সাগরের ইলিশে ভরপুর বরিশালের মোকাম

দেশ জনপদ ডেস্ক | ০০:১২, সেপ্টেম্বর ০৬ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ হঠাৎ করেই বরিশাল নগরীর পোর্টরোড মোকামে বেড়ে গেছে ইলিশের আমদানী। সাগর থেকে ট্রলার ভরে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। সেই সাথে কমে গেছে ইলিশের দামও। মাত্র এক দিনে মণ প্রতি ইলিশের দাম কমেছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এর ফলে হাসি ফুটেছে ক্রেতাদের মুখে। নদ-নদীতে ইলিশের দেখা নেই, যা আসছে সবই সাগর থেকে। জেলেরা জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার আপাতত আবসান ও টানা ৬৫ দিন আহরণে নিষেধাজ্ঞা থাকার পর সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। তবে মোকামে ইলিশের আমদানী বাড়লেও হাসি নেই বিক্রেতা অর্থাৎ আড়তদারদের মুখে। এক দিকে বিদেশে রফতানী বন্ধ অন্য দিকে ক্রেতা সংকট। তাই মোকামের ইলিশ পঁচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন আড়তদাররা। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশে রফতানীতে দেয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা। যদিও মৎস্য অধিদপ্তর ইলিশ রপ্তানির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে। বলছে- বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন। ইলিশে ভরপুর থাকলেই রপ্তানি করতে হবে এমন কোন ভাবনা আপাতত সরকারের ভেতরে নেই। তবুও গুঞ্জন চলছে, রপ্তানির প্রসঙ্গ নিয়ে। এদিকে ভোলার জেলার নিম্নাঞ্চলে অর্থাৎ সাগর কাছাকাছি গভীর মেঘনায় ইলিশের কিছুটা আলামত পাওয়া গেছে এবং তা আকারে বড়। এই ইলিশের চালান অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে প্রবেশ শুরু করলে বাজার সয়লাব হয়ে যেতে পারে। সেই সম্ভাবনা থেইে ইলিশ ব্যবসায়ীরা এবার রপ্তানির কথা ভাবছে। সরেজমিনে গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর পোর্ট রোডস্থ ইলিশ মোকাম ঘুরে দেখা যায় পুরো মোকাম জুড়েই ইলিশের হাঁকডাক। সাগর থেকে আসা একের পর এক ট্রলার ভিড়ছে মোকামে। ট্রলার থেকে ইলিশ খালাসে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন মৎস্য শ্রমিকরা। কিছু শ্রমিক ট্রলার থেকে ইলিশ খালাশ করছে, কিছু শ্রমিক ব্যস্ত আকার অনুযায়ী মাছ বাছাইয়ের কাজে। আবার অনেকে ব্যস্ত বরিশালের বাইরের জেলাগুলোতে ইলিশ প্যাকেজিং এবং তা ট্রাকে লোড করতে। মোট কথা ইলিশের আমদানীর ফলে দম ফেলানোর সুযোগ পাচ্ছে না শ্রমিকরা। এদিকে ইলিশের আমদানী বৃদ্ধির কারণে পোর্ট রোডের পুরানো চিত্র ফুটে উঠেছে। খুচরা বিক্রেতারা হাঁকডাক মেরে বিক্রি করছেন ইলিশ। সেই সাথে দাম কমার খবরে নগরীর বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা লাইন দিয়ে এসেছেন চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ কিনতে। পোর্ট রোড ইলিশ মোকামের এমন চিত্র দীর্ঘদিন পরে বলে দাবি করেছেন ক্রেতা এবং বিক্রেতারা। গত শুক্রবার ও গকাল শনিবার এক কেজি’র ওপরে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকা দরে। যার প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ২৮ হাজার টাকায়। একদিন আগে গত বৃহস্পতিবার গ্রেড সাইজের এই ইলিশের মন ছিলো ৩৬ হাজার টাকার উপরে এবং খুচরা মূল্যে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১১শত থেকে ১২শত টাকায়। এছাড়া এক কেজি সাইজের ইলিশ খুচরা ৫০০ থেকে সাড়ে ৫৫০ টাকা এবং পাইকারী প্রতি মণ ২২ হাজার টাকা, যা পূর্বের দিনে প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার