সহজ হচ্ছে বারের লাইসেন্স

অথচ প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অবৈধ মাদকের জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এতে করে বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তবে লাইসেন্সের সংখ্যা বাড়ালেও বারের কেনাবেচার এবং কারা কতটুকু কিনছেন এর ওপর বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বিধিমালায় অ্যালকোহলের বিষয়টা একটা গাইডলাইনের মধ্যে আনা হচ্ছে। বিধিমালা হলে গাইডলাইনের মধ্য থেকে যারা আবেদন করবে, সরকার যাচাই-বাছাই করে তাদের লাইসেন্স দেবে। তবে অবৈধ মাদকের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে খসড়ায় বারের লাইসেন্স প্রাপ্তি অনেক সহজতর করা হয়েছে। পর্যটনের বিষয়টি মাথায় রেখে নিয়ন্ত্রিতভাবে হোটেল-রেস্টুরেন্ট এবং তারকামানের হোটেলগুলোর বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।জানা গেছে, খসড়া নীতিমালায় কূটনৈতিক জোন, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন এবং পর্যটন এলাকায় বার লাইসেন্সের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হোটেলের মানভেদে বার লাইসেন্সের সংখ্যা নির্ধারিত হবে। উপযুক্ততা ও বাস্তবতার নিরিখে দুই তারকা মানসম্পন্ন হোটেলে একটি বার লাইসেন্স, তিন তারকা হোটেলে সর্বোচ্চ তিনটি বার লাইসেন্স, চার তারকা হোটেলে সর্বোচ্চ চারটি, পাঁচ বা অধিক তারকা হোটেলে সর্বোচ্চ সাতটি বার লাইসেন্স, পর্যটন বা কূটনৈতিক এলাকার রিসোর্টে একটি বার লাইসেন্স, রেস্টুরেন্টে একটি বার লাইসেন্স, কাবে একটি বার লাইসেন্স, ডিউটি ফ্রি শপে আগমন/বহির্গমন/ট্রানজিটের জন্য পৃথকভাবে একটি করে ডিউটি ফ্রি অফ শপ লাইসেন্স, ডিউটি পেইড অফ শপ লাইসেন্স একটি (বৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের কর্মস্থল বা বাসস্থান নিকটবর্তী সুবিধাজনক স্থানে), পর্যটন বা অভিজাত এলাকায় একটি বিলাতি মদের অফ শপ লাইসেন্স দেওয়া হবে।
বিভিন্ন মানসম্পন্ন হোটেলের ক্ষেত্রে একাধিকবার লাইসেন্স প্রদান করা যাবে। তবে একাধিক লাইসেন্সের আবেদনের ক্ষেত্রে ভিন্ন স্থান নির্ধারণ এবং যৌক্তিকতা প্রদান করতে হবে। এরূপ ক্ষেত্রে আবেদনের যোগ্য বিবেচিত প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে যোগ্যতা ও যৌক্তিকতা উল্লেখপূর্বক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। বিদেশি নাগরিকের ১০০ ভাগ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে বার লাইসেন্স দেওয়া হবে না উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশিদের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে বার লাইসেন্স ইস্যু করা যাবে। সেক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিকের ওয়ার্ক পারমিট, বিনিয়োগ বোর্ডের নিবন্ধন, বিনিয়োগের পরিমাণ ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য দাখিল করতে হবে। ’
খসড়া নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, ‘কাব-এ বার লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সঙ্গে কাবের মদপায়ী (পারমিটধারী) সদস্য ও সব সাধারণ সদস্যের পূর্ণ তালিকা আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। কাবের লাইসেন্সের আবেদন করতে হলে সদস্যদের মধ্যে কমপক্ষে ২০০ জন বিলাতি মদপানের জন্য পারমিট থাকতে হবে। কাবের ক্ষেত্রে পারমিটধারী কাব মেম্বাররা কাবের বারের জন্য নির্ধারিত স্থানে বসে মদপান করতে পারবেন। ’ মদপানের পারমিট ইস্যুর প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘কোনো মুসলামনের ক্ষেত্রে মদ বা মদজাতীয় পানীয় পানের পারমিট প্রাপ্তির জন্য ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্রসহ নির্ধারিত ফরমে সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদন করতে হবে। মুচি, মেথর, ডোম, ঝাড়ুদার ও চা বাগানের শ্রমিক ইত্যাদি পেশার লোকজন পারমিট বলে দেশি মদ পান করতে পারবেন। ’ আগেও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য মদপানে ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্রের মাধ্যমে পারমিট গ্রহণ করতে হতো। তবে অমুসলিমদের জন্য মদপানে আগের মতো নতুন বিধিমালায় কোনো বিধিনিষেধ থাকছে না। মদপানের পারমিট আগের মতো বছর শেষে নবায়ণযোগ্য হবে না। প্রতি বছর নতুন করে পারমিট সংগ্রহ করতে হবে। একই ব্যক্তির নামে একই মেয়াদে বিলাতি মদ এবং দেশি মদের পারমিট ইস্যু করা যাবে না। একজন পারমিটধারীকে মাসে সর্বোচ্চ সাত ইউনিট (প্রতি ইউনিট ৭৫০ মিলিলিটার) বিলাতি মদ, ১১.২৫ লিটার বিয়ার, ২.২৫ লিটার ওয়াইন বা মদজাতীয় পানীয় সরবরাহ করা যাবে। তবে ২১ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তির কাছে মদ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা রাখা হয়েছে নীতিমালায়। খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, বার বা অফ শপের পরিচালনার ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত নির্ধারিত সময়সূচি বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ করতে হবে। শুক্রবারে বার বা অফ শপ বন্ধ রাখতে হবে। এ ছাড়া মহররম, ঈদে মিলাদুন্নবী, শবেবরাত, শবেকদর, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা এবং সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত দিনে বার বা অফ শপ বন্ধ রাখতে হবে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত বার প্রেমিসেসের মধ্যে কোনোরূপ নাচ বা অশ্লীল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা যাবে না। হোটেল/মোটেল/রিসোর্ট/রেস্টুরেন্ট/কাব বার ও অফ শপ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা ও সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। দেশি মদের দোকান সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট বা মার্কেটের প্রবেশ পথ, গোসলের ঘাট, শিশু সদনের প্রবেশ পথ বা তার ১০০ মিটার সংলগ্ন এলাকার মধ্যে সাধারণভাবে কোনো বার বা অফ শপের লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। সেনানিবাস এলাকার মধ্যে বার বা অফ শপ স্থাপন করতে হলে আবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেনানিবাস এলাকার জিওসির অনাপত্তিপত্র দাখিল করতে হবে। গতকাল এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিফতরের (ডিএনসি) মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বারের সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, কয়েক দিন আগে মাত্র আমি ডিএনসিতে যোগদান করেছি। এখনো পর্যন্ত সবকিছুর বিষয়ে খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই এ বিষয়ে পুরোপুরি না জেনে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন