পিরোজপুরে বিশেষ বরাদ্দের ৪০ লাখ টাকা লোপাট ও ফাইল গায়েব
নিজেস্ব প্রতিবেদক|২১:৫৭, ডিসেম্বর ২২ ২০২৫ মিনিট
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বিশেষ বরাদ্দের ৪০ লাখ টাকার ফাইল গায়েব করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা পরিষদের সিএ (চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী) মো. ইয়াসির আরাফাতের বিরুদ্ধে। নামমাত্র কাজ দেখিয়ে প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ আত্মসাৎ করার ঘটনায় স্থানীয় পর্যায়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে এই অর্থ লোপাট করা হয়েছে: ১. উপজেলা ডরমেটরি ভবন সংস্কারের নামে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শফিকের প্রতিষ্ঠান ‘শফিক এন্টারপ্রাইজ’-এর মাধ্যমে নামমাত্র কাজ করা হয়েছে। ২. উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনের সামনের রাস্তা সংস্কারে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে কাজ পান সদর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. মোজাম খানের প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজ’। ৩. ইউএনও অফিস সংস্কারের নামে আরও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় পার্শ্ববর্তী কাউখালী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল মাহমুদ সুমনের প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স আল মাহমুদ এন্টারপ্রাইজ’-এর নামে।
অভিযোগ উঠেছে, ইয়াসির আরাফাত তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও পরিচিতদের লাইসেন্স ব্যবহার করে আরএফকিউ প্রক্রিয়ায় লোক দেখানো দরপত্রের মাধ্যমে কাজগুলো বাগিয়ে নেন। এরপর নামমাত্র কাজ করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন।
এ বিষয়ে তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এই কাজ বা বরাদ্দ সম্পর্কে কিছুই জানি না।’
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস ও তৎকালীন ইউএনও ফজলে রাব্বির যোগসাজশে সরাসরি ইউএনওর অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীকালে সেখান থেকে চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তবে ঠিকাদারদের দাবি, সিএ আরাফাতের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় তারা কেবল লাইসেন্স ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন। কাজের বিল উত্তোলনের বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না।
সম্প্রতি উপজেলা পরিষদে অডিট টিম তদন্তে আসলে সংশ্লিষ্ট কাজের কোনো ফাইল দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অডিটর নূরে আলম জানান, তদন্তে ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে নাজিরপুর সদরের পাকমঞ্জীল মাদরাসা এবং বৈরাগী এলাকার প্রজেক্টে কাজ না করেই বিল তুলে নেওয়ার সত্যতা মিলেছে। তিনি ইতিমধ্যে এই অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন।
তৎকালীন ইউএনও মো. ফজলে রাব্বি (বর্তমানে ফরিদপুরে কর্মরত) মুঠোফোনে বলেন, ‘অফিস থেকে ফাইল গায়েব হওয়ার কথা নয়। আমি ইঞ্জিনিয়ারের স্বাক্ষর ছাড়া কোনো ফাইলে সই করিনি। কাজ শেষ হওয়ার আগে বিল উত্তোলনের বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে জানাব।’
মূল অভিযুক্ত সিএ মো. ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ দাবি করে বলেন, ‘এসব বিষয়ে এখন কোনো কথা বলব না, অফিসে আসেন।’
বর্তমান ইউএনও শাজিয়া শাহনাজ তমা জানান, তিনি নতুন যোগদান করায় আগের কাজের বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানেন না।