নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালের ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনো জনমনে ব্যাপক দুশ্চিন্তা, দূর্ভাবনার কারণ হয়ে আছে। ইতোমধ্যে সরকারি হাসপাতালেই ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যাটা ২২ হাজারের কাছে পৌঁছেছে। শুধু নভেম্বর মাসেই বরিশালের সরকারি হাসপাতালে সাড়ে ৩ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তির পাশাপাশি, ৮ জনের মৃত্যুর পরে চলতি মাসের প্রথম দশদিনে আরো প্রায় সাড়ে ৫শ রোগীকে ভর্তি করতে হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে আরো ১ জনের। এনিয়ে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত প্রায় ২২ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৫০ জনের। বিগত বছরগুলোতে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আশানুরূপ পর্যায়ে হ্রাস পেলেও এবার নভেম্বরেও পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরের পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় ১৮০ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এসময়ে প্রায় ৭০ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হলেও নতুনকরে আরো অর্ধশতাধিক ডেঙ্গু রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। ফলে দুপুর পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন ছিলেন প্রায় পৌনে ২শ ডেঙ্গুরোগী। যার মধ্যে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ৪৫ জন ও জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার অন্য হাসপাতালগুলোতে আরো ২৫ ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে জানা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বারবারই ডেঙ্গু সম্পর্কে জন সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশন সহ সব পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে তাগিদ দেয়া হলেও শীতের দাপটের মধ্যেও মশাবাহিত এ রোগের প্রকোপ কমছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. শ্যামল চন্দ্র মন্ডল জানান, গত কয়েক বছর ধরেই সেপ্টেম্বর পেরিয়ে অক্টোবরের মধ্যভাগ পর্যন্ত ডেঙ্গুর ঝুঁকিপূর্ণ সময় হিসেবে বিবেচনা করা হত। এসময়ে থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের ফলে বিভিন্নস্থানে পানি জমে এডিস মশার লার্ভা সহজেই ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটাত বলে মনে করা হলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। পুরো নভেম্বর মাস যুড়েই বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল যুড়েই ডেঙ্গুর বিস্তৃতি অব্যাহত ছিল। স্বাস্থ্য পরিচালকের মতে, ডেঙ্গু থেকে রেহাই পেতে এডিস মশার বংশ বিস্তার প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই। আর সে লক্ষ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশন সহ এ অঞ্চলের সবগুলো পৌরসভারও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে বলে জানান পরিচালক।
স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ‘মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু’র পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে জরুরি ভিত্তিতে ‘মশক নিধনে নিবিড় কর্মসূচি গ্রহণের বিকল্প নেই’ বলে বার বারই স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের পরিচালক জানান, সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি অব্যাহত রয়েছে। তিনি জ্বর সহ যেকোন উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবারও অনুরোধ জানান। তারমতে, ‘এডিস মশা নির্মূল ছাড়া ডেঙ্গু থেকে পরিত্রাণের কোনো বিকল্প পথ চিকিৎসা বিজ্ঞানে আপতত নেই। বরিশাল সিটি করপোরেশন সহ বিভিন্ন পৌরসভা ও স্থানীয় সরকার প্রশাসনকে এ বিষয়টি বার বারই স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে’ বলেও জানান তিনি । ‘এ লক্ষ্যে সবাইকে আন্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণের’ও অনুরোধ জানান হচ্ছে স্বাস্থ্য প্রশাসন থেকে।