বরিশালে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় বীর প্রতীকের মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন
নিজেস্ব প্রতিবেদক|২১:৪৮, ডিসেম্বর ২৯ ২০২৫ মিনিট
বরিশালে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট সার্জেন্ট রত্তন আলী শরিফের (৮২) মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রোবববার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পঞ্চম তলার ৫০০৩ নম্বর কক্ষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বীর প্রতীক উপাধিধারী ব্যক্তির বিয়োগান্তের ঘটনায় স্বজনেরা চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ এনেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই বিয়োগান্তের ঘটনায় কারও অবহেলা আছে কী না তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার বিকেলে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাবুগঞ্জ উপজেলার রাকুদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আশির্ধ্বো বীর মুক্তিযোদ্ধা রত্তন আলী শরিফ। গত কয়েক দিন ধরে তার ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
অভিযোগ, ভর্তির পর কেবিনে এসে একজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে যান। পরের দিন অর্থাৎ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একজন চিকিৎসক তাকে দেখে যান। এরপরে আর কোনো খোঁজ-খবর না নেওয়ায় দুপুরে তার অক্সিজেন লেভেল কমে যায় এবং ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ায় তিনি অচেতন হয়ে পড়েন।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা অভিযোগ করেন, বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ডিউটিরত ডাক্তারদের ডাকতে যান, কিন্তু এতে তারা রেগে যান এবং রোগীকে ওয়ার্ডে, নয়তো প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। তারপর বাবার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়, তখনও চিকিৎসককে ডাকতে গেলে সেবারও তিনি আসেননি বরং যা ইচ্ছে তাই ব্যবহার করেন। উপায়ান্ত না পেয়ে জনৈক সচিবকে ফোনে ধরিয়ে দিলে তারপর তিনি কেবিনে আসেন চিকিৎসক, ততক্ষণে আমার বাবার প্রাণ চলে গেছে।’
বাবার এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন রত্তন আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীকে সরকারি হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়েছে, এটা জাতির জন্য লজ্জার। তবে যাদের অবহেলার কারণে আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে, তাদের বিচার চাই। এই পুরো ঘটনায় উল্লেখ করে শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে, তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
বীর প্রতীকের মৃত্যুর ঘটনায় তার সন্তানদের তরফ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন স্বীকার করেন শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর। সেনাবাহিনীর ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা জানান, ঘটনার পরপরই শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. মাহাবুবুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষে হাসপাতালের পরিচালক বরাবর প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে নিশ্চিত করে বলা যাবে সেই দিন আসলে কি হয়েছে।’