নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ করোনায় সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে গিয়ে তৈরী হচ্ছে অনলাইন বাজার। মানুষ তার দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে অনলাইন বাজারের উপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছে। মুদিমনোহরি পণ্য থেকে শুরু করে ললনার মেকআপসহ ঔষধপত্রও অনলাইনের মাধ্যমে কিনছে। আর এতে গড়ে উঠছে তরুন অনলাইন উদ্যোক্তা। ব্যবসায়ীরা তাদের নিজ নিজ চাহিদা অনুযায়ী সফটওয়্যার তৈরী করে সোস্যাল মিডিয়ায় তাদের পরিচিতি ছড়িয়ে দিচ্ছে ক্রেতা আকর্ষণের জন্য। যেকারণে ক্রেতারা বাসায় থেকেই পছন্দমতো পণ্য অর্ডার করতে পারেন। দোকানীরা অর্ডার পাওয়ার পর সহজেই ক্রেতাদের বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে ডেলিভারি ম্যানদের মাধ্যমে। ইতিমধ্যে বরিশাল নগরীতে ঔষধপত্র নামে একটি এ্যাপস চালু হয়েছে করোনাকালীন এসময়ে। এরপর অনলাইন ফার্মেসী নামেও একটি অনলাইন বাজার বের হয়েছে। ফলমূলেরও ফেইসবুক পেইজ রয়েছে একাধিক। পোশাকের অনলাইন বাজারের মধ্যে নগরীর চকবাজারস্ত স্বদেশি পোশাকের দোকানের অনলাইন মার্কেটিং শুরু হয়েছে। এছাড়াও সুরক্ষা সামগ্রী যেমন- মাস্ক, স্যাভলন, স্যানিটাইজারসহ ¯েপ্রও অর্ডার নেয়া হচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে। এব্যাপারে স্ব-দেশীর স্বত্বাধিকারী গৌতম সাহা বলেন, করোনার মধ্যে মানুষ দোকানমুখী না হলেও তাদের চাহিদা থেমে নেই সেক্ষেত্রে ক্রেতারা আমাদের ওয়েবপেইজ ভিজিট করে সুবিধামতো অর্ডার দিতে পারছেন। আর আমরা তা ডেলিভারি ম্যানের মাধ্যমে বাসায় পৌছে দিচ্ছি। আর এতে সামাজিক দুরত্বও নিশ্চিত হচ্ছে। একাধিক অনলাইন ফার্মেসী বাজার মালিক বলেন, ঔষধের মতো গুরত্বপূর্ণ উপাদান মানুষ এখন অনলাইনে কিনতে বাধ্য হচ্ছে, কারণ সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে চাইছে নিজকে নিরাপদ রাখার জন্য। লকডাউনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমরা অনলাইনে ক্রেতাদের সাড়া পাচ্ছি। ক্রেতারা ঔষধের প্যাকেটের ছবি তুলে আমাদের পেইজে দিতে পারছে এতে আমরাও নিশ্চিন্তে অর্ডারটাও নিতে পারছি। এছাড়া অনেকে প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে চাহিদা মতো ওষুধ অর্ডার করতে পারছে। তবে স্বাভাবিক দামের চেয়ে একটু বেশি রাখতে হচ্ছে কারণ ডেলিভারিম্যান দিয়ে বাসায় পৌঁছে দিতে হচ্ছে। এদিকে ব্যবসায়ীরা তাদের চাহিদা মোতাবেক অনলাইন মার্কেট তৈরী করতে সফটওয়্যার ডেভেলপারদের দিকে ছুটছে। এতে কম্পিউটার প্রকৌশলীদেরও ব্যস্ততা বেড়েছে। এনিয়ে নগরীর ইঞ্জিনিয়ার বিডির স্বত্বাধিকারী জিহাদ রানা বলেন, প্রায় দুই হাজার অনলাইন উদ্যোক্তার আইটি সার্পোট দিচ্ছি। এরমধ্যে বরিশাল জেলা প্রশাসনেরও অনেক কাজ আমরা করেছি। এধরণের কাজ করতে গিয়ে আমাদের ব্যস্ততাও একটু বেড়েছে। কারণ করোনার মধ্যে মানুষ দুর থেকেই সার্ভিসটা পেতে চায় কোন প্রকার সংস্পর্শে না এসেই আর এতে অনলাইনের কোন বিকল্প নেই। অপরদিকে অনলাইনে চিকিৎকদের চেম্বারও রুপান্তরিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে ডেন্টিস্ট ফরিদ হোসেন বলেন, করোনার মধ্যে অনলাইনে নির্ভর না করে উপায় নেই। কারণ যতদুর সম্ভব সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করেই আমাদের টিকে থাকতে হচ্ছে। কারণ এখন পর্যন্ত কোন প্রতিষেধক বের হয়নি। ইতিমধ্যে অনেক চিকিৎসক ভিডিও কলে রোগী দেখছেন। সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে এখন অনেক ডাক্তারই অনলাইনে রোগী দেখে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে শুরু করেছে। আর এতে তাদের তৈরী করতে হচ্ছে নিজস্ব সফটওয়্যার (ডমেস্টিক সফটওয়্যার)। নগরীতে প্রায় দু-শতাধিক কোচিং সেন্টার রয়েছে এবং কিন্ডারগার্টেনও কম নয়। এনিয়ে বরিশাল কিন্ডারগার্টেন এসোশিয়েশনের সহ-সভাপতি মো: আতিক বলেন, সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতের জন্য অনলাইনে পাঠদানের কোন বিকল্প নেই। তাই আমরাও চিন্তা করছি কিভাবে প্রতিষ্ঠান অনলাইনের মাধ্যমে চালু রাখা যায়। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক সাইয়েদুল ইসলাম বলেন, মহামারির সময় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য টিকে থাকাটা যখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন প্রযুক্তিকে নির্ভর করে গড়ে ওঠা ব্যবসা খাত নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে। “এর ফলে যে কেবল যিনি পণ্য বানাচ্ছেন বা আমদানি করে আনছেন, তিনিই লাভবান হচ্ছেন এমন নয়। এর সঙ্গে ওই পণ্যটি ক্রেতার হাত পর্যন্ত পৌঁছাতে কয়েকটি ধাপে নতুন কর্মী তৈরি হচ্ছে। যে ডেলিভারি দেয়, যে পরিবহন সেটা নিয়ে যায় এসব জায়গায়ও কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে।” তবে তিনি মনে করেন এক্ষেত্রে প্রযুক্তি নির্ভর নতুন এসব উদ্যোগগুলোকে নিষ্ঠার সঙ্গে পণ্যের মান এবং যথাসময়ে অর্ডার ডেলিভারি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ছোট উদ্যোক্তাদের ব্যবসা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে। অনলাইনে তরুন উদ্যোক্তা তৈরী হওয়ার মধ্য দিয়ে কর্মক্ষেত্রও গড়ে ওঠার ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে গেলে অবশ্যই অনলাইনকে নির্ভর করতে হয়। আর এ লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক আগে থেকেই তরুন অনলাইন উদ্যোক্তা তৈরীর জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে।