সারাদেশ
যশোরে মাহফিলে খোয়া গেছে ৫ শতাধিক মোবাইল-স্বর্ণালঙ্কার, থানায় মানুষের দীর্ঘ লাইন
যশোরের পুলেরহাট এলাকায় আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মাঠে আয়োজিত তিন দিনের তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে অন্তত পাঁচ শতাধিক লোকজন মোবাইল হারিয়েছেন। একইসঙ্গে কয়েকজন স্বর্ণালঙ্কার খুইয়েছেন। গত বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাতে মাহফিল চলাকালে শহরের পুলেরহাট এলাকায় আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশের এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এখন থানায় দীর্ঘ লাইন ধরে জিডি করছেন ভুক্তভোগীরা।
যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশ জানিয়েছে, গত তিন দিনে মাহফিলে অন্তত পাঁচ শতাধিক লোকজন মোবাইল হারিয়েছেন মর্মে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এর মধ্যে শুধু শনিবার ১৩৫ জন জিডি করেছেন। এখনও ভুক্তভোগীরা যেভাবে জিডি করতে থানায় আসছেন, এতে সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মাঠে তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। রাতে বয়ান করেন বিশিষ্ট ইসলামি বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী। তার আসার খবরে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামে মাহফিল এলাকায়। শুক্রবার সকালে থেকে শীত উপেক্ষা করে মানুষজন জমায়েত হতে শুরু করেন। বিকাল থেকে মাহফিল স্থান ছাড়িয়ে সড়ক, মহাসড়কে নারী, শিশু ও পুরুষের ঢল নামে। মাহফিল প্রাঙ্গণে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। এদিন সন্ধ্যায় আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বয়ান করেন। রাতে আজহারী বয়ান করেন।
পুলিশ জানায়, মাহফিল শুরুর দিন সন্ধ্যা থেকে মোবাইল হারানোর ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় জিডি করতে আসতে থাকেন লোকজন। গত তিন দিনে পাঁচ শতাধিক মানুষ মোবাইল হারানোর বিষয়ে জিডি করেছেন।
কোতোয়ালি থানার ডিউটি অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যা থেকেই লোকজন জিডি করতে আসা শুরু করেন। তাৎক্ষণিকভাবে যারা মোবাইল কিংবা সিমের কাগজপত্র দেখাতে পেরেছেন তারা জিডি করেছেন। অনেকে কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তাদের ফেরত পাঠিয়েছি আমরা।’
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘তিন দিনের মাহফিলে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়েছিল। এর মধ্যে অনেকের মোবাইল ফোন, স্বর্ণের গয়নাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হারানো গেছে। অনেকে জিডি করেছেন। এগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।’
কতজন জিডি করেছেন জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘শুধুমাত্র শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১৩৫ জন জিডি করেছেন। গত তিন দিনে মোবাইল ও স্বর্ণের গয়না হারানোর জিডি করেছেন পাঁচ শতাধিক লোকজন। জিডি করতে আসা মানুষের ভিড় এখনও রয়েছে। যেভাবে লোকজন আসছেন, জিডির সংখ্যা আরও বাড়বে।’
শনিবার দুপুরে থানায় জিডি করতে আসেন যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া এলাকার ইব্রাহীম হোসেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুক্রবার রাতে মাহফিলের মহিলা প্যান্ডেলে বসে আজহারী হুজুরের ওয়াজ শোনার সময় আমার মায়ের গলা থেকে দেড় ভরি ওজনের একটি সোনার গয়না চুরি হয়ে যায়। একই স্থান থেকে আমার স্ত্রীর গলার চেইন হারিয়ে যায়। দুটি ঘটনায় থানায় জিডি করতে এসেছি।’
শহরের নওয়াপাড়া এলাকার মুর্শিদুল আজিম বলেন, ‘শুক্রবার রাতে মাহফিল শেষে বের হওয়ার সময় আমার একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন চুরি হয়ে গিয়েছিল। এজন্য জিডি করেছি। মাহফিলে প্রচুর লোক সমাগম হয়েছে। চোরেরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। আয়োজকদের এ ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’
শহরের বেজপাড়া এলাকার এনামুল হক বলেন, ‘কয়েক হাজার মানুষ মোবাইল হারিয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে জিডি করেছেন। আবার অনেকে কাগজপত্র দেখাতে না পারায় জিডি না করেই বাড়ি চলে গেছেন।’
প্রসঙ্গত, গত বুধবার থেকে তিন দিনব্যাপী এই মাহফিল শুরু হয়। মাহফিলের প্রথম দিন আলোচনা করেন আল্লামা মামুনুল হক ও আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন আলোচনা করেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী ও মুফতি আমির হাজমা। শেষদিন শুক্রবার আলোচনা করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ও ড. মিজানুর রহমান আজহারী।