নিজস্ব প্রতিবেদক:বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে জনৈক এক মাদ্রাসাশিক্ষকের হাত বাঁধাসহ গলায় জুতার মালা পরিয়ে বেইজ্জতি করা হয়েছে। স্থানীয় দড়িচর খাজুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার ষাটোর্ধ্ব শিক্ষক আলাউদ্দিন হুজুরকে সালিশ বৈঠকে দোষী সাব্যস্ত করেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী। এবং চেয়ারম্যানের নির্দেশেই বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তির গলায় জুতার মালা পরিয়ে শাস্তি দেওয়া হয় এবং সেই দৃশ্য মুঠোফোনে ভিডিও আকারে ধারণ করে। বুধবার ৩ জুন সকালের ইউনিয়ন পরিষদের এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার একটি ভিডিওচিত্র রাতে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তোলপাড়। ঘণ্টাখানেকের মাথায় ভিডিওটি হাজার হাজার বিস্ময়সূচক লাইক, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের প্রতিবাদী কমেন্ট ও শেয়ারে ভাইরাল হয়ে ওঠে। জোরালো প্রতিবাদস্বরুপ এই ঘটনায় জড়িতদের শীঘ্রই গ্রেপ্তারপূর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি রেখেছে অসংখ্য জন। জানা গেছে- ভাইরাল এই ভিডিওটি সম্পর্কে রাতেই মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশ অবগত হয়েছে। এই বিষয়ে জানতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবিদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভিডিওটি ফেসবুক থেকে সংরক্ষণ করেছেন। এখন বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়- খাজুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে শিক্ষক আলাউদ্দিন হুজুরের বিরুদ্ধে। এনিয়ে বুধবার স্থানীয় এমপি পঙ্কজ দেবনাথের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী সালিশ বৈঠকে বসেন। শহীদ ও ফিরোজ মেম্বরের উপস্থিতিতে সালিশীর একপর্যায়ে শিক্ষক ও স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম আলাউদ্দিনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার এই অর্থ তাৎক্ষণিক দিতে না পারায় ইউনিয়ন পরিষদের ভেতরে সকলের উপস্থিতিতে প্রথমে তার হাত বেঁধে একচোট মারধর করে। পরে গলায় জুতার মালা পরিয়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বরসহ তাদের সহযোগীরা টানা-হেচড়া শুরু করে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানায়- জুতার মালা পরিয়ে খোদ চেয়ারম্যান নিজেই ভিডিও ধারণের নির্দেশ দেন। এসময় পাশ থেকে একজন ভিডিও করতে নিষেধ করলে চেয়ারম্যান তাকে হুমকি দেন। এবং দম্ভোক্তি করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার পরপর থেকে লোকলজ্জার ভয়ে মাদ্রাসাশিক্ষক আত্মগোপন করে আছেন। এমনকি তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে মাদ্রাসাশিক্ষককে বেইজ্জতি করার ওই ভিডিও স্থানীয় এক ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে বুধবার রাত ৯টার দিকে পোস্ট করেন। এবং ঘটনা তদন্তপুর্বক জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি রাখেন। অবশ্য ওই ব্যক্তির ‘নির্যাতন-সন্ত্রাস-দুর্নীতি-মাদক প্রতিরোধ কমিটি’ লেখা সংবলিত ভিডিওটিতে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের স্থানীয় এমপি পঙ্কজ দেবনাথের ক্যাডার বলে অ্যাখ্যায়িত কনে। মূলত এই পোস্টটি মূহূর্তের মধ্যেই ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এই বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ীর মুফোঠোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনাটি সঠিক বলে অকপটে স্বীকার করেন। এবং বলেন- সালিশ বৈঠকের রায় অনুযায়ী মাদ্রাসাশিক্ষকের গলায় জুতার মলা পরানো হয়েছে। এতে যদি তার জেল বা সাজা হয় হবে, দম্ভোক্তির সুরে মন্তব্য করেন। তবে এটাও বলেন- এই ঘটনায় তিনি একা জড়িত নন, দুই মেম্বর শহীদ ও ফিরোজও ছিলেন।’