তালতলী
আ.লীগের কমিটিতে পদ-পদবী পেয়েছেন বিএনপির নেতারা!
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরগুনার বেতাগীতে সকল ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের কমিটি না করেই তড়িঘড়ি করে করা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন।
১১ বছর পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গত ২৭ সেপ্টেম্বর, যেখানে শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ দুটি পদ উল্লেখ করে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। পদ হারিয়েছেন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের তৃণমূলের ত্যাগী নেতারা।
এ সকল কমিটিতে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান রিমনের বিরুদ্ধে। এছাড়াও ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে যে সকল কমিটি গঠন করা হয়েছে সেখানেও পদ পদবঅ পেয়েছেন বিতর্কিতরা।
এমনকি বিএনপির সাবেক ও বর্তমান নেতাদেরকেও দেয়া হয়েছে সভাপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ পদবী। এসব অভিযোগ বেতাগী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।
জানা যায়, উপজেলার সরিষামুড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিসহ সাতটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড গুলোতে একটিতেও পূর্ণাঙ্গভাবে কমিটি ঘোষণা দেয়নি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ।তবে এর মধ্যে শেষও হয়েছে উপজেলার সকল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন।
গত ১৮ই এপ্রিল শুরু হয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন যা ৫ সেপ্টেম্বর বেতাগী পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন দিয়ে শেষ হয়।যে কমিটির কাগজ প্রকাশ পায় ২৪ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে।
তবে ওই প্রকাশিত কমিটির কাগজে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করেছেন গত ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে।
এর সাথে সাথে বেতাগী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ হয় গত ২৭ সেপ্টেম্বর যেখানে সাবেক সভাপতি এবিএম গোলাম কবির ও সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান ফোরকাকে পূণরায় বহল রেখে আংশিক কমিটি ঘোষণা দেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দুদিন আগে তড়িঘরি করে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নের কমিটি ঘোষণা করে আবারও আলোচনায় আসে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা।
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।কেউ কেউ বলছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের খরচ জোগাতেই বিতর্কিত ও বিএনপির সাবেক এবং বর্তমান নেতাদেরকে পদ পদবী দেয়া হয়েছে।
এর আগেও বেতাগী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক(সাবেক) ও ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম পিন্টুর একটি বক্তব্য সারাদেশ ব্যাপী ভাইরাল হয়। যেখানে স্বচ্ছতার সাথে তিনি বলেছিলেন, বেতাগী উপজেলা আওয়ামী লীগ উপজেলা ৭২টি ওয়ার্ড থেকে কমপক্ষে ৭২ লাখ টাকার পদ বাণিজ্য করেছেন।
এদিকে উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে আব্দুর রাজ্জাক মাস্টারকে। যিনি ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। যেখানে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল নৌকার বিদ্রোহীরা আওয়ামী লীগের পদ পাবে না।
এছাড়াও ২নং সদর ইউনিয়ন কমিটিতে সভাপতি করা হয় মুরাদ খলিফাকে। যার পরিবারসহ সবাই বিএনপির রাজনীতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। হোসনাবাদ ইউনিয়নের কমিটিতেও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কাজী শাহ আলমকে করা হয়েছে সাধারণ সম্পাদক।
উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগেরসহ সভাপতি পদে বর্তমান বিএনপি নেতাদের নাম দেখা যায়। যারা এখনো বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী করেনি। তারা হলেন – মির্জা আনোয়ার হোসেন পাশা ও নজরুল ইসলাম শিকদার।
ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের অভিযোগ, সম্মেলনে নিজেদের পদ রক্ষা করার জন্য তড়িঘড়ি করে কমিটি দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা যেখানে ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
হোসনাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন,‘বেতাগী উপজেলার ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনে সম্পূর্ণ হস্তক্ষেপ ছিল সংসদ সদস্য রিমনের।তিনি সংশ্লিষ্ট নেতাদের দিয়ে তার ইচ্ছেমতো কমিটি করিয়েছেন। যেখানে পদ হারিয়েছেন ত্যাগী নেতারা।
এমনকি হোসানাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনে তার সব থেকে বেশি হস্তক্ষেপ ছিল। যেখানে সভাপতি পদপ্রার্থীকে সাধরণ সম্পাদক করেছেন।
আমাকেও ভাইটাল পদ থেকে বিতড়িত করেছেন। আমার অপরাধ ছিল আমার নিজস্ব আওয়ামী লীগের অফিসের ওয়ালে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা সুভাষ চন্দ্র হাওলাদারের উপহারের (বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর টাইলসে খোদাই করা) ছবি লাগিয়েছি। এক কথায় বরগুনা-২ আসনের সব স্থানে এমপি রিমনের এক আলাদা রাজত্ব চলে।
বেতাগী সদর ইউনয়নের সাবেক সভাপতি মো. লুৎফর রহমান স্বপন জানান,‘ ১১ বছর পর কমিটি হয়েছে তাও আবার শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুটি পদ ঘোষণার মাধ্যমে। গঠনতান্ত্রিকভাবে কিছুই হয়নি।’
এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র এবিএম গোলাম কবির বলেন,‘যাদের বিরুদ্ধে বিএনপির রাজনীতি কারার পরও পদ পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে তারা সবাই আজ থেকে আট বছর পূর্বেই আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন এবং সকল নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন।
আর ওয়ার্ডের কমিটির ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন মন্তব্য নেই এটি সম্পূর্ণ তাদের ব্যাপার।যে সকল কমিটি করা হয়েছে তা সিনিয়র নেতাদের সাথে আলোচনা করে করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে আরো জানতে মোবাইল ফোনে কল করা হলেও বার বার ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ব্যস্ততা দেখান বরগুনা ২ আসনের সাংসদ রিমন।