লাহারহাট-ভেদুরিয়া ফেরীতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল থেকে দ্বীপ জেলা ভোলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনকারী লাহারহাট-ভেদুরিয়া রুটের ফেরীতে যানবাহনে ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ফেরী পরিচালনাকারী বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মচারীরা ভাড়ার অতিরিক্ত ৪ থেকে ৫শ’ টাকা করে আদায় করছে প্রকাশ্যে। এর প্রতিবাদ করলে পরিবহন শ্রমিকদের শারীরিক নির্যাতন এবং হয়রানীর অভিযোগ রয়েছে বিআইডব্লিউটিসি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। যদিও অভিযুক্তরা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। প্রকাশ্য জুলুম-নির্যাতন হলেও লিখিত অভিযোগ না পাওয়ার দোহাই দিয়ে ঘটনা চেপে যাচ্ছে ফেরী কর্তৃপক্ষ। বিআইডব্লিউটিসি’র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান। দ্বীপজেলা ভোলার সাথে বরিশাল সহ সারা দেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ২০০২ সালে বরিশালের লাহারহাট ও ভোলার ভেদুরিয়া রুটে ফেরী সার্ভিস চালু করে বিআইডব্লিউটিসি। লাহারহাট চ্যানেল এবং কালাবদর ও তেতুলিয়া নদী পাড় হয়ে ১০ কিলোমিটার দির্ঘ এই ফেরীতে নিয়মিত রুটের কোন যাত্রীবাস পাড়াপাড় হয় না। এই ফেরীর বেশীরভাগ সেবা গ্রহীতা পিকাপ, পন্যবাহী ট্রাক, কাভারভ্যান ও লরি এবং কিছু ব্যক্তিগত যান। অথচ এই ফেরীতে সবচেয়ে বেশী হয়রানী আর ভোগান্তির শিকার হয় পন্যবাহী যানের চালক-শ্রমিকরা। ফেরী পাড় হতে প্রতিনিয়ত পন্যবাহী যানের ৪শ’ থেকে ৫শ’ এবং সিরিয়ালের নামে আরও ১শ’ টাকা করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। প্রতিবাদ করলেই নেমে আসে শারীরিক নির্যাতন, বেড়ে যায় হয়রানীর মাত্রা। ট্রাক চালক মো. মনজুর আলম জানায়, লাহারহাট থেকে ভেদুরিয়া পর্যন্ত ফেরীতে ১ হাজার ৬শত টাকার ফেরীভাড়া ১ হাজার ৮শত টাকা করে আদায় করছে। এরপর আবার সিরিয়ালের নামে আদায় করা হচ্ছে ১ শ’ টাকা করে। প্রতিবাদ করলে জুলুমবাজী-গলাধাক্কা। টাকা বেশী নেয়, তারপরও অমানবিক আচরন করে। তাদের মধ্যে কোন বিবেক বোধ-মানবতা কিছুই নেই। আরেক পন্যবাহী যান চালক মো. বেল্লাল বলে, ১ হাজার ৬’শ টাকার ফেরী ভাড়া সব সময় ১ হাজার ৭শ করে দিচ্ছি। তারপরও ২শ’ টাকা করে বেশী আদায় করছে তারা। এর প্রতিবাদ করলে টিকেট কাটার দায়িত্বে নিয়োজিত বিআইডব্লিউটিসি’র কর্মচারী মো. সোহেল কাউন্টার থেকে বেড়িয়ে এসে গলাধাক্কা দিয়ে তাকে নিচে নামিয়ে দেয়। কালামের মতো আরো আনেক ট্রাক চালক, পিকআপ চালক একই রকম অভিযোগ করে। কভারভ্যান চালক জুলফিকার বলে, ১ হাজার ৪শ টাকার ভাড়া সব সময় তারা ১ হাজার ৮ শ টাকা দিয়ে পাড় হয়। এখন আরও ২শ’ টাকা চায়। এক চালক এর কারন জানতে চাইলে তাকে ধাক্কাইয়া নামাইয়া দেয়। তিনি এর প্রতিবাদ করায় তাকেও ধাক্কিয়ে নামিয়ে দেয় টিকেট কাউন্টারের কর্মচারীরা। ফেরী পাড়াপাড়ে সরকারী সেবার পরিবর্তে গলাধাক্কার এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিহীত চান ভূক্তভোগী যান চালকরা। এদিকে দিন পর দিন প্রশাসন সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও প্রতিকারে এগিয়ে আসেনা কেউ। অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট থানার কর্তা এবং গোয়েন্দা বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তারা ফেরীঘাট থেকে মাসোয়ারা পাওয়ায় তারা বিষয়টির অলিখিত বৈধতা দিয়েছেন। চোখের সামনে সামনে পরিবহন শ্রমিকরা টিকেটের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার অভিযোগ করলেও মুহূর্তেই তা অস্বীকার করে লাহারহাট পয়েন্টে টিকেট কাটার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিআইডব্লিউটিসি’র জুনিয়র টার্মিনাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট মো. সোহেল। প্রকাশ্যে অতিরিক্ত অর্থ আদায় আর শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও লিখিত অভিযোগ না পাওয়ার দোহাই দিয়ে সকল অপকর্ম চেপে যাচ্ছে অনৈতিক সুবিধাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। লাহারহাট ফেরীঘাটের সিনিয়র টার্মিনাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট (অপারেশন) আব্দুর রহিম জানায়, কেউ যদি লিখিত অভিযোগ না করে তাহলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কিংবা নির্যাতনের বিষয়টি তারা বুঝবেন কি করে? বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান জানান, বিআইডব্লিউটিসি’র প্রতিটি ফেরী রুটে ভাড়ার সু-নির্দিষ্ট তালিকা রয়েছে। এর বেশী ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও লাহারহাট ফেরীঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কিংবা শারীরিক নির্যাতনের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি’র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন তিনি। ফেরীঘাটে কোনভাবেই অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করা হবে না বলে হুশিয়ারী দিয়ে জেলা প্রশাসক প্রয়োজনে সেখানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করার কথা বলেন।