চরমোনাইর হেলাল মেম্বরের বিরুদ্ধে ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২০:৪৭, সেপ্টেম্বর ০৬ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নে নবম শ্রেনীর এক স্কুল ছাত্রীকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্য হেলালের বিরুদ্ধে। বোতলের ফলের জুসের সাথে ঘুমের ওষুধ মিলিয়ে খাওয়ানো হয় শেফালি নামে এক স্কুল ছাত্রীকে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, চরমোনাই ইউনিয়নের ডিঙ্গামানিক গ্রামের চাপিলাদি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালেয়র নবম শ্রেনীর ছাত্রী শেফালি। স্কুলে আসা যাওয়ার পথে একই গ্রামের ইউপি সদস্য হেলাল প্রায়ই তাকে উত্যক্ত করত। ঘটনার দিন গত ১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রিয়াজ নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ত্রানের নাম করে কিছু চাউল, কেক, চিড়া ও বোতলের জুসে ঘুমের ওষুধ মিলিয়ে শেফালির বাসায় পাঠায় ইউপি সদস্য হেলাল। ফলের জুস খেয়ে হঠাৎ করে জ্ঞানহীন হয়ে পড়ে শেফালি ও তার মা। কিছুক্ষন পর শেফালির মা সুফিয়া বেগমের জ্ঞান ফিরলে বিষয়টি তিনি প্রতিবেশী বাড়ির মালিককে জানান। এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে মেম্বার হেলাল ঐ দিনই গভীর রাতে শেফালিকে তার বাসায় নিয়ে যায়। পরদিন সকালে জ্ঞান ফিরলে রক্ত বমি শুরু করে শেফালি। অবস্থা বেগতিক দেখে তাজেল নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে শেবাচিম মেডিকেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শেবাচিমের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানায়, অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবনে শরীরে বিষ ক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ডাক্তারকে সত্যি না বলার জন্য শেফালিকে আগেই হুমকি দিয়েছিলেন হেলাল মেম্বার। তাই ভয়তে সত্য গোপন করা হয়েছে বলে জানান শেফালি। অভিযোগের ব্যাপারে শেফালি আরো বলেন, রিয়াজ ও হেলাল মেম্বার ষড়যন্ত্র করে আমাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ধর্ষন করতে চেয়েছিল। আমি তাদের শাস্তির জন্য আইনের আশ্রয় নিয়েছি। এদিকে ঘটনার পাঁচদিন পর আজ রবিবার ৬ সেপ্টেম্বর কোতয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দিলে অধিকতর তদন্তের জন্য অভিযোগটি লিখিতভাবে গ্রহন করা হয়। অভিযোগের ব্যাপারে কোতয়ালি মডেল থানার এসআই আশুতোষ বলেন, ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষনিক আমি সরজমিনে ঘটনাস্থলে যাই এবং ঘটনার সাথে রিয়াজ নামক এক ব্যক্তির সম্পৃকত্তা পাই। তিনি শেফালির বাড়ির পাশের খালে ভেসাল জাল পেতে মাছ ধরার কাজ করেন। তাই তাদের ঘরে প্রায়ই আসা-যাওয়া করত। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঘটনার দিন গত ১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ত্রান বরাদ্দ পেয়েছে বলে কিছু চাউল, কেক, চিড়া ও বোতলের জুসে ঘুমের ওষুধ মিলিয়ে শেফালি ঘরে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে জুস খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে শেফালির মা সুফিয়া বেগম বিষয়টি প্রতিবেশী বাড়ির মালিককে অবগত করেন। পরে বাড়ির মালিক ইউপি সদস্য হেলালকে বিষয়টি জানান। তবে এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য হেলাল জড়িত রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আরো অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন এখনই বলা যাচ্ছে না তিনি দোষী না নির্দোষ। এদিকে বিষয়টি এলাকাবাসীর মধ্যে চাউর হইলে শালিসির নামে লোক দেখানো বিচারের ব্যবস্থা করে রিয়াজকে দোষী করে চড় থাপ্পর দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযুক্ত রিয়াজের ০১৯২৬৬৫৩৪২০ মোবাইল নাম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য হেলাল বলেন, আমি শেফালি নামে ওই মেয়েকে চিনিনা এমনকি তাকে কোনদিন দেখিনি। আমার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয়-প্রতিপন্ন করার জন্য শেফালিকে দিয়ে মিথ্যা কথা বলিয়েছে। ঘটনাটি জানার পর আপনি পুলিশের সহযোগিতা না নিয়ে মেয়েটিকে কেন শেবাচিমে নিয়ে গেলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তার অবস্থা ভাল ছিল না, বমি করতে ছিল তাই মানবিকতার কথা চিন্তা করে চিকিৎসার জন্য শেবাচিমে পাঠিয়েছি। এলাকাবাসীর বিপদে সাহায্য করাই আমার নৈতিক দায়িত্ব কারন আমি একজন জনপ্রতিনিধি। এ ব্যাপারে চরমোনাই ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি তবে স্থানীয়রা বিচার-শালিস করে অভিযুক্ত রিয়াজকে শাস্তি দিয়েছে। অপরদিকে, মেয়েটিকেও বিচারে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইউপি সদস্য হেলাল আমার কাছে এসেছিল তাকে মিথ্যা অভিযুক্ত করে হয়রানি করা হচ্ছে। আমি হেলালকে ঘটনাটি থানায় জানাতে বলেছি। তিনি আরো বলেন, ইউপি সদস্য হেলাল কখনোই এ ধরনের কাজ করতে পারে না। তাকে ফাঁসাতে তার প্রতিপক্ষ ষড়যন্ত্র করছে।