সারাদেশ
আবাসিক হোটেলে নিয়ে স্ত্রীকে হত্যা, সন্তানের মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেললো নদীতে
বগুড়ায় ঈদের শপিং করে দেওয়ার কথা বলে স্ত্রী-সন্তানকে আবাসিক হোটেলে নিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে আজিজুল হক (২৩) নামে এক সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে। নিহতরা হলেন- অভিযুক্তের স্ত্রী আশা মনি (২২) ও ১১ মাস বয়সী ছেলে আবদুল্লাহ আল রাফি। শিশুটির মাথা বিচ্ছিন্ন করে করতোয়া নদীতে ফেলার অভিযোগও রয়েছে।
শনিবার (১ জুন) রাতের কোনও একসময় শাজাহানপুর উপজেলার বনানী স্ট্যান্ড এলাকায় শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলের তৃতীয় তলায় ৩০১ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। রবিবার বেলা ১১টার এ বিষয়টি টের পেয়ে অভিযুক্ত আজিজুল হককে আটক করে পুলিশে দেন হোটেল ম্যানেজার।
শাজাহানপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, আশা মনির পরিবার দাবি করছে, যৌতুক না পেয়ে তাকে হত্যা করেছে। আবার সৈনিক আজিজুল হক দাবি করে, আরেকজনের সঙ্গে প্রেমে জড়ানোর কারণে স্ত্রী ও সন্তানকে গলাকেটে হত্যা করেছে। এরপর ছেলের মাথা বিচ্ছিন্ন করে শহরের ফতেহ আলী রেল ব্রিজের কাছে করতোয়া নদীতে ফেলে দিয়েছে। বিকালে এ খবর পাঠানোর সময় সিআইডির বিশেষজ্ঞ দল লাশ দুটি উদ্ধার করছিল। আশা মনির রক্তাক্ত লাশ বাথরুমে উপুড় হয়ে পড়েছিল। আর খাটের নিচে বস্তায় শিশুর মাথাবিহীন লাশ ছিল। পাশাপাশি অভিযুক্তকে সঙ্গে নিয়ে নদী থেকে শিশুটির মাথা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ ও স্বজনরা জানান, আজিজুল হক বগুড়ার ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের হেউটনগর গ্রামের হামিদুর রহমানের ছেলে। প্রায় তিন বছর আগে বগুড়া শহরের নারুলী তালপট্টির আশাদুল ইসলামের মেয়ে আশা মনিকে বিয়ে করে। আজিজুল হক ১৮ বীর চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সৈনিক হিসেবে কর্মরত। সেনাবাহিনীর চাকরিবিধি অনুসারে আজিজুলের বিয়ের বয়স না হওয়ায় স্ত্রী আশা মনি ধুনটের বাড়িতে থাকতেন। মাঝে মাঝে শহরের নারুলী এলাকায় বাবার বাড়িতে আসতেন।
আশা মনির ভাই মেহেদী হাসান, মামা অয়েন আলী জানান, আজিজুল হক প্রায় দুই মাস আগে ছুটিতে ধুনটের নিজ বাড়িতে আসে। গত বৃহস্পতিবার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বগুড়া শহরের নারুলী তালপট্টি এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে আসে। ঈদের কেনাকাটা ও বেড়ানোর নামে শনিবার বিকালে তারা বাড়ি থেকে বের হয়। আজিজুল হক রাত ১০টার দিকে ফোনে শ্বশুর আশাদুলকে জানায়, শরীর খারাপ লাগায় স্ত্রী-সন্তানকে বাড়িতে পাঠিয়ে তিনি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল। পরে জানতে পারে, আশা মনি বাড়িতে যায়নি। এরপর শনিবার সারা রাত তাকে খোঁজা হয়। ফেসবুকে ছবিসহ তার নিখোঁজ সংবাদও দেওয়া হয়েছিল।
শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম জানান, শনিবার সন্ধ্যার পর সেনাসদস্য আজিজুল হক তার স্ত্রী আশা মনি ও শিশু সন্তান রাফিকে নিয়ে রাত যাপনের জন্য আসে। তাদের তৃতীয় তলায় ৩০১ নম্বর শীতাতপ রুম দেওয়া হয়। রাত ১১টার দিকে সৈনিক আজিজুল হক হোটেল থেকে বের হয়ে যায়। শনিবার বেলা ১১টার দিকে রুমের ভাড়া পরিশোধ করতে আসে। সঙ্গে স্ত্রী ও ছেলে না থাকায় সন্দেহ হয়। এরপর তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে রুমের ভেতরে বাথরুমে স্ত্রীর গলাকাটা বিবস্ত্র লাশ এবং খাটের নিচে ছেলের মস্তকবিহীন বস্তাবন্দি লাশ পায়। রুমে হত্যায় ব্যবহৃত একটি চাকু ও একটি চাপাতি পাওয়া গেছে।
আশা মনির বাবা, মা, ভাই, বোন ও স্বজনরা জানান, হত্যাকাণ্ডের পর আজিজুল হক ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে জানায়, আশা মনিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর আগে সে শিশু রাফির বিচ্ছিন্ন মস্তক করতোয়া রেলসেতুর কাছে নদীতে নিক্ষেপ করে।
শাজাহানপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ ও অন্যরা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সৈনিক আজিজুল হক স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। অভিযুক্তের দাবি, তার অবর্তমানে স্ত্রী আশা মনি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ ক্ষোভ থেকে তিনি স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করেছে। শিশুর খণ্ডিত মাথা নদীতে ফেলে দিয়েছে। বিকালে এ খবর পাঠানোর সময় সিআইডির বিশেষজ্ঞ দল হোটেলের কক্ষ থেকে মা ও সন্তানের লাশ উদ্ধার করছিল। এ ছাড়া পুলিশ সৈনিক আজিজুল হককে সাথে নিয়ে শিশুর খণ্ডিত মস্তক উদ্ধারে করতোয়া নদীতে তল্লাশি চালাচ্ছে। মামলা হলে সৈনিক আজিজুল হককে গ্রেফতার করা হবে।
স্বজনরা হোটেলে আহাজারি ও ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছিলেন। জোড়া খুনের খবর পেয়ে শত শত নারী পুরুষ আবাসিক হোটেলের সামনে ভিড় করেন। তাদের অনেকে বলছিলেন, বনানী এলাকার শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলে দম্পতিরা বেশি আসেন। হোটেলের কর্মচারীরা কক্ষের দরজায় ছিদ্র করে ছবি তুলে তাদের কাছে টাকা হাতিয়ে নিয়ে থাকেন।
নিহত আশা মনির বাবা আশাদুল হক জানান, বিয়ের সময় জামাইকে যৌতুকের ছয় লাখের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি এক লাখ টাকা না দেওয়ায় দাম্পত্য কলহের জেরে আজিজুল হক তার মেয়ে ও নাতিকে নৃশংসভাবে গলাকেটে হত্যা করেছে। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
তবে এই বিষয়ে আজিজুল হকের বাবা হামিদুর রহমান কোনও মন্তব্য করেননি।