লিড
বরিশাল বিএনপিতে পুনর্গঠনের সুর স্পষ্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল বিএনপিতে পুনর্গঠনের সুর স্পষ্ট। দলের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি পুনর্বিবেচনা ও মাঠপর্যায়ের সংগঠন শক্তিশালী করার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) শনিবার (২২ নভেম্বর) বরিশাল বিভাগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরীনসহ মোট ১০ নেতা-কর্মীর ওপর বহাল থাকা দলীয় স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভীর স্বাক্ষরিত দুইটি পৃথক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সংগঠনবিরোধী কর্মকা-ের অভিযোগে গত বছর ১১ আগস্ট বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরীনের সকল পদ স্থগিত করা হয়েছিল। পুনরায় মূল্যায়ন ও যাচাই-বাছাই শেষে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার ওপর বহাল থাকা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে তিনি আগের মতোই বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করবেন। এদিকে চলতি বছরের ৮ এপ্রিল এক পৃথক সিদ্ধান্তে বরিশাল উত্তর জেলা, মহানগর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের আরও নয়জন নেতা-কর্মীকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব সাংগঠনিক পদ থেকে স্থগিত করা হয়েছিল। শনিবার ঘোষিত নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই শেষে সেই স্থগিতাদেশও প্রত্যাহার করা হয়েছে। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হওয়া নেতারা হলেন ১. দেওয়ান মো. মনির হোসেন, সদস্য সচিব, হিজলা উপজেলা বিএনপি ২. মাহফুজ আলম মিঠু সভাপতি, বরিশাল জেলা ছাত্রদল ৩. নূর হোসেন সুজন সহ-সভাপতি, বরিশাল জেলা ছাত্রদল ৪. ইমরান খন্দকার সদস্য, বরিশাল জেলা ছাত্রদল ৫. মশিউর রহমান মঞ্জু আহ্বায়ক, বরিশাল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল ৬. মাসুদ রাড়ি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, বরিশাল মহানগর যুবদল ৭. কামরুল হাসান সদস্য সচিব, বরিশাল স্বেচ্ছাসেবক দল ৮. বেলায়েত হোসেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল দক্ষিণ জেলা যুবদল ৯. মো. জাহিদ সদস্য সচিব, ৩০ নং ওয়ার্ড যুবদল (বরিশাল মহানগর)।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, স্থগিতাদেশপ্রাপ্ত এসব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সংগঠনবিরোধী কর্মকা-, শৃঙ্খলাভঙ্গ ও অভ্যন্তরীণ বিরোধের অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ধাপে ধাপে গত বছর ও চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তাদের পদ স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা, আবেদন ও মাঠপর্যায়ের পুনর্মূল্যায়নের ভিত্তিতে মূল্যায়ন কমিটি তাদের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের সুপারিশ করে। দলটির দায়িত্বশীলরা মনে করছেন, পুনর্বহালের এ সিদ্ধান্ত বিএনপির অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং সাংগঠনিক শক্তি পুনর্গঠনের অংশ। বিশেষ করে সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে সংগঠনকে সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ রাখাকে দল এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। অভিজ্ঞ এবং মাঠপর্যায়ের সক্রিয় নেতাদের পুনর্বহাল হলে সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে এমনটাই আশা স্থানীয় নেতাদের। অনেক নেতা-কর্মী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
বরিশাল মহানগর ও জেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, “দীর্ঘদিনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হলো, এমন সিদ্ধান্ত মাঠের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে আসবে।” অন্যদিকে কিছু সমালোচক বলছেন, তদন্তের ঘাটতি বা রাজনৈতিক সমীকরণের কারণে এমন সিদ্ধান্ত এসেছে। তবে দলীয় সূত্রের দাবি “সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যাচাই-বাছাইয়ের পরেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।” দলের ভেতরে একধরনের পুনর্গঠনের সুর স্পষ্ট। বিশেষ করে ছাত্রদল-যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের একাধিক সক্রিয় নেতাকে পুনর্বহাল করায় বরিশালের মাঠপর্যায়ের সংগঠনগুলো নতুন করে গতি পাবে। বরিশাল বিএনপির রাজনীতিতে যে বিভাজন তৈরি হয়েছিল, তা কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেক পর্যবেক্ষক।



