাসুদ হাসান মামুন। পরে শামীমকে অব্যাহতি দিয়ে মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় মাসুদ রাঢ়ীকে। তিনিও বালুমহাল কেলেঙ্কারিতে পদ হারান। ২০২০ সালে মহানগরের সম্পাদক সম্পাদক মামুন বহিষ্কৃত হলে মাজহারুল ইসলাম জাহানকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
জানতে চাইলে নগর যুবদলের সভাপতি প্রার্থী মাসুদ হাসান মামুন বলেন, শিগগির কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে নেতৃত্বে কারা আসবেন, তা সিদ্ধান্তের ভার কেন্দ্রের।
অপর সভাপতি প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম জাহান বলেন, তিনি আগে থেকেই শুনে আসছেন, কমিটি হবে। কেন্দ্রীয় সভাপতি লন্ডনে যাচ্ছেন। হয়তো দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মতি সাপেক্ষে দেশে ফিরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
যুবদলের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবদল একীভূত করে জেলা যুবদল গঠিত হচ্ছে। যে কারণে জেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বেড়েছে। তবে আগে যাঁরা পদে ছিলেন, তাঁদের শীর্ষ নেতৃত্বে রেখেই নতুন কমিটি করার তোড়জোড় চলছে এ মাসেই। এই পরিস্থিতিতে মহানগর যুবদলের সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আছেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি এ্যাড. রেজাউল করিম রনি, সাবেক ছাত্রনেতা আরিফুর রহমান মুন্না, সাবেক ছাত্রনেতা অহিদুল ইসলাম রুবেল, রিয়াজুর রহমান রিয়াজ, রফিকুল ইসলাম জনি প্রমুখ।
মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি এ্যাড. রেজাউল করিম রনি বলেন- দলের দুঃসময়ে ছাত্রদলের হাল ধরেছিলাম। বিগত দিনে বহু হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। দল যাকে যোগ্য মনে করবে তাকেই কমিটিতে স্থান দেবে।
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী অহিদুল ইসলাম রুবেল বলেন, ‘বয়সের কারণে বি এম কলেজ এবং মহানগর ছাত্রদল থেকে বাদ পড়েছি। ২০ বছর ধরে পদবিহীন অবস্থায় দলের কর্মী হিসেবে কাজ করছি। আমরা মনে করি, যুবদলে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হোক যুবদল কর্মীদের দিয়েই। শোনা যায়, বিএনপি নেতারা যুবদলে আসতে চান। এমনটা হলে দলের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
এদিকে ২০২১ সালে যুবদলের বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) শাখার সভাপতি হন পারভেজ আকন বিপ্লব এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন এইচ এম তসলিম উদ্দিন। ২০২১ সালে বিপ্লব মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন মামুন রেজা খান।
জানা গেছে, জেলা যুবদলের সভাপতি প্রার্থী হতে যাচ্ছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এইচ এম তছলিম উদ্দিন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন রেজা খান এবং উত্তরের সদস্য সচিব গোলাম মোর্শেদ মাসুদ।
এ প্রসঙ্গে যুবদল নেতা তছলিম উদ্দিন বলেন, কমিটি তো হওয়ার কথা ছিল। হয়তো সারা দেশের কয়েকটি ইউনিট নিয়ে একসঙ্গে কমিটি দেবে।
অপরদিকে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হচ্ছেন জেলা যুবদলের (উত্তর) যুগ্ম আহ্বায়ক কায়সার আহমেদ, জেলা দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ আহমেদ বাবলু এবং উত্তরের আহ্বায়ক সালাউদ্দিন পিপলু।
জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী কায়সার আহমেদ বলেন, ‘উত্তর ও দক্ষিণ যুবদল এক করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে কেন্দ্র। যে কারণে জেলা যুবদলের নেতৃত্বে আসা আমাদের অধিকার।’ তিনি বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। যে নেতারা টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সুবিধাবাদীতে ছিল, তারা যেন যুবদলের কমিটিতে না আসে। পুরোনো-নতুন মিলিয়ে কমিটি হোক। তা না হলে একচেটিয়া হয়ে দল দুর্বল হবে।’
নতুন কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, যুবদলের নতুন কমিটি গঠনের কথাবার্তা চলছে। শিগগির কমিটি প্রকাশ করবে কেন্দ্র। যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে নবীন এবং পুরোনোদের সমন্বয়ে যাতে কমিটি হয়, সে বিষয়ে আহ্বান জানাবেন।
যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রামের কারণে দীর্ঘদিন সাংগঠনিকভাবে যুবদলকে ঢেলে সাজানো সম্ভব হয়নি। যখনই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তখনই কোনো না কোনো কারণে দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে গেলে কাউন্সিলর পিছিয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতারা এরই মধ্যে বিভাগীয় শহরগুলোতে সাংগঠনিক সফর শুরু করেছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকনির্দেশনায় শিগগির সব জেলায় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে।