ভোলা প্রতিনিধি ॥ দেশের দক্ষিণের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরায়ও হানা দিয়েছে করোনা। তবে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য মনপুরাবাসীর গলদঘর্ম দশা। মনপুরা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা লঞ্চে প্রথমে পাঠানো হয় ভোলায়। এরপর ভোলা থেকে নমুনা যায় বিভাগীয় শহর বরিশালে। সেখানে কিছু নমুনা পরীক্ষা হয়। বাকি নমুনা বরিশাল থেকে পাঠানো হয় ঢাকায়। এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার কারণে ৭-১০ দিনেও অনেকে পান না পরীক্ষার ফলাফল। ফল পেতে পেতেই অনেকে সেরেও ওঠেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিগগির বরিশাল বিভাগে আরও অন্তত দুটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন দরকার। আবার শুধু পিসিআর ল্যাব স্থাপন করলেই হবে না, সেখানে মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও ভাইরোলজিস্ট নিয়োগ না দিলে তা কাজে আসবে না। বর্তমানে একটি ল্যাব দিয়েই পুরো বরিশাল বিভাগের করোনা রোগীদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বরিশালে পিসিআর ল্যাবের প্রধান ডা. আকবর কবির জানান, সেখানে দিনে পাঁচ শতাধিক নমুনা সংগ্রহ হলেও পরীক্ষার সক্ষমতা আছে ২৩৪টি। অন্য নমুনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আসছে। লোকবল সংকট আর ল্যাবের সক্ষমতা না থাকায় প্রতিদিন কয়েকশ’ নমুনা ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। এখন দিনে অন্তত ২৮২টি পরীক্ষার টার্গেট রয়েছে জানিয়ে আকবর কবির বলেন, যে পিসিআর ল্যাব বরিশালে রয়েছে তা সম্প্রসারণ করা গেলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হতো। একটি বায়ো সেফটি কেবিনেট, ২টি ফ্রিজ আর একটি পিসিআর মেশিন বসানো হলে পরীক্ষার সক্ষমতা দ্বিগুণ হবে। সেজন্য খুব বেশি টাকারও দরকার হবে না। তিনজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট দিয়ে বরিশালের পিসিআর ল্যাবের কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের অনেক ল্যাবে ১০-১৫ জন মাইক্রোবায়োলজিস্ট কাজ করেন। করোনার এমন পরিস্থিতিতে বরিশালের পিসিআর ল্যাবে নতুন কোনো জনবল দেওয়া হয়নি। নতুন মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও ভাইরোলজিস্ট পদায়ন না করে বরিশালে আরও ল্যাব বসিয়েও কাজ হবে না। ডা. আকবর কবির আরও জানান, বরিশালের অনেক এলাকা নদীবেষ্টিত। সেখান থেকে বরিশাল পর্যন্ত নমুনা আসতেই অনেক সময় লেগে যায়। আবার অনেক নমুনা এখন ঢাকায় পাঠানো লাগছে। নমুনা এত টানাহেঁচড়া করলে অনেক সময় সঠিক মান ধরে রাখা কঠিন। আবার এসব পাঠাতে অর্থ খরচও হয়। ভোলার সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী বলেন, ভোলায় পিসিআর ল্যাব বসানো হয়েছে। তবে মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ভাইরোলজিস্টসহ অন্যান্য পদে জনবল এখনও না পাওয়ায় ল্যাবের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। ন্যূনতম সংখ্যায় জনবল পেলেই ভোলার পিসিআর ল্যাবের কাজ শুরু করা যেত। রতন কুমার আরও বলেন, এখন পর্যন্ত ভোলায় ১৮৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ৩ হাজার ৭৫ জনের। রিপোর্ট পাওয়া গেছে ২ হাজার ৫১৯ জনের। রিপোর্ট পেতে অনেক সময় ৮-১০ দিনও লেগে যায়। ভোলার ল্যাবের কাজ শুরু হলে বরিশালের ওপর চাপ কমত। ভোলার মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহমুদুর রশিদ বলেন, আগে উপসর্গ থাকলেও অনেকে ভয়ে পরীক্ষা করাতে আসতেন না। এখন উল্টো উপসর্গ না থাকলেও পরীক্ষার জন্য চাপাচাপি চলছে। বর্তমান বাস্তবতায় সেই সক্ষমতা আমাদের নেই। তিনি আরও জানান, মনপুরায় যাদের করোনা পজিটিভ এসেছে তাদের প্রায় সবাই ঢাকা থেকে এসেছেন। লঞ্চে অনেকে মাছের ঝুড়ি নিয়ে নিয়মিত মনপুরা থেকে ঢাকায় যাচ্ছেন। তাদের অনেকেরই উপসর্গ দেখা দিয়েছে।