নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বড় একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা থেকে পরিত্রান পেল বাংলাদেশ ব্যাংক বরিশাল শাখা। ব্যাংকটিতে অভ্যন্তরীন কলহ সৃষ্টি ও ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের মিশনে মগ্ন থাকা এক কর্মকর্তার নিরব ষড়যন্ত্র অবশেষে ফাঁস হয়েছে। অন্যদের ফাঁসাতে গিয়ে শেষপর্যন্ত নিজেই ফেঁসেছেন তিনি। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি প্রমানিত হওয়ায় ইতিমধ্যে তাকে বরিশাল থেকে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে শাস্তি মূলক বদলী (স্ট্যান্ড রিলিস) করা হয়েছে। তবে ওই কর্মকর্তার দাবী সবাই একজোট হয়ে তাকে ফাঁসিয়েছে। জানা গেছে, গত ৩ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক এর বরিশাল শাখার উপ-পরিচালক মোঃ সোহেল সকাল ১০টায় সার্ভার পরিদর্শনের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য ব্যাংক চত্বরে যান। এসময় কয়েকজন কর্মচারীকে মাস্ক ছাড়া দেখতে পেয়ে সে দৃশ্য নিজ মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারন করেন। বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তা ব্যাংকের অভ্যন্তরে ভিডিও করা নিষেধ বলার পরই তাকে মারধর শুরু করেন সোহেল। এসময় কয়েকজন কর্মচারী এগিয়ে এসে সোহেলকে নিবৃত করার চেষ্টা করলে তাদেরকেও নাজেহাল করেন সোহেল। পরে বিষয়টি ব্যাংকের জিএমকে অবহিত করেন লাঞ্ছিত হওয়া কর্মচারীরা। জিএম বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার কথা জানালে শান্ত থাকেন তারা। পরে এ ঘটনার বর্ণনা নিয়ে কর্মচারীদের পক্ষ থেকে প্রধান কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়। এদিকে নিজের অপরাধ আড়াল করতে সুচতুর সোহেল কোতয়ালী থানায় গিয়ে তাকে মারধর করা হয়েছে উল্লেখ করে ৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু বিষয়টি শাখা প্রধানকে অবহিত করেননি সোহেল। সেখান থেকেই মূলত রহস্যের সৃষ্টি হয়। কারন জিএমকে অবহিত না করে থানায় অভিযোগ করা অস্বাভাবিক ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত বহন করে। ব্যাংকের অভ্যন্তরীন তদন্তে দোষী প্রমানিত হওয়ায় তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। একই সাথে ২২ জুলাই এর মধ্যে কারন দর্শানোর নির্দেশনাও প্রদান করা হয়। এদিকে সোহেলের অভিযোগের তদন্ত করতে এসে এর কোন সত্যতা পায়নি তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালী থানার ওসি তদন্ত এম আর মুকুল। তিনি বলেন, ওই দিন ব্যাংক চত্তরে সোহেলকে মারধরের কোন ঘটনাই ঘটেনি। বরং সোহেলের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যাংকের ডরমেটরীতে রাখতে না দেওয়ার কারনেই এ ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানায়, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তার ব্যবহৃত প্রাইভেট কার ব্যাংকের ডরমেটরীতে রাখা হয়। ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মীরা অনুমতি ব্যতিত এ গাড়ি রাখা যাবে না বলার পর থেকেই সোহেলের আক্রোশমূলক কর্মকান্ড শুরু হয়। এই ঘটনার জেরে সোহেল সিকিউরিটি গার্ডকে অপসোসেলাইনের মোড়ে রাস্তার মধ্যে দাঁড় করিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে। এছাড়াও সোহেলের বিরুদ্ধে অটো স্ট্যান্ডে মদ্যপ অবস্থায় অটোরিক্সা-মাহেন্দ্রা ভাংচুরের অভিযোগও রয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিকসূত্র জানান, সম্পূর্ন উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরীর নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বরিশাল শাখার জিএম শেখ জাকির হোসেন বলেন, তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করেছে প্রধান শাখা। আর থানা পুলিশও তদন্ত করেছে। সুতরাং এখানে কারো পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান গ্রহনের প্রশ্নই আসে না। জানতে চাইলে সোহেল বলেন, সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে কাজ করছে। তাই আমার প্রতি অন্যায় করা হলেও উল্টো আমাকেই দোষী প্রমানিত করা হয়েছে। ব্যাংকটির একাধিক কর্মচারী বলেন, ব্যাংকের ভাবমুর্তী ক্ষুন্নসহ পরিকল্পিত কোন হীন উদ্দেশ্য নিয়ে সোহেল এ কান্ড ঘটিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হতে পারেননি।