পিরোজপুরে ডিবি পুলিশের পকেটে ৪৪ হাজার পিস ইয়াবা ও স্বর্ণালঙ্কার!
এ.এ.এম হৃদয়|১৯:২৮, ডিসেম্বর ০৬ ২০২৫ মিনিট
নিজস্ব প্রতিবেদক : পিরোজপুরে ৬০ হাজার পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি মিজানুর জামানকে আটক করে উদ্ধারকৃত ইয়াবা পরিমানে কম দেখিয়ে ও মাদক বিক্রির ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং মিজানুরের স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের বিরুদ্ধে। এমনকি মিজানুরের স্ত্রী ও সোহেল নামের এক মাদক কারবারিকে ৪ লাখ টাকার বিনিময় ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে- গত ১৫ নভেম্বর (শনিবার) রাত সাড়ে ৮টার দিকে পিরোজপুর শহরের কালীবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭৩ পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী সোহেলকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই শহীদুল ইসলাম। পরে তাকে ডিবি অফিসে নিয়ে রেখে সারারাত জিজ্ঞাসাবাদ করেন এসআই শহীদুল ও ওসি আরিফুল ইসলাম। পরের দিন ১৬ নভেম্বর (শনিবার) সোহেলের তথ্য মতে- দুপুরে শহরের কাপুড়িয়াপট্টিতে অভিযান চালিয়ে ২০০ পিস ইয়াবাসহ মিজানুর জামানের স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের পর আলহামদুলিল্লাহ মার্কেটের চতুর্থ তলায় মিজানুর জামানের শয়নকক্ষে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় ওই কক্ষের ওয়ারড্রোবের ভেতরে তল্লাশী চালিয়ে ১ লক্ষ ৪ হাজার পিস ইয়াবা ও ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং মিজানুরের স্ত্রীর ব্যবহৃত একজোড়া হাতের বালা, একটি গলার চেইন, একজোড়া কানের দুল উদ্ধার করে অফিসে আসেন। পরবর্তীতে স্বর্ণের বিষয়টি জানাজানি হলে শুধু হাতের বালা দুটি ফেরত দেয়া হয়। আর মিজানুরের স্ত্রীকে ৩ লাখ ও সোহেলকে ১ লাখ টাকার বিনিময় ছেড়ে দেয়া হয়। আর মিজানুর জামানকে ৬০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
উদ্ধারকৃত বাকি ৪৪ হাজার ২৭৩ পিস ইয়াবা ও মাদক বিক্রির ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং মিজানুরের স্ত্রীর গলার চেইন, কানের দুল আত্মসাত করা হয়। আর মিজানুরের স্ত্রী ও সোহেলকে ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে নেওয়া হয় ৪ লাখ টাকাও।
আবার সেই ৪৪ হাজার ২৭৩ পিস ইয়াবা থেকে মাদক কারবারি সোহেল ও এম সিকদারকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা বিক্রি করতে দেয়া হয় বলে জানিয়েছে একটি বিশ্বস্তসূত্র।
এদিকে আত্মসাত করা ভাগাভাগি নিয়ে ডিবির অভিযানিক টিমের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরী হয়। টিমের কয়েকজন সদস্যকে ১৫ হাজার টাকা করে দিলে তারা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের দাবি- প্রায় কোটি টাকা বাণিজ্য হয়েছে। তারা কেন মাত্র ১৫ হাজার টাকা নেবে। এ নিয়ে ক্ষুব্দ হওয়ায় এএসআই তৌহিদুল ও কনস্টেবল মাহাতাবকে বদলি করা হয়।
তবে এ বিষয়ে এএসআই তৌহিদুল ও কনস্টেবল মাহাতাব কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এ বিষয়ে এসআই শহীদুল ইসলামের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি পুরো বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন- ভাই (প্রতিবেদক) আপনি পিরোজপুরে আসেন চায়ের দাওয়াত রইলো। তখন প্রতিবেদক চা খাওয়ার জন্য নয়, অপনার বক্তব্য নেওয়ার জন্য কল করেছি জানালে তিনি প্রথমে বলেন- সোহেলকে আটক করা হয়নি। পরক্ষনেই ভোলপাল্টে বলেন- সোহেলকে এমনি তথ্য জানার জন্য ডিবি অফিসে আনা হয়েছিল, তার কাছে কোন ইয়াবাও পাওয়া যায়নি। বাকি কোন তথ্য জানার থাকলে আমাদের ইনচার্জ আরিফুল স্যারকে কল করুন তিনি ভালো বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে ওসি আরিফুল ইসলামকে কল করলে তিনি বলেন- বিষয়টি সাবেক সুপার স্যার জানেন। আমি ওখানে গিয়েছি পরে আমি কিভাবে পুরো বিষয়টা বলবো। আমি যাওযার পর যে পরিমান ইয়াবা পেয়েছি সেটা সহই মামলা দিয়েছি।
টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে দুইজনকে বদলির বিষয়ে তিনি বলেন- টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে নয়, তাদের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বদলি হয়েছে। শুধু তাদের দুইজনকে বদলি করা হয়নি আরও ৮ জনকে বদলি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পিরোজপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন- বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।