বরিশালে প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণ, ১২ ঘন্টায় সব আসামী গ্রেফতার করলেন ওসি!

কামরুন নাহার | ১৭:০৯, জানুয়ারি ১২ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বাবুগঞ্জে এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ওই ধর্ষণের ঘটনায় মামলা দায়েরের ১২ ঘন্টার মধ্যেই মূল আসামী ও তার সহযোগীকে গ্রেফতার করছে বাবুগঞ্জ থানা পুলিশ। বাবুগঞ্জ থানার ওসি মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে থানা পুলিশের একটি দল শনিবার রাতে বাহেরচর ক্ষুদ্রকাঠী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ধর্ষক রিমনকে (১৬) গ্রেফতার করেন এবং আগের মধ্যরাতে ধর্ষকের সহযোগী সুমনকে (১৮) আটক করেন। ধর্ষক রিমন বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের বাহেরচর ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের দুলাল দফাদারের ছেলে এবং তার সহযোগী সুমন মুলাদী উপজেলার কাজিরচর এলাকার মৃত আইয়ুব আলী ফকিরের ছেলে। প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় শনিবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বাবুগঞ্জ থানায় দু’জনকে আসামী করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় দেহেরগতি ইউনিয়নের বাহেরচর ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরীকে স্থানীয় দুলাল দফাদারের ছেলে রিমন তার বন্ধু সুমনের সহযোগিতায় ফুসলিয়ে পার্শ্ববর্তী নোমান মাস্টারের বসতঘরে নিয়ে জোরপূর্বক আটকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে। এসময় ওই কিশোরীর বাবা ও মা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ডাক-চিৎকার দিলে ধর্ষক রিমন পালিয়ে যায়।
এদিকে অভিযোগ পেয়ে রাতেই তাৎক্ষনিক অভিযান চালিয়ে ধর্ষকের সহযোগী আসামী সুমনকে গ্রেফতার করেন বাবুগঞ্জ থানার ওসি এবং ধর্ষিতা কিশোরীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।
এদিকে ওই ধর্ষণের ঘটনায় শনিবার বাবুগঞ্জ থানায় ২ জনকে আসামী করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ধর্ষককে গ্রেফতার করার ঘোষণা দেন বাবুগঞ্জ থানার চৌকস ওসি মিজানুর রহমান। তবে ওই ঘোষণার ১২ ঘন্টার মধ্যেই তিনি শনিবার রাতে মামলার মূল আসামী ধর্ষক রিমনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। এ ঘটনায় সত্যতা স্বীকার করে বাবুগঞ্জ থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় আসামী গ্রেফতার করার কাজকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে দিনরাত নাওয়া-খাওয়া ভুলে দফায় দফায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মামলার ২ আসামীকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ধর্ষক রিমনের পিতা দেহেরগতি ইউনিয়নের বাহেরচর ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের দুলাল দফাদার (৪৫) নিজেও বিগত প্রায় ৪ বছর আগে একই এলাকায় তার বেয়াইনের ১২ বছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করেন। ওই ঘটনায় দুলাল দফাদারের বিরুদ্ধে শিশুধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় প্রায় ৩ বছর কারাভোগ করেন তিনি। এছাড়াও তিনি বাহেরচর ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের খান বাড়িতে ডাকাতির অপরাধে মোস্তফা খানের দায়েরকৃত মামলায় দীর্ঘদিন জেলহাজতে থাকার পরে বর্তমানে আদালতের জামিনে রয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ধর্ষক ও খুনি পিতা দুলাল দফাদারের সাহস এবং শেল্টারেই মাত্র ১৬ বছর বয়সেই বাপের মতো জঘন্য অপকর্ম শুরু করেছে রিমন। তাই এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন সর্বস্তরের এলাকাবাসী। এদিকে শনিবার রাতে ধর্ষিতা কিশোরীকে দেখতে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে গিয়েছেন বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব কাজী ইমদাদুল হক দুলাল ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) নুসরাত জাহান খান। এসময় তারা ধর্ষিতা প্রতিবন্ধী কিশোরীর সার্বিক খোঁজখবর নেয়াসহ তার পরিবারকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন।