বরিশাল
শেবাচিম হাসপাতালে দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শান্ত!
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী শাহাদাত হোসেন ওরফে শান্ত। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আলোচনায় আসলেও রয়েছেন বহাল তবিয়তে। সম্প্রতি হাসাপাতাল এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিশাল দালাল সিন্ডিকেট। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল নিয়ন্ত্রণ, ট্রলিম্যান ও বেড ভাড়ার সঙ্গে জড়িত সকল দালাল তার অধিনে থেকে কাজ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি ছাড়াও তার সিন্ডিকেটে হাসাপাতালের বেশ কয়েকজন কর্মচারী জড়িত রয়েছেন।
বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুর ২ টার দিকে শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা হারুন নামের হেলথ্ এইড মেডিকেল সার্ভিসের এক দালালকে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তার দেয়া তথ্যনুয়ায়ী সন্ধ্যার পরে হাসপাতালের সামনে যায় অনুসন্ধানী টিম। সেখানে গিয়ে দেখা যায়- শাহাদাত হোসেন ওরফে শান্ত স্লিপের মাধ্যমে প্রায় ২০ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে টাকা উত্তোলন করছে। এ সময় তার সাথে ছিলেন আউটসোর্সিং এ কর্মরত এক নারী কর্মচারী। সাইন্স ডায়াগনস্টিক ল্যাব থেকে বের হওয়ার পর শান্তর সাথে কথা বলার চেষ্ঠা করেন সংবাদকর্মীরা। তখন সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা না বলেই মোটরসাইকেল চালিয়ে পালিয়ে যান শান্ত। এ সময় সংবাদকর্মীদের ক্যামেরার সামনে পড়েন ওই নারী কর্মচারী।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন- আপনারা শান্ত ভাইয়ের সাথে কথা বলেন। আমার সাথে কথা বইলেন না, আমার ভয় লাগে। আমি কিছু করি নাই। আমাকে মাফ করে দেন।
জানা গেছে- এরআগের শাহাদাত হোসেন ওরফে শান্ত নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আলোচনায় এসেছেন। যা পরবর্তীতে পর্বে বিস্তারিত জানানো হবে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে- বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে বিশাল দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন শাহাদাত হোসেন ওরফে শান্ত। ডায়াগনস্টিক ও ফার্মেসিগুলোর সঙ্গে সিন্ডিকেট করে দৈনিক এ হাসপাতালে আন্ত ও বহির্বিভাগের ছয় থেকে সাত শতাধিক রোগীর সঙ্গে চলছে প্রতারণা। আর দৈনিক এ সিন্ডিকেট লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা গরিব অসহায় রোগীদের কাছ থেকে। শুধু ডায়াগনস্টিক ও ফার্মেসি থেকে নয় ট্রলিম্যান, বেড ভাড়াসহ আরো বিভিন্ন খাত থেকে টাকা উত্তোলন করেন তিনি।
শাহাদাত হোসেন ওরফে শান্ত বরিশাল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক। ৫ আগষ্টের পর তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এ দালাল চক্রকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে কাজ করে তিন শ্রেণির দালালচক্র। একটি চক্রের কাজই হচ্ছে রোগী দেখা মাত্র হুমড়ি খেয়ে পড়া। সরকারি হাসপাতালের নানান অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কথা বলে বেসরকারি ক্লিনিকে রোগী নিয়ে যাওয়া। আরেকটি চক্রের কাজ হচ্ছে বহির্বিভাগের ডাক্তারদের রুমের সামনে অবস্থান নেওয়া অর্থাৎ ডাক্তার দেখিয়ে রোগী বের হওয়া মাত্র ব্যবস্থাপত্র নেওয়া এবং তাতে কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিচ্ছে তা দেখে রোগীকে কম খরচে করিয়ে দেবে বলে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া। ঐ ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে বড় মাপের একটা কমিশন পায় এ দালালচক্র। আরেকটি দালাল চক্র রয়েছে, যারা হাসপাতালে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তারা আয়া ও ওয়ার্ডবয় হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তারা তাদের নির্দিষ্ট কাজ বাদ দিয়ে বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে অবস্থান নিয়ে রোগীদের যে কোনো ওষুধের জন্য তারা নিয়ে যায় তাদের নির্ধারিত ফার্মেসিতে। সেখান থেকে ওষুধ নিয়ে দেয় রোগীকে। রোগী যদি টাকার কথা বলে তখন এ দালাল বলে সব টাকা দিয়েন একসঙ্গে। এতে করে রোগী বাকিতে ওষুধ আনার সুযোগ পায়। এতে অনেক রোগী বুঝতেই পারে না তাদেরকে নিম্নমানের ওষুধ ও অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এদের সকলকেই নিয়ন্ত্রণ করেন শাহাদাত হোসেন ওরফে শান্ত।
এ বিষয়ে শাহাদাত হোসেন ওরফে শান্তর মুঠোফোনে কল দিলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করলেও কিছুক্ষন পর তিনি ছুটে এসে প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। এবং অকপটে নিজের দোষ স্বীকার করেন।
সরকারি চাকরি করে দলীয় পদের থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন- অনেকেই রয়েছে, সরকারি চাকরি করেও দলীয় পদে রয়েছে। আমি থাকলে দোষ কি?