পটুয়াখালী
কনস্টেবল তৃষ্ণার ‘আত্মহত্যা’ নিয়ে সন্দেহ পরিবারের
পটুয়াখালীর কর্মস্থল থেকে মাকে ফোন করে যখন জানানো হয়, গলায় ফাঁস দিয়ে তৃষ্ণা ‘আত্মহত্যা’ করেছেন, এর আধা ঘণ্টা আগেও ওই নারী কনস্টেবল তার মামার কাছে ফোন দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘তাকে যেন অন্যত্র চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, তিনি এখানে আর থাকতে চান না।’ কেন তৃষ্ণা কর্মস্থল পটুয়াখালীর পুলিশ লাইন্স ব্যারাকে থাকতে চাননি, তা নিয়েই এখন সন্দেহ পরিবারের সদস্যদের।
পটুয়াখালী জেলা পুলিশের কনস্টেবল তৃষ্ণা বিশ্বাস থাকতেন জেলা পুলিশ লাইন্স ব্যারাকে। গত রোববার সকালে ব্যারাক থেকেই গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর পুলিশ বলে আসছে, মানসিক অসুস্থতায় ‘আত্মহত্যা’ করেছেন ওই নারী কনস্টেবল।
কিন্তু তৃষ্ণার আত্মহত্যার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না তার পরিবার। তৃষ্ণার বাবা কৃষ্ণ বিশ্বাস বলছেন, তার মেয়ে মৃত্যুর খবরের আধা ঘণ্টা আগেও মামার সঙ্গে কথা বলেছে। তাকে অন্যত্র চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে বলেছিল সে। কেন এটা বলল, তা নিয়েই তাদের সন্দেহ।
তিনি জানান, মেধাবী মেয়ে নিজের ইচ্ছাতেই পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি নিয়েছিল ২০২৩ সালে। চাকরিতেও মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। কিন্তু কয়েক মাস আগে থেকে আর পুলিশে চাকরি করতে চাচ্ছিল না। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকত। এজন্য তাকে মানসিক চিকিৎসকও দেখানো হয়; কিন্তু আত্মহত্যা করেছে, এটা তাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন তৃষ্ণার বাবা।
মা বীণা বিশ্বাস বলছিলেন, তৃষ্ণার মধ্যে একটা ভয় কাজ করত। এজন্য মাসখানেক আগে ওকে ঢাকায় নিয়ে মানসিক চিকিৎসক দেখানো হয়। এরপর সব ঠিকঠাকও ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কেন এমনটা হলো, তা বুঝতে পারছেন না। তিনি বলেন, তৃষ্ণা ছয় মাসের ছুটি চেয়েছিল; কিন্তু তা মেলেনি। এরপর থেকেই সে চাকরি ছাড়তে উদগ্রীব ছিল।
যদিও তৃষ্ণার ছয় মাসের ছুটির কোনো আবেদন নেই বলে পটুয়াখালী জেলা পুলিশ জানিয়েছে। তবে তৃষ্ণার মামা অনিক রুদ্র জানান, আরও-১ এর কাছে মৌখিকভাবে ছয় মাসের ছুটির কথা বলেছিল তার ভাগ্নি। কিন্তু চাকরির বয়স কম হওয়ায় টানা ছয় মাসের ছুটি সে পাবে না বলে জানানো হয়েছিল। এরপর বিনা বেতনে সে ছুটি নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কেন লম্বা ছুটি নিতে চাইছিলেন তৃষ্ণা? সেই প্রশ্নে মামা বলেন, কেন যেন পুলিশের চাকরিটা করতে চাইছিল না। অনেকটা হাঁফিয়ে উঠছিল সে। এজন্য পরিবারের সদস্যরাও চাইছিল ছুটি কাটিয়ে এলে মানসিক অবস্থার উন্নতি হবে। তা ছাড়া মাসখানেক আগে তৃষ্ণা নিজের ইচ্ছায় বিয়েও করেছিল। সামনে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছিল।
অনিক রুদ্র বলেন, তার ভাগ্নি সবার সঙ্গে কথা বলত। আত্মহত্যা করার কোনো কারণ ছিল না। সে যে আত্মহত্যা করেছে, তা তদন্ত শেষ হওয়ার আগে তারা বিশ্বাস করতে চান না।
তৃষ্ণার আরেক স্বজন বলেন, এক মাস আগে তৃষ্ণা তার এক ব্যাচমেট সহকর্মীকে বিয়ে করেছিলেন। তারা আদালতে গিয়ে বিয়ে করলেও তা দুই পরিবারই মেনে নেয়। বরের বড় ভাইয়ের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে তৃষ্ণার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হওয়ার কথা ছিল। এর আগেই সে চলে গেল না ফেরার দেশে।
ওই স্বজন জানান, তৃষ্ণার বরের সঙ্গে তার কোনো ঝামেলা ছিল না। লাশের সঙ্গে ওই বরও গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের ডাসারে এসেছিলেন। আত্মহত্যা করতে পারে, এমন কারণ তৃষ্ণার বরও খুঁজে পাচ্ছে না বলে তাদের জানিয়েছেন।
পটুয়াখালী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সাজেদুল ইসলাম সজল বলেন, ‘প্রাথমিক আলামতে তারা মনে করছেন, কনস্টেবল তৃষ্ণা আত্মহত্যা করেছেন। কারণ মাসখানেক আগে তিনি মানসিক চিকিৎসা নিয়েছিলেন। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রেই লেখা ছিল, তৃষ্ণার ভেতর আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে।’
তিনি বলেন, যদিও তৃষ্ণা তার এই সমস্যার কথা পুলিশের কাছে লুকিয়েছিলেন। চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিলেও তা তিনি করেননি। তৃষ্ণা ছয় মাসের ছুটি চেয়েছিলেন জানালে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ছুটির আবেদনপত্র নেই। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রসহ ছুটি চাইলে না দেওয়ার কোনো কারণও নেই।
জেলা পুলিশের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক আলামতে কারণ আত্মহত্যাজনিত হলেও অধিকতর তদন্তের জন্য একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের কমিটি কাজ করছে। পাশাপাশি অপমৃত্যুর মামলার তদন্ত ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সবকিছুই পরিষ্কার হবে।