নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীতে থ্রি হুইলার শ্রমিক সংগঠনের নামে আদায়কৃত চাঁদার অধিকাংশই টাকাই যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলীয় শ্রমিক নেতাদের পেটে। শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রতিদিনই বৈধ ও অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। অথচ করোনাভাইরাস সংকটে এসব তহবিল থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পায়নি শ্রমিকরা। শ্রমিকদের অসচেতনতা ও অশিক্ষাকে পুঁজি করার পাশাপাশি রক্তচক্ষুর মাধ্যমে হজম করা হচ্ছে শ্রমিকদের মোটা অংকের টাকা। বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদস্থ তিন ধরনের থ্রি হুইলার পরিবহন সংগঠনে চলছে এমন চালচিত্র। করোনাকালীন সময়েও নামে মাত্র ত্রাণ দিয়ে দায় সেরেছে টেম্পু মাহেন্দ্রসহ থ্রিহুইলার পরিবহন শ্রমিকের নেতৃবৃন্দ। এ ব্যাপারে সংগঠনটির সভাপতি ও শ্রমিকলীগ নেতা লিটন মোল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, সম্প্রতি নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির মামলায় পলাতক রয়েছে। এরপর সংগঠনটির সহকারী সম্পাদক মোঃ খলিলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন প্রতিটি গাড়ি থেকে ত্রিশ টাকা করে চাঁদা নেই। আর এ টাকা স্ট্যান্ডের খরচার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ স্ট্যান্ডের সিরিয়াল খরচ, লাইন খরচাসহ ড্রাইভাররা চলাচলের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার শিকার হয় তখন তাদের পাশে দাঁড়াতে হয়। তাছাড়া মামলার খরচ ও চিকিৎসার খরচও বহন করতে হয়। কিন্তু গত পাঁচ বছরে আপানারা শ্রমিকদের কাছ থেকে কত টাকা চাঁদা আদায় করেছেন এবং তাদের কল্যানেকত ব্যয় করেছেন তার কি কোন ফিরিস্তি রয়েছে জানতে চাইলে খলিল বলেন, ভাই এগুলো কেমনে দিবো অনেক সভাপতি সম্পাদক পরিবর্তন হয়েছে। তাহলে এভাবে কি অর্থনৈতিক লেনদেন বৈধতা পায় কিনা জানতে চাইলে এর কোন সদুত্তর না দিয়ে বলেন, আমাদের শ্রমিকলীগ নেতা পরিমল চন্দ্র এসব বিষয়ে জানেন। এ ব্যাপারে টেম্পু মাহেন্দ্রসহ থ্রিহুইলার পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র বলেন, আমার কাছে এর কোন হিসেব নেই। আমি দ্বায়িত্ব পেয়েছি মাত্র দু’বছর। কিন্তু আপনাদের এই সংগঠনটির কি কোন দাপ্তরিক কার্যক্রম নেই জানতে চাইলে তিনি বলেন, আছে। তাহলে শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের মাসিক কিংবা বাৎসরিক মোট টাকার কোন হিসেব নেই কেনো? এসময় তিনি আরো বলেন, আমরা করোনার সময় চাউল, ডাল,আলু, তেল, পিয়াজ ও মাছসহ অন্যান্য সহযোগীতা করেছি। এদিকে সংগঠনে শ্রমিকদের কষ্টার্জিত চাঁদা লুটপাটের বিষয়ে অনুসন্ধানসূত্রে জানা গেছে, মাহেন্দ্র, এলপিজি গ্যাসের তিন চাকা গাড়িসহ প্রায় ৬ হাজার গাড়ি চলাচল করে বরিশাল জেলা ও মেট্রোতে। প্রতিটি গাড়ি বরিশাল নগরীর বিভিন্ন স্পস্টসহ কয়েকটি থানায় চলাচল করে। এর মধ্যে নগরীর লঞ্চঘাট থেকে রুপাতলী, তালতলী হয়ে শায়েস্তাবাদ, রুপাতলী থেকে ঝালকাঠি, বাকেরগঞ্জ, জেলখানার মোড় থেকে মিরগঞ্জ, নথুল্লাবাদ থেকে বানারীপাড়া, উজিরপুরসহ রুটগুলোতে থ্রি হুইলার পরিবহনগুলো চলাচল করে। প্রতিটি গাড়ি নথুল্লাবাদ আসলেই স্ট্যান্ড ফি’র নামে ৩০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। সপ্তাহে ৬ দিন আদায় করা হয় এ চাঁদা। এ হিসেবে বছরেই আদায় করা হয় প্রায় কোটি টাকা। এভাবে দৈনিক চাঁদা আদায় হলেও শ্রমিকরা অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছে। এর কারণ হচ্ছে, চাঁদার এসব টাকা মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার পকেটে যাচ্ছে। এ কারণে করোনাভাইরাসের মতো বৈশ্বিক সমস্যার সময়ে শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন।অপরদিকে, এ নিয়ে একাধিক চালক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, আমরা এ চাঁদা না দিলে আমাদেরকে যাত্রী পরিবহন করতে দেয়া হয় না। শুধু তাই নয়, পুলিশ দিয়েও হয়রানি করা হয়। যেমন মামলা দেয়া, বারবার রিকুইজিশন (পুলিশ ডিউটি) দেয়া। এক কথায় গাড়ি চালাতে গেলে আমাদের অবশ্যই চাঁদা দিয়েই চালাতে হবে। কিন্তু এতেও আমাদের কোন আপত্তি নেই যদি এই টাকা আমাদের কল্যানেই ব্যয় করা হতো। অথচ তা করা হয় না। স্ট্যান্ডে দৈনিক সিরিয়াল ঠিক রাখাসহ লাইনম্যান রাখা হয় কোথাও কোন সমস্যা হলে তাদের মাধ্যমে ঠিক করা হয়। যেমন দুর্ঘটনা বা যাত্রীদের সাথে কোন প্রকার ঝুট-ঝামেলা কিংবা মারামারিতে সংগঠনের লোকজন সহযোগীতা করে। কিন্তু এদের বেতন-ভাতাদির জন্য আর কত টাকা ব্যয় হয়। শুধু তাই নয়, আমরা জানতেও পারিনা বছরের আয় ব্যয়ের কোন হিসেব। থ্রিহুইলার সংগঠনটিতে এহেন কর্মকান্ডের ব্যাপারে একাধিক সূত্র জানায়, মূলত এ ধরনের সংগঠনগুলোতে ক্ষমতাসীন দলীয় নেতারাই প্রভাব বলয় তৈরী করে লুটপাট করে।