নগরীর রক্ষাকবচ জেলখাল ফের ময়লার ভাগাড়

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২৩:১২, জুলাই ২০ ২০২০ মিনিট

মীর নাজমুল ॥ বরিশাল নগরীর রক্ষাকবচ ঐতিহ্যবাহী জেলখাল ফের পরিণত হয়েছে নগরবাসীর ময়লার ভাগাড়ে। অন্তত অর্ধশত স্পট থেকে বাণিজ্যিক ও গৃহস্থালির দৈনন্দিন বর্জ্র ফেলা হয় এ খালটিতে। যে কারনে জেল খালের স্রোত এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্ষার পানিতে অল্পতেই তলিয়ে যায় নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও এলাকা। শুধু তাই নয় নিক্ষিপ্ত প্রতিদিনের বর্জ্র খালটিতে জমে থাকায় দুর্গন্ধের এক বড় উৎসে পরিণত হয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, জেল খাল পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণসহ খালটির যৌবন ফিড়িয়ে দিতে বরিশাল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কয়েক বছর আগে সীমান নির্ধারণ ও গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বর্জ্র অপসারণ করা হয়। শুধু তাই নয়, জেল খালে বর্জ্র, ফেলানোর দায়ে ভ্রাম্যমান আদালতে শাস্তিও দেয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি এধরণের কোন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছেনা, যে কারণে জেলখাল এখন মৃত প্রায়। সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি বরিশাল নগরীর জেল খালসহ ২২টি খাল খনন কাজ শুরু হয়। পুনরায় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জেলখাল খনন ও পরিষ্কার কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এসময় জেল খালের উক্ত সংস্কার কাজে স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সামাজিক সংগঠনগুলো। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ গার্লস গাইডস এসোসিয়েশনের বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গাইড, রেঞ্জার ও গাইডার কর্মীরা। সরেজমিন সূত্রে, পোর্টরোড ব্রিজ হয়ে নাজির পোল থেকে মড়কখোলার পোল ও নথুল্লাবাদ ব্রিজ পর্যন্ত খালটি এখন পুরোটাই ময়লার ভাগাড়। শুধু তাই নয় জিয়াসড়ক হয়ে খালটি এখন দুর্গন্ধময় ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এমনকি খালের দু পাশে সীমানা পিলার ও সাইনবোর্ড এখন বিলুপ্তির পথে। খালটি দুপাশে গড়ে ওঠা হোটেল, বসতঘর, ফার্নিচার ও মুদি দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন বর্জ্র দেধারছে ফালানো হয় জেল খালে। জেল খালটি এভাবে রুগ্নদশায় থাকায় ক্ষতিকর দিক নিয়ে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজল ঘোষ বলেন, নগরীতে জলাবদ্ধতার অন্যতম একটি কারণ হলো জেল খাল আজ মৃত। যদি ঠিকমতো স্রোত থাকতো তাহলে খালটি নাব্যতা সংকটে পরতো না। আর এতে সহজেই নগরীর পয়ঃনিস্কাশনসহ বৃষ্টির পানি নগরী থেকে নামতে সুযোগ পেতো। আর এখন একটু বৃষ্টি হলেই শহর তলিয়ে যায়, কারন জেল খাল নাব্যতা হাড়িয়েছে পানি নামতে পারেনা। অথচ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কিংবা জেলা প্রশাসন যদি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতো তাহলে জেল খাল আজ ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হতো না। আর দখলদারিত্বতো থাকছেই। এসময় তিনি আরো বলেন, জেল খাল নিয়ে মানববন্ধন কম হয়নি। কিন্তু অজানা কারনে এখন পর্যন্ত তেমন কোন উন্নয়ন দেখা যায়নি। উদ্যোগেই শেষ হয়ে যায় কার্যক্রম। তবে শুনেছি একটি পরিকল্পনা উপর মহলে পাঠানো হয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো মানুষ সচেতন নয়। যারা বর্জ্র ফেলছেন বা দখল করছেন তারা খালের পাশ্ববর্তী বাসিন্দা কিংবা নগরীর বাসিন্দা। অথচ এই হুশ হয়না যে, খালটি মরে গেলে নগরীতে জলাবদ্ধতা তৈরী হয়। আর ভোগান্তি তখন নিজেদেরকেই পোহাতেই হয়। এদিকে জেলখালের এমন পরিস্থিতি নিয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক মো: অজিয়র রহমান বলেন, জেলখাল নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে, আশাকরি পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জেলখালকে সুরক্ষা দেয়া যাবে। ইতিমধ্যে জেলখাল নিয়ে অনেক কাজও করেছে। এর মধ্যে সীমান নির্ধারণ ও সংস্কার কাজ হয়েছে। উল্লেখ্য ২০১৬ সালের জুন মাসে বরিশালে জেলখাল সীমানা পিলার স্থাপন শুরু হয়। কীর্তনখোলা নদী থেকে নথুল্লাবাদ পর্যন্ত জেলখালকে ১শ টি ইউনিটে ভাগ করে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে স্বেচ্ছায় খাল পরিচ্ছন্ন কাজে আহ্বান জানানো হয়।