টাকায়। ৫শ থেকে ৮শ গ্রামের প্রতিমণ ১৮ হাজার এবং খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা। পূর্বের দিনের মূল্য ছিলো প্রতি কেজি ৬০০-৬৫০ টাকা। প্রতি মণ জাটকা (৩শ থেকে ২৫০ গ্রামের উপরে ৪শ গ্রাম পর্যন্ত) প্রতি মন ১০ হাজার এবং খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ২৫০ টাকা। এক দিন আগে যার প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ১৪ হাজার টাকায়। সামনের ইলিশের মূল্য আরও কমবে বলে মনে করেন তিনি। এদিকে পোর্ট রোডের আড়তদার তালুকদার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. কবির হোসেন বলেন, ‘গত তিন চার দিন ধরেই মোকামে ইলিশের আমদানী বেশি। বিশেষ করে গত শুক্রবার আমদানী ছিলো তুলনামূলক বেশি। তাই বিক্রিও হয়েছে পানির দরে। অপরদিকে বরিশালের সর্ববৃহৎ ইলিশ মোকাম পোর্ট রোডের আড়তের ইজারাদার ও মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরব হোসেন টুটুল বলেন, ‘ইলিশের আমদানী বেড়েছে কয়েকগুন। গত শুক্রবার মোকামে সর্বোচ্চ তিন হাজার মন’র বেশি ইলিশ আমদানী হয়েছে। যা বর্তমান মৌসুমের সর্বোচ্চ। এ কারণে ইলিশের দামও অনেক কমে গেছে। তিনি বলেন, ‘মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিতে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ, অবরোধ কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় নদী এবং সাগরে ইলিশের পরিমান যেমন বেড়েছে তেমনি জেলের জালে ধরাও পড়ছে। যদিও বর্তমানে মোকামে যত ইলিশ আসছে তার সিংহভাগই সাগরের ইলিশ। নদীর ইলিশও কিছু আসছে। তবে সেটা তুলনামূলক কম। এ কারণে সাগরের মাছের তুলনায় নদীর ইলিশের দাম একটু বেশি। এই মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ইলিশের আমদানী বেড়লেও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি নেই। কারণ ইলিশের আমদানী বেশি হলেও ক্রেতার সংখ্যা কম। এমন পরিস্থিতি যে ফ্রিজিং করারও কোন সুযোগ নেই। কেননা বাংলাদেশে ফ্রিজিং করা মাছের চাহিদা নেই। তার ওপর বিদেশী ইলিশ রফতানীতেও সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা না থাকলে ফ্রিজিং করে তা রফতানী করা যেত। সেটা সম্ভব না হওয়ায় ইলিশ পঁচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই আমরা যারা দাদন নিয়ে ব্যবসা করছি তারা মাঠে মরার উপক্রম ঘটেছে। বাধ্য হয়ে পানির দামে ইলিশ বিক্রি করায় পাওয়া টাকাই পরিশোধ করতে পারছি না। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশে রফতানীতে দেয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবিও জানান এই মৎস্য ব্যবসায়ী। এদিকে বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘এখন ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। তার মধ্যে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সমুদ্রে ইলিশ ধরা বন্ধ ছিলো। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও বৈরি আবহাওয়ার কারণে জেলেরা ১৭-১৮ দিন সামুদ্রে যেতে পারিনি। এ সময়ের মধ্যে ইলিশ অনেক বড় হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মধ্যে ইলিশ ধরার দুটি জো ছিলো। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় দুটি জোতেই ইলিশ সিকার হয়নি। এখন যখন জেলেরা ইলিশ শিকার করতে যাচ্ছে সব ইলিশ এক সাথে ধরা পড়ছে। তাই মোকাম গুলোতে ইলিশের আমদানী বেড়েছে। কমেছে সাগরের ইলিশের দামও। তবে নদীর ইলিশ এখন উঠতে শুরু করেনি। নদীর ইলিশের দামও বেশি। কিছুদিনের মধ্যে নদীর ইলিশের আমদানীও বেড়ে যাবে বলে আশাব্যক্ত করেন তিনি।