হাসানাত-আমুসহ ৪০ জন সংসদ সদস্যকে সংসদে যোগ না দিতে অনুরোধ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৩:১৬, জুন ১৬ ২০২০ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ।। জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে অন্তত ৪০ জন সংসদ সদস্যকে যোগ না দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে সংসদের হুইপের দপ্তর থেকে ফোন করে তাদের সংসদে যোগ না দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়। এদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষেদের সদস্য ও সরকারি দলের প্রভাবশালী সদস্যরাও রয়েছেন। রয়েছেন সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদও। জানা গেছে, বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে যেসব সংসদ সদস্য ঝুঁকিপূর্ণ, যেসব সদস্য বা তাদের পরিবারের কারও করোনা পজিটিভ হয়েছে এবং করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে গেছেন, তাদেরকে সংসদে না যেতে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে এসব ঝুঁকিপূর্ণদের মধ্যে কোনও সংসদ সদস্যের টানা ৯০ দিন অধিবেশনে অনুপস্থিতির আশঙ্কা থাকলে, তাদের হাজিরা দিতে একদিনের জন্য অধিবেশনে উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি ছাড় দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সংসদে প্রতিদিন এমপিদের উপস্থিতি ৬০ থেকে ৮০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে উপস্থিতি কোনও ক্রমেই যেনো ৯০ জনের বেশি না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। যে কারণে অধিবেশন শুরুর আগেই সংসদের সরকারি ও বিরোধী দলের হুইপরা বসে রোস্টার করেছেন। প্রত্যেক সদস্যের গড়ে তিন দিনের উপস্থিতির সুযোগ রেখে রোস্টার করা হয়। হুইপের দফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোস্টার তৈরির আগে অধিবেশনে একেবারেই অংশগ্রহণ করবেন না, এমন আক্রান্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ সদস্যদের তালিকা তৈরি করা হয়। এমন অন্তত ৩৫ জনের মতো সদস্যের তালিকা তৈরি করে তাদেরকে অধিবেশন শুরুর আগেই না আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোনও কোনও সংসদ সদস্য নিজে, তার পরিবারের সদস্য বা ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারীর করোনা পজিটিভ হওয়ার কারণে এই সংখ্যা ইতোমধ্যে বেড়েছে। অধিবেশনের বাকি সময়ের মধ্যে এই তালিকা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। শারীরিক অসুস্থতা ও বয়সের কারণে যেসব সংসদ সদস্যকে অধিবেশনে না আসতে অনুরোধ করা হয়েছে তারা হলেন— বিরোধী দলীয় নেতা ও ময়মনসিংহ-৪ আসনের এমপি রওশন এরশাদ, সংসদ উপনেতা ও ফরিদপুর-২ আসনের সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ঝালকাঠী-২ আসনের আমির হোসেন আমু, সরকার দলীয় সিনিয়র সংসদ সদস্য ভোলা-১ আসনের তোফায়েল আহমেদ, গোপালগঞ্জ-২ আসনের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ঢাকা-১৮ আসনের অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, চট্টগ্রাম-১ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশররফ হোসেন, ফরিদপুর-৩ আসনের খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বরিশাল-১ আসনের আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, নওগাঁ-৪ আসনের ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, জামালপুর-১ আসনের আবুল কালাম আজাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও ঢাকা-৮ আসনের রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি ও পিরোজপুর-২ আসনের আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সরকারি দলের সংসদ সদস্য শেরপুর-৩ আসনের একে এম ফজলুল হক, পাবনা-৩ আসনের মকবুল হোসেন, ময়মনসিংহ-৬ আসনের মোসলেম উদ্দিন, পটুয়াখালী-১ আসনের মো. শাহজাহান মিয়া, ঠাকুরগাঁও-২ আসনের মো. দবিরুল ইসলাম, সরকারি দলের হুইপ ও খুলনা-১ আসনের পঞ্চানন বিশ্বাস, সংরক্ষিত আসনের শেখ এ্যানী রহমান ও জিন্নতুল বাকিয়া এবং বিএনপির সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার। এছাড়া, সংরক্ষিত আসনের সদস্য ও রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খানকেও অনুরোধ করা হয়েছে অধিবেশনে যোগ না দিতে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে বৈঠকে উপস্থিত থাকার বিষয়ে হুইপের দফতর থেকে কোনও অনুরোধ জানানো হয়নি। যদিও তার উপস্থিতির জন্য দুই দিনের সিডিউল রয়েছে হুইপ দফতরের। তবে গত বছর মারাত্মক অসুস্থতা নিয়ে সিঙ্গাপুরে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়া ওবায়দুল কাদেরকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পরপরই বাসা থেকে বের না হওয়ার নির্দেশনা দেন। ওবায়দুল কাদের বর্তমানে অধিবেশনে যোগ না দিলেও গত ১১ জুন সংসদে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি দলের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘তারা কোনও সংসদ সদস্যকেই অধিবেশনে যোগ দিতে নিষেধ করেননি। করোনাভাইরাসজনিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রবীণ ও অসুস্থ সংসদ সদস্যদের অধিবেশনে আসতে নিরুৎসাহিত করছেন। সংসদের সিনিয়র সদস্যদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এটা করা হয়েছে। তবে যারা করোনা পজিটিভ — তাদের সবাইকে নিষেধ করা হয়েছে বলে জানান।