সারাদেশ
বাড্ডায় তরুণ-তরুণীর মরদেহ : রহস্যের জট কাটেনি, রয়েছে ধর্ষণের আলামত
রাজধানীর উত্তর বাড্ডার পূর্বাঞ্চল ৩ নম্বর রোডের ২ নম্বর গলির একটি বাসার পরিত্যক্ত কক্ষ থেকে সাইফুল ইসলাম ও শাকিলা নামে দুই তরুণ-তরুণীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ দুটির সুরতহাল প্রতিবেদনে শাকিলাকে ধর্ষণ করা হয়ে থাকতে পারে এবং সাইফুল ইসলামের মৃত্যু শ্বাসরোধে হয়ে থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এখনো এ মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানিয়েছিল নিহতরা স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। কিন্তু সোমবার (৩ নভেম্বর) বাড্ডা থানা পুলিশ ও নিহত শাকিলার পরিবার জানিয়েছে, তারা স্বামী-স্ত্রী ছিলেন না। শাকিলা ও সাইফুল একই বাসায় কাজ করতেন। সাইফুল ওই বাসার দারোয়ান ও শাকিলা রান্নার কাজ করতেন। পুলিশ জানিয়েছে, বাসার মালিকও জানেন না তারা কীভাবে মারা গেলেন।
শাকিলার পরিবার বলছে, শাকিলা ১৮-১৯ বছর ধরে সেই বাসায় ছিলেন। পরিবারের দাবি, শাকিলার বিয়ে হয়নি এবং তাদের (শাকিলা-সাইফুল) মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবে পুলিশ দাবি করছে, তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাকিলার মরদেহে ধর্ষণের আলামত থাকতে পারে। অন্যদিকে সাইফুল ইসলামের গলায় বেগুনি রঙের দাগ পাওয়া গেছে। তার মৃত্যু শ্বাসরোধে হতে পারে।
সাইফুল ইসলামের সুরতহাল প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, তার মরদেহ ঠান্ডা অবস্থায় পাওয়া গেছে। গলার নিচের অংশে বেগুনি দাগ ও জিহ্বা সামান্য বাইরে বেরিয়ে রয়েছে। শরীরের অন্য কোথাও বড় ধরনের আঘাতের লক্ষণ পাওয়া যায়নি। এসব আলামতের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তার মৃত্যু শ্বাসরোধে হয়েছে।
শাকিলার সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, তাকে ধর্ষণ করা হতে পারে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি না নিশ্চিত হতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো দরকার।
মেয়ের মৃত্যু নিয়ে শাকিলার মা মনোয়ারা বেগম সোমবার (৩ নভেম্বর) বলেন, শাকিলার সঙ্গে আমার শনিবার (২৫ অক্টোবর) কথা হয়েছে। আমি তখন সিলেটে গ্রাম বাড়িতে ছিলাম। এরপর থেকে শাকিলার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। যে রুমে তাদের মরদেহ পাওয়া গেছে, সেটি বন্ধ ছিল। আমার মেয়ে ওই বাসায় ১৮-১৯ বছর ধরে ছিল। তার বিয়ে হয়নি, ওই ছেলের সঙ্গেও তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। কীভাবে ও কেন তাদের একই রুমে হত্যা করা হলো তা আমরা জানতে চাই।
তিনি জানান, শাকিলার বয়স ২৫ বছর ও সাইফুলের বয়স ২২ বছর। তিনি বলেন, আমরা গতকাল (রোববার) বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা করেছি।
মৃত্যুর রহস্য নিয়ে বাড্ডা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিম খলিল বলেন, সাইফুল ইসলাম ও শাকিলা স্বামী-স্ত্রী ছিলেন না। তবে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে আমরা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি। তারা গত ২৫ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। মৃত্যুর আসল কারণ এখনো জানা যায়নি। শাকিলার মা একটি হত্যা মামলা করেছেন। আমরা হত্যা হওয়ার দিকটি মাথায় রেখে কাজ করছি। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।
তিনি জানান, ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান জানান, শাকিলার মা একটি হত্যা মামলা করেছেন। আসামি অজ্ঞাত এবং এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা সব বিষয় মাথায় রেখে কাজ করছি।
এর আগে রোববার (২ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় উত্তর বাড্ডার পূর্বাঞ্চল ৩ নম্বর রোডের ২ নম্বর গলির একটি বাড়ির নিচ তলার পরিত্যক্ত কক্ষ থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা এদিন সকালে মরদেহের পচা গন্ধ পান এবং পুলিশকে খবর দেন। পরে অর্ধগলিত মরদেহ দুটি উদ্ধার করে পুলিশ।



