আগৈলঝাড়া
শরীরে ৪০০ স্প্লিন্টার, যন্ত্রণায় ঘুমাতে পারেন না জুলাই যোদ্ধা হাসান
ঢাকার বাড্ডায় ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ চলাকালে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত মো. হাসান সরদার (২১) এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। তাঁর শরীরে রয়ে গেছে প্রায় ৪০০ স্প্লিন্টার। দিনরাত তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন এই তরুণ। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই স্প্লিন্টার বাংলাদেশে অপসারণ করা সম্ভব নয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নিতে হবে। পরিবারটি এখন চরম সংকটে রয়েছে।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের পতিহার গ্রামের বাসিন্দা হাসান সরদার। তাঁর বাবা মৃত মানিক সরদার। তিন ভাইবোনের মধ্যে হাসান সবার বড়। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন তিনিই।
গত শনিবার বাড়িতে বসে নিজের অভিজ্ঞতা জানান হাসান। তিনি বলেন, ‘১৮ জুলাই ঢাকার রামপুরা ব্রিজ এলাকায় ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া গুলি প্রথমে পায়ে বিদ্ধ হয়। তখন ভয়ে হাসপাতালে যাইনি, একজন ডাক্তারের মাধ্যমে এক বাসায় বসে চিকিৎসা নিই। কিছুটা সুস্থ হয়ে ৫ আগস্ট আবার আন্দোলনে যাই।’
হাসান বলেন, ‘বাড্ডায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে আমার ডান হাতে, পাঁজরে ও মুখে অসংখ্য গুলি লাগে। রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয়রা প্রথমে আমাকে আফতাবনগরের নাগরিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে মৃত ভেবে ফেলে রাখা হয়। পরে মুগদা মেডিকেল, পঙ্গু হাসপাতাল, কুর্মিটোলা হয়ে আবার ৭ আগস্ট রাতে পুনরায় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হই। কয়েক দিন পরে আমাকে সাভার সিআরপিতে পাঠায় থেরাপি দেওয়ার জন্য। সেখানে থেরাপি শেষে আবার পঙ্গু হাসপাতালে চলে আসি। পঙ্গু হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরে একটু সুস্থ হই।’
হাসান আরও বলেন, ‘ডাক্তাররা জানিয়েছেন, আমার শরীরে প্রায় ৪০০ স্প্লিন্টার আছে। বাংলাদেশে এগুলো অপারেশন করে বের করা সম্ভব না। দিনে যেমন-তেমন, রাতে যন্ত্রণায় ঘুমাতে পারি না।’
হাসান জানান, তাঁর ছোট ভাই ও বোন কলেজে পড়ে। কিন্তু আর্থিক সংকটে তাদের লেখাপড়াও হুমকির মুখে পড়েছে। হাসান বলেন, ‘টাকার অভাবে কলেজের ফি দিতে পারি না। আমার ঘরে খাবার পর্যন্ত ছিল না। ধারদেনা করে চিকিৎসা করিয়েছি। এখন কেউ কোনো খোঁজ নেয় না।’
আগৈলঝাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিখন বণিক বলেন, ‘হাসান সরদার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি সরকারি তালিকাভুক্ত একজন আহত ব্যক্তি। উন্নত চিকিৎসার জন্য চলতি মাসেই তাঁকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে।’