নগরীতে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের কর্মীদের সাথে ধস্তাধস্তিতে যুবকের মৃত্যু ॥ আটক ৫
দেশ জনপদ ডেস্ক|২৩:০৬, সেপ্টেম্বর ০২ ২০২০ মিনিট
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর রুপাতলীতে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের কর্মীদের সাথে ধস্তাধস্তি করার সময় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার রূপাতলীর রেডিও স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত ওই যুবকের নাম সুমন খান (৩০)। সে রূপাতলী রেডিও স্টেশন এলাকার খান বাড়ির মৃত ছত্তার খানের ছেলে। এই ঘটনায় ড্রিম লাইফ নামক ওই মাদক নিরাময় কেন্দ্রের ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। স্বজনদের দাবী সুমনকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার এসআই ফিরোজ আল মামুন বলেন, ঘটনার পরপরই আমরা নিহতের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে ড্রিম লাইফ মাদক নিরাময় কেন্দ্রের ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করি। আটককৃতরা হলো মো: বাপ্পি সিকদার (৩৮), মো: রায়হান (২০), মো: রাব্বি (২০), উজ্জল সমাদ্দার (৩০) ও মো: বায়েজিদ (২২)। এর মধ্যে মো: বাপ্পি সিকদার ড্রিম লাইফ মাদক নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক এবং মো: রায়হান ও মো: রাব্বি সেচ্ছাসেবক সদস্য হিসেবে ওই কেন্দ্রে কাজ করত। বাকি দুজন উজ্জল সমাদ্দার ও মো: বায়েজিদ ওই কেন্দ্রেরই পুরাতন রোগী। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত সুমন একজন মাদকসেবী ছিলেন। মাদকের টাকার জন্য পরিবারের সদস্যদের প্রায়ই মারধর করত। সুমনের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পরিবারের সদস্যরা মাদক নিরাময় কেন্দ্রের কর্মীদের খবর দিলে তারা সুমনকে জোরপূর্বক নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু সুমন যেতে না চাইলে কেন্দ্রের কর্মীরা ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সুমনের বুকের উপর উঠে বসে এবং হাত-পা বেঁধে ফেলে। ঘটনাস্থলেই সুমন জ্ঞান হারিয়ে ফেললে অটোতে উঠানের চেষ্টা করা হলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সুমন। পরে শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এদিকে সুমনের মা খাদিজা বেগম জানান, নিহত সুমনের কিছুটা মানসিক সমস্যা ছিলো। বিভিন্ন অযুহাতে সে আমাকেসহ বাসার স্বজনদেরও মারধর করতো। এই কারনে তাকে ছয়মাস ড্রিম লাইফ মাদক নিরাময় কেন্দ্রে রাখা হয়। এরপর গত দেড়মাস যাবৎ সে বাসায় ছিলো। গতরাতেও বিভিন্ন অযুহাতে সুমন আমাকে মারধর করে। বিষয়টি সুমনের অপর দুই ভাই সুলতান ও রুম্মানকে জানানো হলে তারা আবারো ড্রিম লাইফ সেন্টারে জানায়। সেন্টার থেকে গতকাল বুধবার বিকেলে ৬/৭ জন লোক আসে সুমনকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মা খাদিজা বেগমের দাবী, পরিবারের অবগত না করেই সুমনকে ধরে নিয়ে যেতে উদ্যত হয় মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সদস্যরা। একপর্যায়ে ধস্তাধস্তিতে ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে ওই যুবকরা। এরপর সুমনকে ঘর থেকে বের করে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর তার পিঠের উপর ৩/৪ জন যুবক উঠে চেপে ধরে এবং স্বজনদের কাছে গামছা ও রশি চায় সুমনকে বাধার জন্য। পরে সুমন নিস্তেজ হয়ে পরে। একপর্যায়ে তরিঘরি করে সুমনকে একটি অটোতে উঠালে তার মৃত্যু নিশ্চিত হয় এবং বিষয়টি স্থানীয়রা টের পেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় মাদক নিরাময় কেন্দ্রের চারজনকে আটক করে। একই সময় ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক বাপ্পি ঘটনাস্থলে এলে স্থানীয় জনগন তাকে ধাওয়া দিয়ে আটক করে। পরে কোতয়ালী পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এই ঘটনাকে হত্যাকান্ড দাবী করে দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন নিহতের বোন আসমা, ঝুমা ও নাজমা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের স্বজন বকুল বেগম জানান, নিহত সুমনকে উলঙ্গ করে মারধর করা হয়। নিহতের চাচাতো ভাই জুয়েল জানান, নিরাময় কেন্দ্রে নিতে তারা সুমনের সঙ্গে কৌশলী আচরণ করেনি। বরং পশু যেভাবে কোরবানি দেওয়া হয়, সুমনের সঙ্গে সেভাবে আচরণ করা হয়েছে। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি তদন্ত এ আর মুকুল জানান, এ ঘটনায় নিহতের পরিবার মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছে রিহ্যাব সেন্টারের কর্মীদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি স্থানীয়দের কাছ থেকেও বিষয়টি সম্পর্কে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিহ্যাব সেন্টারের পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শেবাচিমের মর্গে পাঠানো হয়েছে।