দশমিনা
করোনায় দীর্ঘ বন্ধের পর জোয়ার-ভাটা দেখে স্কুলের পথে
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ করোনায় দীর্ঘ বন্ধের পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার দুর্গম চরবোরহান ইউনিয়নে ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াতের সড়ক নেই। এতে বর্ষা মৌসুমে প্রায় দুই হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এসব বিদ্যালয়ে বর্ষা মৌসুমে তেঁতুলিয়া ও বুড়া গৌরাঙ্গ নদীর জোয়ার-ভাটা দেখে ক্লাস শুরু ও ছুটি হয়। সড়ক যোগাযোগ ও বেড়িবাঁধ না থাকায় বর্ষা মৌসুমে তিন-চার ফুট জোয়ারের পানিতে প্লাবনের সৃষ্টি হয় চরবোরহান ইউনিয়নে। জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকে বিদ্যালয়গুলো।
সংশ্নিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তেঁতুলিয়া ও বুড়া গৌরাঙ্গ নদীর কারণে দশমিনা উপজেলার সঙ্গে চরবোরহান ইউনিয়নের সরাসারি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
তেঁতুলিয়া নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা চরবোরহান ইউনিয়নে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। এ ছাড়া পুরো ইউনিয়নে স্থানীয় বাসিন্দাদের জমি ভাগবাটোয়ারার কারণে ছোট ছোট কয়েকটি আইল সড়ক তৈরি হলেও সেগুলো বর্ষা মৌসুমে পানির নিচে ডুবে থাকে।
বর্ষা মৌসুমে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে নৌকা অথবা কলাগাছের তৈরি ভেলা ব্যবহার করেন। এ কারণে ওই ইউনিয়নে কোনো শিক্ষক শিক্ষকতা করতে যেতে চান না।
চরবোরহান ইউনিয়নের ১২৫ নম্বর চরশাহজালাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে খেলাধুলা ও লেখাপড়ায় সেরা, কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের দুর্ভোগের অন্ত নেই এখানে।
বর্ষা মৌসুমে তেঁতুলিয়া নদীর জোয়ারের পানিতে বিদ্যালয়টি ডুবে থাকে আর ভাটায় জেগে ওঠে। বিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনো প্রকার সড়ক যোগাযোগ না থাকায় অধ্যয়নরত ১৫৬ শিক্ষার্থীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।
একই অবস্থা উত্তরপার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরবোরহান ২ নম্বর সীট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্যে চরবোরহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাগলা বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সেন্টার বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ চরবোরহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জাতীয়করণ করা ১ হাজার ৫০০ বিদ্যালয়ের তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এ ছাড়া সেন্টার বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবস্থাও একই রকম।
দক্ষিণ চরশাহজালাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন বলেন, চরবোরহান ইউনিয়ন থেকে দশমিনা উপজেলা সদরে যেতে নৌকাযোগে ৭-৮ ঘণ্টা ও ট্রলারযোগে ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগে বলে কোনো শিক্ষকই এখানে চাকরি করতে চান না।
দশমিনা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও ২২ নম্বর গুলি আউলিয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, চরবোরহানের বিদ্যালয়গুলোয় যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্মাণের জন্য অনেকবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনুরোধ করেছি; কিন্তু কোনো বিদ্যালয়েই যাতায়াতের সড়ক নির্মাণ করা হয়নি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়গুলোর যাতায়াত সমস্যার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করা হবে।
চরবোরহান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজির আহমেদ সরদার বলেন, কিছুদিন আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব চরবোরহান ইউনিয়ন সরেজমিন পরিদর্শনে এসেছিলেন। তার কাছে বিদ্যালয়গুলোর যাতায়াত সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল আমিন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ বা স্থানীয় বরাদ্দ দিয়ে ওই সড়কগুলো নির্মাণ করা সম্ভব নয়। তবে বিশেষ কোনো বরাদ্দ পাওয়া গেলে বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদা বলেন, চরবোরহান ইউনিয়নে চরশাহজালাল থেকে চরবোরহান পর্যন্ত পাকা সড়ক নির্মাণ করার জন্য সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই সড়ক নির্মাণ হলে বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে সংযোগ সড়ক স্থাপন করা হবে।