দীর্ঘ ১৭ বছর পর নেতা তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে বরিশাল বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। আগামী ২৫ ডিসেম্বর নেতার আগমন উপলক্ষে শীর্ষস্থানীয় নেতারা কদিন ধরে দফায় দফায় বৈঠক করেন। এবং নির্ধারিত দিনের আগেই বরিশাল থেকে অন্তত ৫০টি বিশালাকায় লঞ্চ এবং বিপুলসংখ্যক বাসযোগে কর্মী-সমর্থকদের রাজধানী ঢাকায় সমাবেত করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন এবং তাকে বরণে ঢাকাযাত্রার আগে বরিশালের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন তাকে এক নজর দেখতে।
রোববার বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, তাদের নেতা তারেক রহমান ১৭ বছরের প্রবাস জীবন কাটিয়ে অবশেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন। এদিন তাকে বরণ করতে বরিশালসহ আশপাশ জেলাসমূহ ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী এবং বরগুনা থেকে লঞ্চ ও বাসযোগে কর্মী-সমর্থকেরা রাজধানী ঢাকায় থাকার প্রস্তুতি নিয়েছেন। প্রতিটি জেলা থেকে অন্তত এদিন ২ লক্ষাধিক লোকের ঢাকায় আগমন ঘটবে। কর্মী-সমর্থকেরা নেতাকে এক নজর দেখতে এবং দিনটিকে ঐতিহাসিক করে তুলতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জানা গেছে, আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের এই আয়োজনে ত্রয়োদশ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রাপ্ত বিএনপি নেতারা অগ্রণী ভূমিকা রাখতে চান বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সমবেত করে। বরিশালের ৬টি আসনের ধানের শীষের প্রার্থীরা স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে সমন্বয় করে লঞ্চ এবং বাসযোগে ২৫ ডিসেম্বর সকাল ১০টার আগে রাজধানীতে প্রবেশের সিদ্ধান্তগ্রহণ করেন।
বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার জানান, তারেক রহমানকে বরণ করতে ২৫ ডিসেম্বর বরিশাল মহানগরসহ ১০ উপজেলা থেকে অন্তত ২ লক্ষ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকায় থাকবেন। কর্মী-সমর্থকদের যাওয়া আসার সুবিধার্থে ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বরিশাল নদীবন্দর থেকে ১৫টি বিশালাকায় লঞ্চ থাকছে, সেখানে রাতে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া একদিন বাদে ২৫ ডিসেম্বর খুব সকালে নথুল্লাবাদসহ শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ২০০টির বেশি বাস কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে রওনা হবে।
অনুরুপ তথ্য দিয়েছেন বরিশাল জেলা বিএনপি (দক্ষিণ) সদস্যসচিব আবুল কালাম শাহীন জানান, ২৫ ডিসেম্বর নেতা তারেক রহমানকে বরণ করতে বরিশালের ৬ টি জেলা থেকে ১০ লাখের বেশি মানুষ রাজধানীতে যাবেন। তাদের জন্য জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সবশেষ রোববার বিকেলে বরিশাল ক্লাবে বিভাগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয় এবং সেখানে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাস ও লঞ্চে সমান্তরাল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
রোববারের বৈঠকে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনও অংশ নিয়েছেন। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে জানান, তাদের নেতা তারেক রহমানকে বরণ করতে বা এক নজর দেখতে কর্মী-সমর্থকেরা উদগ্রীব হয়ে আছেন। এই বিষয়টি নিয়ে রোববার বরিশাল ক্লাবে শীর্ষনেতারা আলোচনা করে পরিবহন সুবিধার্থে লঞ্চ এবং বাসের সংখ্যা বাড়িয়েছেন।
বিএনপি নেত্রী জানান, শুধু জেলা শহর নয়, উপজেলা থেকেও কর্মী-সমর্থক নেতার সংবর্ধনা আয়োজনে অংশ নিতে ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বরিশালের ৬টি জেলার প্রতিটি উপজেলা থেকে বাস এবং লঞ্চযোগে কর্মী-সমর্থকদের যাওয়া আসার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে কর্মী-সমর্থকদের খাবার ব্যবস্থাও করা হয়।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বরিশাল বিএনপির এই আয়োজনকে ঘিরে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেকার চাঙাভাব লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মুখিয়ে আছেন নেতাকে দেখার অপেক্ষায়। বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির এমন খবরই জানিয়েছেন।
বিদগ্ধ ছাত্র নেতৃত্ব জানান, বরিশাল ৫ সদর আসনে ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ারের নেতৃত্বে ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে লঞ্চযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন। এবং পরদিন ২৫ ডিসেম্বর খুব সকালেও কর্মীদের বাসযোগে যাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চল বিএনপির অভিভাবক মজিবর রহমান সরোয়ার জানান, রোববার বরিশাল ক্লাবের বৈঠকে তিনিও অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বরিশালের বাইরে থাকায় সেখানে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সকলের সাথে আলোচনা হয়েছে, নেতার সংবর্ধনা আয়োজনে বরিশালের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা থেকে বাস এবং লঞ্চযোগে কর্মী-সমর্থকদের রাজধানীতে প্রবেশের বিষয়ে। সংখ্যাগত দিক থেকে বললে ২৫ ডিসেম্বর বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চল থেকে অন্তত ১০ লক্ষাধিক মানুষ ঢাকায় অবস্থান করে নেতা তারেক রহমানকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করবেন।’