ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৬ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গতকাল রোববার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক (সাক্কু)। আজ সোমবার জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেছেন, ‘আমি আবেগে পইড়া নমিনেশন কিনছি, এইডা আমার ঠিক হইছে না। আমি এই নমিনেশন জমা দিমু না।’
আজ সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নগরের নানুয়ার দিঘির পাড়ে অবস্থিত নিজ বাসভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ কথা বলেন মনিরুল হক। এর আগে গতকাল দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মু. রেজা হাসানের কাছ থেকে মনিরুল হকের পক্ষে স্বতন্ত্র পদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা। এ সময় তাঁর কয়েকজন অনুসারী সঙ্গে ছিলেন।
কুমিল্লা আদর্শ সদর ও সদর দক্ষিণ উপজেলা, সিটি করপোরেশন এবং সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৬ আসনটি ‘সদর আসন’ হিসেবে পরিচিত।
গত ৩ নভেম্বর কুমিল্লা-৬ আসনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীকে বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। এর পর থেকে মনিরুল হক চৌধুরীর প্রচারে সরাসরি অংশ নিচ্ছেন সাক্কু ও তাঁর সমর্থকেরা। এর মধ্যে রোববার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, কুমিল্লা-৬ আসনে মনিরুল হক চৌধুরীর নাম ঘোষণার পর থেকেই চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা আমিন-উর-রশিদকে (ইয়াছিন) দলীয় প্রার্থী ঘোষণার দাবিতে তাঁর অনুসারীরা নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। মনিরুল হক চৌধুরী ২০১৮ সালে কুমিল্লা-১০ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী এলাকার সীমানার পুনর্নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকায় কুমিল্লা-১০ আসনের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলাকে বর্তমান কুমিল্লা-৬ আসনে যুক্ত করা হয়। আমিন-উর-রশিদ ২০১৮ সালে বিএনপির অংশ নেওয়া নির্বাচনে কুমিল্লা-৬ আসনে দলীয় প্রার্থী ছিলেন। প্রায় দুই দশক ধরে এই আসনে বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে আমিন-উর-রশিদের সঙ্গে সাবেক সিটি মেয়র মনিরুল হকের রাজনৈতিক কোন্দল চলে আসছে। মূলত আমিন-উর-রশিদকে আটকানোর জন্য সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন মনিরুল হক (সাক্কু)।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল হক (সাক্কু) বলেন, ‘বিভিন্নভাবে শুনতাছি, ইয়াছিন (আমিন-উর-রশিদ) ভাইয়ের সমর্থকেরা বলতাছে, তারা আজ নমিনেশন আনতাছে, কাল নমিনেশন আনতাছে, এসব দেখে আমি আর সহ্য করতে পারি না। আমি আবেগে পইড়া নমিনেশন কিনেছি। তবে গতকাল রাতে চিন্তা করছি এবং দল থেকেও আমারে বলছে, নমিনেশন কেনাটা আমার ভুল হয়েছে। আমি এই নমিনেশন জমা দিমু না এবং ইলেকশনও করমু না। মনিরুল হক চৌধুরীকে বিজয়ী করার জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করে যামু। তবে দল যদি ইয়াছিন সাহেবকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি স্বতন্ত্র ইলেকশন করমু।’
মনিরুল হক সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেছেন, ‘ইয়াছিন সাহেব সব সময় আমার কার্যক্রমে বাধা দিয়েছেন। ২০২২ সালের সিটি নির্বাচনে উনার শ্যালক আমার বিরুদ্ধে প্রার্থী হইছে। উনার শ্যালক প্রার্থী না হলে আমি বিপুল ভোটে মেয়র হতাম। পরের উপনির্বাচনে আবারও প্রার্থী হইছে। তিনি সব সময় আমার বিপরীতে ছিলেন। তাই হাজি ইয়াছিন সাহেবকে নমিনেশন দিলে আমি স্বতন্ত্র থেকে হলেও নির্বাচন করমু।’ তিনি বলেন, ‘প্রার্থী ঘোষণার আগে দলের মহাসচিব আমাকে ডেকে নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন, নির্বাচন করার ঘোষণা কেন দিয়েছি। পরে আমি বিএনপির মহাসচিব সাহেবকে বলেছি, আমাকে যদি নমিনেশন দেন, তবে দিতে পারেন। আর যদি না দেন, তাহলে আমার দৃষ্টিতে মনিরুল হক চৌধুরী সাহেবকে দিলে ভালো হবে। দলের মহাসচিব আমার কথা রেখেছেন। মনির ভাই মনোনয়ন পেলেন, আমি প্রথম দিন থেকেই ওনার সঙ্গে কাজ করছি। প্রতিটি মিটিংয়ে কর্মীর মতো কাজ করছি মনিরুল হক চৌধুরীর জন্য।’
নিজের বহিষ্কারাদেশ আদেশ প্রত্যাহার ইস্যু নিয়ে সাক্কু বলেন, ‘আমি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেব এবং চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের কাছে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। আর কোনো আবেদন করব না। আমি দলের জন্য কাজ করছি। দল ভালো মনে করলে আমাকে ফিরেয়ে নেবে।’
প্রসঙ্গত, দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে ২০২২ সালের ১৫ জুনের কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় মনিরুল হক সাক্কুকে ওই বছরের ১৯ মে বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। সাক্কু কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তবে দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও সাক্কুকে বিভিন্ন সময়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে দেখা গেছে। মনিরুল হক সাক্কু কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং দুইবার সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন।